প্রবন্ধে রতন বসাক

এ কেমন ধরনের প্রতিবাদ ? 

আমরা মানুষরা একসময় অন্যান্য পশুপাখিদের মতোই বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতাম যে যার নিজের মতো । এরপর নিজেদের প্রয়োজনেই দলবদ্ধ ভাবে থেকে আমরা সমাজ গঠন করলাম । সমাজ থেকে দেশ, তারপর মানুষের অগ্রগতি হতে থাকলো । বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বিস্তার লাভ করলো । কিন্তু মানুষের মনের মধ্যের আবেগটা কমে স্বার্থটা ধীরে ধীরে বেড়ে গেলো ।
বর্তমান যুগে মানুষ সমাজে থাকলেও নিজের স্বার্থটাকেই বেশি করে দেখছে । প্রত্যেকেই আরো, আরো বেশি পাওয়ার জন্য মগ্ন হয়ে আছে । কে কতটা বেশি সুখ নিজের আয়ত্তে করে নিতে পারবে ? তার জন্য একটা অলেখা প্রতিযোগিতা চলছে সমাজে । আর এর জন্যেই আমাদের আজকের সমাজে দিনের পর দিন অন্যায় বেড়েই চলেছে । এখন মানুষ নিজে পেলেই খুশি আর অন্য কেউ পাচ্ছে কি পাচ্ছে না ? সেটা নিয়ে কেউ আর ভাবছে না ।
মানুষ ধীরে ধীরে সামগ্রিক ভাবে প্রতিবাদ করতে ভুলে যাচ্ছে নিজের স্বার্থের কথা ভেবে । নিজের যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো ক্ষতি হচ্ছে, ততক্ষণ আর কেউ অন্যের ক্ষতির জন্য প্রতিবাদ করছে না । তবে নিজের যে কোনো ব্যাপারে পান থেকে চুনটি খসলেই প্রতিবাদ করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কোন কিছু না ভেবেই । তাতে অন্যের কিংবা সমাজের কোনো ক্ষতি হলেও সে বেপরোয়া থাকছে ।
যেমন আমরা সমাজে দেখছি বাসের ভাড়া বৃদ্ধি হলেই, কিছু সংখ্যক মানুষ বেশ কয়েকটা বাস জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিবাদ করার নামে । কিন্তু এইভাবে প্রতিবাদ করে কি কোন লাভ হয় ? এতে তো আমাদেরই সবার নিজের ক্ষতি হলো, আগামীতে বাসের সংখ্যা কমে যাবে । আর আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে একটা বাসের জন্য কোথাও যেতে গেলে ।
এটাও দেখছি যে কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রে কোনো কারণে রোগী যদি মারা যায় । রোগীর আত্মীয় স্বজন দলবদ্ধভাবে এসে সেই চিকিৎসা কেন্দ্রের ভাঙচুর করছে ও এমনকি ডাক্তার বাবুকেও প্রচণ্ড মারধোর করছে । এটা কি কোন প্রতিবাদ করা হলো ? আগামীতে যখন আবার আমরা অসুস্থ হয়ে পড়বো, তখন না চিকিৎসা কেন্দ্র পাবো, না ডাক্তারবাবু সাহায্য পাবো ? এভাবে প্রতিবাদ করে আমরা তো নিজেরাই নিজের ক্ষতি করছি দিনের পর দিন ।
আবার এও দেখছি যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী সঙ্গে কোনো কিছু অঘটন ঘটে গেলেই । তখন সেই পরিবারের সাথে কিছু সমাজবিরোধী এসে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মারধোর করছে ও এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুড় করছে ও বন্ধ করে দিচ্ছে । একটা ঘটনার জন্য যে আমাদের প্রত্যেকের ছেলে-মেয়ের শিক্ষার ব্যাঘাত ঘটবে আগামীতে, সেটা আমরা কেউ তখন ভাবছি না । আমরা সবাই শুধু নিজের স্বার্থটাকে বেশি করে দেখছি ।
তাই সবশেষে বলবো অন্যায় করা যেমন অপরাধ । ঠিক তেমন অন্যায় সহ্য করে প্রতিবাদ না করাটাও আরো একটা অপরাধ । তবে প্রতিবাদটা এইভাবে কখনোই করা উচিত নয়, যাতে করে আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছি । অন্যায়ের কারণটা খুঁজে সেটা বন্ধ করাই হলো সঠিক প্রতিবাদ । ধ্বংসাত্মক নয়, গঠনাত্মক প্রতিবাদ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সমাজে । তবেই সমাজে নিজের ও সবার ভালো হবে আগামীতে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।