সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ৬)
আমার কথা
২১
আমি প্রথম নুন শো দেখি বাড়ির কাছে জয়শ্রী সিনেমা হলে। তখন মাধ্যমিক পাশ করি নি।
স্কুলের ঠিক উল্টো দিকে সিনেমা হল।
ফিল্মের নাম ছিল অযান্ত্রিক
পরিচালক ঋত্বিক ঘটক।
আর গল্পকার সুবোধ ঘোষ।
প্রথম দেখা সেই নুন শো আয়োজন করেছিল বরানগর বাজারের একটি পাঠ্য পুস্তক লাইব্রেরী।
২২
ওই যে জর্জ অরওয়েল এনিম্যাল ফার্ম বইতে লিখলেন অল আর ইকুয়াল, সাম আর মোর ইকুয়াল, কথাটা প্রবাদ হয়ে গেল। গণতন্ত্রের কথা বলতে বলতেই কি করে অগণতান্ত্রিক অভ্যাসের পূজা নিশ্চিত করা হতে থাকে, প্রগতিশীল কথা বলতে বলতে কোণে কোণে যে সব প্রতিক্রিয়ার বিগ্রহ গুলিকে পূজা করা হয়, সে তো হর বখত দেখছি। আমাদের দেশের মানুষও বোধ হয় রাজতন্ত্রের মোহ ভেতর থেকে কাটিয়ে উঠতে পারে না। তাই গণতান্ত্রিক প্রথার মাধ্যমে নির্বাচিত লোকেও তার ক্ষমতার উত্তরাধিকারী নির্দিষ্ট করে দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
পরিবর্তন কথাটা নামে থাকে। সব কিছু অনড় থেকে যায়।
২৩
শান্তিনিকেতনে কবির স্বপ্নের পাঠশালা গড়তে তাঁর শ্রীমতী যে কত দৈহিক পরিশ্রম করেছেন, কিভাবে একের পর এক নিজের অলঙ্কার পাঠশালা ভবন তৈরির কাজে নিবেদন করেছেন, সুখী ও তৃপ্ত জীবনের টান ছেড়ে কবিকে তার বহুমূল্য সময় শান্তি নিকেতনের যোগাযোগ গুলি তৈরিতে দেওয়া সমর্থন করে গিয়েছেন, এ কথাগুলি ভাবলে ভবতারিণীর স্মরণে মাথা নুয়ে আসে। কবির নানা এক্সপেরিমেন্টের তিনি সাথী।
হ্যাঁ , কবিমানসীর পিতৃদত্ত নামটি ছিল ভবতারিণী । আনা তড়খড় কে কবি নাম দিয়েছিলেন নলিনী। সেই সুরে ভবতারিণীকে করে নেন মৃণালিনী । সেকালে বিয়ের পর অনেক মেয়ের নাম বদলে যেত।
২৪
এক বালকের কথা মনে পড়ে। সে প্রাচীন ভারতের কথা। বালকটি মুনিপুত্র। মুনির একটু বয়স হয়েছে। ছেলেকে কাছে নিয়ে পাঠ দিচ্ছেন। এমন সময় এক যুবা এসে বালকটির মায়ের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে যাচ্ছে দেখে বালকটি ককিয়ে উঠে বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো, বাবা কিছু করো। ওই লোকটা যে মাকে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
ব্রহ্মবিদ মুনি নির্লিপ্ত কন্ঠে বললেন, বাবা, মেয়েরা গাভীর মতোই স্বাধীন। শাস্ত্রে আছে, মেয়েরা যখন যার সাথে ইচ্ছা গমন করতে পারে। তুমি বিচলিত হোয়ো না।
( এখানে গমন মানে শুধু হেঁটে চলে যাওয়া ভাববেন না। গমন মানে সুরতক্রিয়া, অর্থাৎ যৌন সঙ্গম)
মুনির ছেলে বড়ো হয় সব শাস্ত্র ওলট পালট করে দিলেন। মেয়েদের চলা ফেরা, কথা বলা, আচার আচরণের উপর প্রবল বিধি নিষেধ চাপানো হল।