গারো পাহাড়ের গদ্যকথায় মোহাম্মদ শামীম মিয়া

বিজয়া আনন্দে সুহিলপুর

বিজয় দিবস উপলক্ষে কিছুদিন আগে অফিস থেকে ছুটি পেলাম তিনদিন, ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুর চৌরাস্তা বাসা থেকে দুপুরবেলা বের হয়ে স্ব পরিবারে অনাবিল বাসে করে টংগী স্টেশনরোড় পৌঁছালাম। সেখান থেকে তিতাস পরিবহনের বাসে করে ছুটে চললাম নিজের জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অভিমুখে। বাস চলছে বিরামহীনভাবে, বাসে বসে যেতে যেতে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম। পথে পথে বিজয় দিবসের আগেরদিন হওয়ায় সবখানে লাল সবুজের বাতি জ্বালছিলো, কতদিন পর বাড়ি ফিরছি চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক! আমার ছোট দুটি বাচ্চা ছিলো ওরা বিরক্ত করছিলো তাই ওদের খেলনা ও খাবার কিনে দিয়ে শান্ত করালাম। বাস মীরের বাজার পেরিয়ে পূবাইল হয়ে ছুটে চলল, চলতে চলতে জানালা দিয়ে কালীগঞ্জের খ্রিস্টানদের গীর্জা দেখছিলাম অপূর্ব কারুকাজে মোড়ানো। বাস চললো ঘোড়াশাল হয়ে পাঁচদোনা, নরসিংদী হয়ে ভৈরব থামলো ঠিক সন্ধ্যায়। সেখান থেকে যাওয়ার পথে মেঘনা নদীর বুক দাঁড়িয়ে থাকা রেলপথের ও যানবাহন চলাচলের দুটি ব্রিজ লাইটের আলোয় চকচক করছিল। নিচের নদীর জলও ঝলমলে ভেসে যাচ্ছিলো দূরে,আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড
হয়ে সোজা রাত সাতটার দিকে প্রিয় জন্মভূমি সুহিলপুর মৌলভীবাড়ি এসে পৌঁছলাম।
রাত হয়ে যাওয়ায় বাড়ির আশেপাশেই ঘুরে বেড়ালাম ঐদিন। পরদিন ১৬ ই ডিসেম্বর সকালবেলা সুহিলপুর বাজারস্থ শহীদ মিনারে বীরশহীদদের সম্মানে ফুলের তোড়া অর্পণ করলাম, পাশেই আমার প্রিয় পাঠশালা জিল্লুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরেফিরে দেখলাম। বিজয় দিবসে এলাকার প্রিয়মুখ, প্রিয়জন আব্দুর রশিদ ভূঞা ভাই ও আমার একসময়ের সহপাঠী ও বন্ধু শফিকুল ইসলামের সাথে ছুটে গেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে সেখান থেকে তিতাস নদীর পূর্ব দিকে সীতানগর-কাশিনগর ও গোপীনাথপুরে বেশ কয়েকটি সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজে অংশ গ্রহণ করলাম। চলতে চলতে ওখানকার সহজ সরল মানুষ, খাল- বিল, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন ভরে গেলো। নদী পেরিয়ে ঘাটুরা হয়ে বাড়ি ফিরলাম, বিকালবেলা পাশবর্তী উত্তর সুহিলপুর ছুটে গেলাম ওখানে স্থানীয় ছেলেদের উদ্যোগে ফুটবল খেলা হচ্ছিল, আমি পৌঁছলাম ঠিক পুরস্কার বিতরণীর ১০মিনিট আগে, সবাইতো কবি সাব, শামীম ভাইয়ের আগমন ইত্যাদি বলে শ্লোগান দিচ্ছিলো, আমি বললাম আমি ওইসবের যোগ্য নই,কে শুনে কার কথা ওদের কাজ ওরা করছিলো। আমি অতিথি হিসেবে কবিতা ও কথা বলে পুরস্কার বিতরণ করছিলাম, অনেক ভালো লাগছিলো নিজের ঘরে এত ভালোবাসা ও সম্মান পেয়ে! ১৭ ই ডিসেম্বর মাইজপাড়া সুহিলপুর লাল সবুজ কিন্ডারগার্টেন আয়োজিত আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থেকেছি, এইজন্য ছোট ভাই ও প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক আলমগীর হোসেন আলালকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ১৮ ই ডিসেম্বর ছিলো শেষদিন সবচেয়ে বড় চমক! আমাদের সুহিলপুরের সবার প্রিয় মানুষ প্রয়াত প্রিন্সিপাল ওবায়দুর রহমান ভাইয়ের স্মরণে শোকসভা ও স্মৃতিচারণ ও দোয়া মাহফিল রিয়াদ খাঁন টাওয়ারের কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠান হলো, ঐদিন আমাদের এলাকার সকল স্তরের মানুষ সমবেত হয়েছিলেন, আমার প্রিয় শিক্ষক ও গুণীজন মোঃ রফিকুল ইসলাম স্যারের নেমন্তন্নে আমিও সেদিন হাজির হয়েছিলাম, আমার আরেক শিক্ষক ও গুণী তৈয়বুর রহমান ভাইয়ের সুন্দর উপস্থাপনায় কিছু কথা ও ওবায়দুর রহমান ভাইয়ের পুরো জীবনী নিয়ে একটি কবিতা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম, সময় কম থাকায় অনেক কথা বলার ইচ্ছে থাকার পরও বলা হয়নি। আমার প্রিয় মহান, সমাজ সেবক ও স্বনামধন্য ব্যাংক কর্মকর্তা শরিফ চৌধুরী কাকা ওনার বক্তৃতায় আমার কবিতাটির ভূয়সী প্রশংসা শুনে মনটা ভরে গেলো, পরে শুনলাম সুহিলপুরের সবাই আমার কবিতাটির অনেক গুণগান করলেন। এইভাবেই বিজয়া আনন্দে প্রিয় সুহিলপুরে তিনদিন কাটলো।
১৮ ই ডিসেম্বর বিকালে কাজল পরিবহনের বাসে করে স্ব পরিবারে গাজীপুর ফিরে এলাম জীবিকার তাগিদে।
স্মৃতিগুলো এখনো চোখের কোণে তরতাজা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।