• Uncategorized
  • 0

আজকে শিকড়ের সন্ধানে তে || অরুণাচলেশ্বর মন্দির, তামিলনাড়ু || লিখেছেন প্রাপ্তি সেনগুপ্ত

অরুণাচলেশ্বর মন্দির, তামিলনাড়ু

অরুণাচলেশ্বর মন্দির (যাকে অন্নমালাইয়ার মন্দিরও বলা হয়), ভারতের তামিলনাড়ুর তিরুভান্নমালাই শহরে অরুণাচল পাহাড়ের গোড়ায় অবস্থিত দেবতা শিবকে উৎসর্গীকৃত একটি তামিল মন্দির।
পাঁচটি উপাদান, পঞ্চ ভূত স্টালাস এবং বিশেষত আগুনের উপাদান বা অগ্নির সাথে জড়িত একটি মন্দির হিসাবে এটি হিন্দু সম্প্রদায় ও শৈবদের কাছে পবিত্র ধাম।

দক্ষিণ ভারতের পাঁচটি শিব মন্দির পঞ্চ ভূত স্টালাম নামে পরিচিত।
ভগবান শিব বা মহাদেব প্রকৃতির পাঁচটি উপাদান বা পঞ্চ ভূতকে নিয়ন্ত্রণ করেন: পৃথিবী, জল, বাতাস, আগুন এবং আকাশ (এখানে আকাশ অর্থ space বা শূন্য)।
এই পাঁচটি মন্দিরে পাঁচটি উপাদানের প্রতিমূর্তি হিসেবে ভগবান শিবকে পূজা করা হয়।এই মন্দিরগুলি হলো- একম্ব্বরেশ্বর মন্দির (কাঞ্চিপুরম), জাম্বুকেশ্বরর মন্দির তিরুভানাইকাভাল, অরুণাচলেশ্বর মন্দির তামিলনাড়ুতে তিরুভান্নমালাই, নটরাজ মন্দির চিদাম্বরম,শ্রীকলাহাটি মন্দিরটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের শ্রীকালাহাটি শহরে অবস্থিত।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো ভৌগোলিকভাবে একটি লাইন টানলে এই পাঁচটা শিব মন্দির প্রায় বলতে গেলে ওই একই লাইনের উপর অবস্থিত। কিন্তু এই পাঁচটি শিব মন্দির আলাদা আলাদা শহরে অবস্থিত।
অরুণাচলেশ্বর মন্দিরের শিবলিঙ্গকে অগ্নি লিঙ্গম হিসাবে পূজা করা হয়। নবম শতাব্দীতে মন্দিরের বর্তমান রূপের ভিত্তি চোল শাসকরা নির্মাণ করেন।
এরপরে, বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সময় মন্দিরে বেশ কয়েকটি নতুন নির্মাণ হয়েছিল। এই সময়ই বিখ্যাত ‘প্রাসাদের হাজার স্তম্ভ’ও নির্মিত হয়েছিল।
কিংবদন্তিতে এই মন্দির নির্মাণের দুটি কাহিনী পাওয়া যায়। কথিত আছে, একবার পার্বতী খেলার ছলে দু হাত দিয়ে মহাদেবের চোখ বন্ধ করলে সমগ্র সৃষ্টি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। এই অন্ধকারময় জগৎ দেখে পার্বতী নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং এই আন্নামালাই পর্বতে এসে মহাদেবকে তুষ্ট করতে তপস্যা করেন। মহাদেব তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে এই স্থানে এক বিশাল জ্যোতির্লিঙ্গরূপে অবস্থান করেন।
একবার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিষ্ণু এবং ব্রহ্মার মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল। এই বিরোধ নিষ্পত্তি করতে তাঁরা মহাদেবের সাহায্য চেয়েছিলেন। তখন মহাদেব এক বিশাল আলোর স্তম্ভ স্বরূপ হয়ে দুজনকে তাঁর আদি ও অন্ত খোঁজার নির্দেশ দেন। বিষ্ণু বরাহাবতার রূপে তাঁর অন্ত খোঁজার চেষ্টা করে বিফল হন। ব্রহ্মা রাজহাঁসরূপে মহাদেবের আদি খোঁজার চেষ্টা করে বিফল হলে মিথ্যার আশ্রয় নেন। মহাদেব ব্রহ্মার মিথ্যা বুঝতে পেরে ক্রুদ্ধ হন এবং বলেন এই মিথ্যাচারের কারণে তিনি মর্ত্যে পূজিত হবেন না।

যৌগিক গাথায় বলা হয়, মহাদেব ২১শে জুন অর্থাৎ সূর্যের দক্ষিণায়ন যেদিন শুরু হয়, সেদিন মহাদেব দক্ষিণমুখী হন এবং এই কারণে তাঁকে দক্ষিণাপতি বলা হয়। এর আগে হিন্দুধর্মে দক্ষিণদিককে অশুভ মনে করা হতো। এই দক্ষিণায়নের দিনকেই বর্তমানে International Yoga Day হিসেবে পালন করা হয়।
এই দিনটির সাথে এই অরুণাচলেশ্বর মন্দিরের একটি যোগ আছে। বছরের শুধু এই দিনটিতেই সূর্যের আলো সরাসরি বিগ্রহের ওপরে পড়ে।
এই মন্দিরকে ঘিরে তিরুবন্তপুরমে কার্তিক পূর্ণিমার দিন কার্তিকেয়দীপম ও গিরিবলম (প্রদক্ষিণ) উৎসব পালন করা হয়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।