ক্যাফে টকে প্রাপ্তি সেনগুপ্ত

আমি, দুর্গা আর বিভূতিভূষণ…

সবটুকু ভালোর মধ্যে একটা নির্মল পবিত্রতা আছে। কেমন গলার কাছে দলা পাকানো কষ্টের মতো…
প্রথম পরিচয় আম আঁটির ভেঁপু বাজিয়ে, তারপর একে একে পথের পাঁচালি, চাঁদের পাহাড়… অপরাজিত, আরণ্যক, ইছামতীর তীরে, কিন্নর দল, দেবযান…
গ্রামবাংলা আর তার ঘেঁটু ফুলের বুনো গন্ধ, আমাদের আশেপাশে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা সাধারণ, অতিসাধারণ চরিত্রগুলো কীভাবে তাঁর কলমের জোরে মাল্টি ডায়মেশনাল হয়ে উঠত!!!
এখনো মনে আছে, আম আঁটির ভেঁপু’র শেষটুকু পড়ছি, আর হাপুস নয়নে কেঁদে চলেছি, কখন বাবা এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি… আমায় কাঁদতে দেখে বলেছিল, তুই তো দুর্গা, দুর্গা তো তোর ভিতরেই বড় হবে, ট্রেনে চড়বে… কিংবা একদিন প্লেনেও!!!
এইভাবেই দুর্গারা কেমন আমাদের ভিতরেই রয়ে যায়…
তারপর বহুভাবে বিভূতিভূষণ আর তাঁর সারল্যকে বইয়ের পাতায় ছুঁয়ে দেখেছি।
বিভূতিভূষণের উপন্যাসে প্রকৃতির গল্প কবিতা হয়ে ওঠে… একটু একটু করে।
তাই কিশলয় ঠাকুরের তাঁকে পথের কবি বলা সার্থক…
কবিতাই তো লিখতেন তিনি, কঠিন গদ্য এমন ছন্দময় আর কজনের কলমে হয়েছে বা হয় জানা নেই!!!!
বিভূতিভূষণের লেখায় যেমন হেরে যাওয়া আছে তেমনি জেতার অদম্য জেদ… এতো বেশি সত্যির সামনে দাঁড়ালে নিজেকে আড়াল করার ভনিতাটুকুও অবশিষ্ট থাকে না!!
এমনভাবে নিজের দীনতাকে উন্মুক্ত করতে কেউ পারেন নি… তাই বিভূতিভূষণ পড়তে গেলেই আজও গলার ভিতর দলা পাকানো কষ্টটা বারবার ফিরে আসে…. ভালো হতে চাওয়ার আবেশে, কারণ আমি জানি দুর্গা আমার ভিতর এখনো অপেক্ষায়, স্বপ্নগুলো তার, আজও জমে আছে…
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।