• Uncategorized
  • 0

|| এপ্রিল আর আইনস্টাইন || লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

ই ইকোয়াল টু এম সি স্কোয়ার। মাস বা ভরকে শক্তিতে রূপান্তরের সূত্র। কোনো পদার্থের খানিকটাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে কতটা শক্তি তৈরি হবে? এম বা মাসকে সি বা আলোর গতিবেগের বর্গফল দিয়ে গুণন করুন। আলোর গতিবেগ শূন‍্য মাধ‍্যমে সেকেন্ডে প্রায় তিনলক্ষ কিলোমিটার। তার বর্গফল দিয়ে গুণন। খুব বড়ো একটা সংখ‍্যা। অর্থাৎ সামান্য পরিমাণ ভরকেও শক্তিতে রূপান্তরিত করলে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হবে। অথবা এও বলা যায়, সামান্য একটু ভর বিপুল পরিমাণ শক্তির ঘনীভূত রূপ। তো আইনস্টাইন এই সূত্রটি আমাদের উপহার দিলেন। এরজন্য তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেবার মানে হয় না। দেওয়া হয়ও নি। ১৯০৫ সালটা ছিল আইনস্টাইনের জন‍্য একটা আশ্চর্য বছর। মিরাকল ইয়ার। চার চারটে গবেষণা পত্র লিখলেন।  প্রথমটা ফোটো ইলেকট্রিক এফেক্ট নিয়ে। দ্বিতীয়টির বিষয় ব্রাউনিয়ান মোশন। তৃতীয়টি বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ। আর চতুর্থটিতে ভর ও শক্তির সম্পর্ক বিন‍্যাস লিখলেন। সবগুলিই প্রকাশ করা হয়েছিল অ্যানালেন ডার ফিজিক নামে বিজ্ঞান জার্নালে। ১৯০৫ সালেই।  চতুর্থটি প্রকাশ হয়েছিল নভেম্বরের একুশ তারিখে।
১৯৩৯ সালের এপ্রিল মাসের তিন তারিখ। পোল‍্যাণ্ডের উপর আগ্রাসন চালাবেন বলে জার্মান মিলিটারিকে আদেশ দিয়েছেন হিটলার। আইনস্টাইন উদ্বিগ্ন। সারা পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষ উদ্বিগ্ন। উদ্বিগ্ন গান্ধিজিও। ১৯৩৮ সালেই বিজ্ঞানীদ্বয় অটো হান আর  ফ্রিৎস স্ট্রাসমান পরমাণু ভাঙার কৌশল আবিষ্কার করেছেন। তার তাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে দিয়েছেন অন‍্য দুই বিজ্ঞানী লিসে মিটনার আর অটো ফ্রিশচ। পরমাণু নিয়ে গবেষণা খুব ঘোরালো রূপ নিয়ে ফেলেছে। তেইশে জুলাই ১৯৩৯ তারিখে গান্ধিজি হিটলারকে চিঠি লিখলেন, ভাইটি আমার, যুদ্ধ পাকিয়ে তুলো না। ইংরেজি ভাষায় হিটলারকে সম্বোধন করলেন, My friend. বড় মানুষ তিনি। চেষ্টা করলেন। আইনস্টাইন রাতে ঘুমাতে পারছেন না। যদি তাঁর তত্ত্ব নিয়ে বোমা বানিয়ে ফাটান হিটলার?  লিও জিলার্ড আর ইউজিন উইগনার নামে বিজ্ঞানীদ্বয়ের চেষ্টায় একটা চিঠি মুসাবিদা করা হল। তাতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের কাছে অনুরোধ করা হল, ইউরেনিয়াম দিয়ে অ্যাটম বোমা বানানো হোক। হিটলারকে চাপে রাখা দরকার। চিঠিতে স‌ই করাতে হবে মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে দিয়ে। সভ‍্য সমাজে ওঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। আইনস্টাইনের অনুরোধ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফেলতে পারবেন না। আগস্টের দুই তারিখে চিঠিতে স‌ই দিলেন আইনস্টাইন। সেপ্টেম্বর মাসের পহেলা তারিখে যুদ্ধ বেধে গেল‌ই। অক্টোবরের এগারো তারিখে আইনস্টাইনের স্বাক্ষরিত চিঠি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের হাতে পৌঁছাল। তারপর ম‍্যানহাটান প্রজেক্ট। রবার্ট জে ওপেনহাইমার তার দায়িত্বে। পরমাণু বোমা তৈরি হল। পরীক্ষাও হল। বোমার নাম ট্রিনিটি। নিউ মেক্সিকোর মরুপ্রান্তরে পরমাণু বিস্ফোরণ কর্মসূচির নেতৃত্বে ওপেনহাইমার। তারিখটা ১৬ জুলাই, ১৯৪৫। তার কয়েকটি দিন পর আগস্টের ছয় ও নয় তারিখে  জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা হামলা।
আইনস্টাইন আর দশটি বছর বেঁচেছিলেন। তিনি ছিলেন যথার্থ শান্তিবাদী মানুষ। অনুতাপ তাঁকে কুরে কুরে খেত। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল তারিখে আইনস্টাইন সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণার অতীত হয়ে গেলেন।
আইনস্টাইন সারাজীবন দুঃখ করেছেন, আমি যদি ঘুণাক্ষরে  টের পেতাম যে হিটলার পরমাণু বোমা বানাতে পারবে না, তাহলে কিছুতেই রুজভেল্টকে বোমা বানাতে বলতাম না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।