• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৫)

আমার কথা 

১৭
ছোটবেলায় বাড়িতে রেডিও বাজত। কেন না, রেডিও ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে। সকাল হলে “বন্দে মাতরম” সুর বাজত। ওই গানের প্রতিটি শব্দ চিনতাম সেই সত্তর দশকের প্রথম দিকেই। ও যে আমাদের ন্যাশনাল সঙ।
ওই গানে “রিপুদলবারিণী” নামে একটি শব্দ ছিল। রিপুদল মানে শত্রুবর্গ। সেই শত্রুকে যে প্রতিরোধ করে, সে হল রিপুদলবারিণী । আর ক্রমে চোখে পড়ত বন্দে মাতরম ধ্বনি দিতে দিতে একদল লোক চলেছে। কাঁধে লাঠিওলা পতাকা। পতাকা যেমন তেমন, লাঠিটাই দেখনসই। উল্টো দিকের মিছিল থেকে আওয়াজ উঠত ইনকিলাব জিন্দাবাদ। ওর মানে জানতাম “বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।” তাঁদেরও কাঁধে পতাকা থাকত। পতাকা যেমন তেমন, লাঠিটাই আসল। লাঠিই কথা বলত।
দুদলে ভোটের শত্রুতা ছিল। আসলে ভেদ ছিল না। রঙ সরিয়ে দিলে পড়ে থাকত ওঁদের লাঠি। লাঠিবাজিতে দু দলে রুচিতে মেজাজে তফাত ছিল নগণ্য।
রিপুদল যে আমার মনের ভিতরেই, আর বিপ্লব করে নিজেকে যে সতত প্রশ্নশীল করে রাখতে হয়, নিজেকে নিজে চিরে চিরে প্রতি মূহুর্তে পরীক্ষা করতে হয়, ছোটো থেকেই জানতাম।
লাঠিরা ওসব জানত না। তারা খালি স্লোগান দিত।
১৮
“চল নামি, আষাঢ় আসিয়াছে চল নামি..”..
বৃষ্টি ধারা, মল্লিকা ফুলের মধু, বেনে বৌ এর আচার শুকোতে দেওয়া…
কি চমৎকার ভাবে বঙ্কিম ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাকে হাইলাইট করেছেন।
“দেখ, যে একা, সেই দুর্বল”। বললেন বঙ্কিম।
১৯
প্রফুল্লকে মনে পড়ে। ব্রজেশ্বরের বাবা, তার শ্বশুর, কিভাবে তাকে শ্বশুরঘর থেকে তাড়ালেন। গ্রামের লোকের কাছেও প্রফুল্লের ঠাঁই হল না। একা একটা মেয়ে কোথায় যাবে, কি খাবে, কি পরবে, …
বঙ্কিম দেখালেন ভবানী ঠাকুরকে। প্রফুল্লকে পড়াশুনা শিখিয়ে, তর্ক বিদ্যা, অসি চালনা, অশ্ব চালনা, প্রফুল্লকে করে তুললেন দেবী চৌধুরাণী।
ডোল পলিটিক্সের খেল নয় দেবী চৌধুরাণীর জন্ম দেওয়া। ভবানী পাঠক হয়ে বঙ্কিম বাংলার মেয়ের সামনে একটা জীবনাদর্শ খাড়া করে দিলেন।
২০
ডাকাতে তুলে নিয়ে গেল এক মেয়েকে।
হ্যাঁ, দয়ালু। শুধু গয়না শাড়ি টুকুই নিয়েছে ডাকাতেরা। ধর্ষণ করে নি।
সে মেয়েকে ডাকাতেরা কি করেছে, না করেছে, আমরা কি জানি। আমরা ও মেয়েকে ঘরে নেব না।
একটি বুদ্ধিদীপ্তিমতী মেয়ের কি করে পুনর্বাসন হয় বাঙালি সমাজে, বড়ো যত্ন করে দেখান ইন্দিরা উপন্যাসে। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৩৮ এর ২৬ জুন তারিখে জন্মেছিলেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।