সম্পাদকীয়

খবরের সন্ধানে অপরাধ, চক্রান্ত, রাজনীতি, কূটনীতি, ধর্ষণ কত বিচিত্র চিত্র সামনে আসে৷ কিন্তু কিছু খবর এমন আসে, যেন মনে হয় জোৎস্নার আলোয় মাখামাখি হচ্ছে পৃথিবী৷ ধূপের গন্ধে, আরতির ঘন্টা ধ্বনিতে পৃথিবী রাজনন্দিনী হয়ে উঠছে ক্রমশঃ৷ আমার মনের অমৃত উপছে পরে জাগতিক স্বপ্নের গায়ে৷ তাহলে সেই ঘটনা প্রবাহের দিকেই এবার ফিরে তাকান যাক:-
আজও ভালবাসারা বেঁচে আছে…আজও তাঁরা প্রকৃত প্রেমিক হৃদয়ে তিরতির করে ডানা মেলে । এমন ভালবাসা এই রক্তে-মাংসের পৃথিবীতেই ঘটে । আবার এই পৃথিবীতেই অমর হয়ে যায় । এমন ভালবাসারই নিদর্শন দিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলির বাসিন্দা শুভঙ্কর ও তাঁর প্রেমিকা । কুর্নিশ তাঁদের ।
কুলতলি ব্লকের পশ্চিম গোপালগঞ্জের বাসিন্দা শুভঙ্করের ভালবাসার মানুষটি ৷ কিন্তু গোটা জীবনটা তাঁর বড়ই যন্ত্রণার । ওই যুবতী মাতৃগর্ভে থাকার সময়ই তাঁর বাবা ভিনরাজ্যে বিয়ে করে চলে যায় ৷ জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয় মায়ের ৷ একমাত্র আশ্রয় ছিল মাসি, দিদা ও দাদু ৷ ছোটবেলা কোনওরকমে কাটলেও মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে লাগাতার যৌন নির্যাতনের শিকার হতে :ছিল তাঁকে ৷
২০১৩ সালের ঘটনা ৷ বাড়িতে কেউ না থাকায় দাদুর কাছে টানা ছয়দিন ধরে ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে ৷ ছোট্ট মেয়েটি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ৷ তাঁর স্কুলেরই অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শুভঙ্কর মন্ডলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কিশোরী হৃদয় ৷ নিজের উপর অত্যাচারের কথা খুলে জানায় প্রেমিককে ৷ শুভঙ্কর বিষয়টি জানায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ৷ তাদের পক্ষ থেকে কুলতলি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷ ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত মানিক জানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷
কিন্তু এর পরিণতি হয় আরও মারাত্মক । অভিযোগ করার ‘অপরাধে’ বাড়ি ছাড়তে হয় অসহায় মেয়েটাকে ৷ তাঁকে যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দেওয়ারও চেষ্টা করে তাঁর মাসিরা ৷ বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হোমে পাঠায় ৷ সেখানেই নতুন জীবন শুরু হয় নির্যাতিতা ওই সাহসী কিশোরীর ৷ নতুন করে পড়াশুনাও শুরু করে ৷ ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পাশ করে সাহসিনী ৷
ততদিনে স্নাতক হয়ে গিয়েছেন শুভঙ্কর ৷ প্রথমে উপার্জনের জন্য গাড়ি চালানোর কাজ শুরু করলেও পরবর্তীকালে মাছের ব্যবসা শুরু করেন তিনি ৷ একইসঙ্গে ছোটবেলার প্রেমিকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন শুভঙ্কর ৷ প্রাপ্তবয়স্ক হলে ওই যুবতী হোম কতৃপক্ষের কাছে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন ৷ পাত্র হিসেবে শুভঙ্করের কথা জানান তিনি ৷ যোগাযোগ করা হয় শুভঙ্কর ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে ৷
গত সোমবার কুলতলির পুর্ব গোপালগঞ্জে শুভঙ্করের বাড়িতেই চারহাত এক করা হয় সকলের উপস্থিতিতে ৷ অনেক লড়াই করা, কষ্ট পাওয়া মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো করেই বাড়িতে তুলেছেন শুভঙ্করের বাবা ও মা ৷ আগামী দিনগুলো একসঙ্গে কাটাতে চান তাঁরা ৷ সুখী হোক তাঁদের পথচলা ।
এমন শুভঙ্করেরা, এমন মা বাবারা যেন কুলোর বাতাস হয়ে চিরকাল লেগে থাকে সভ্যতার গায়ে৷
এমন মুহূর্তেই তো বলতে ইচ্ছে করে, ” সারে জাঁহাসে আচ্ছা হিন্দুস্থান হামারা “– আজ মহম্মদ ইকবালের জন্মদিন৷ আমাদের শ্রদ্ধা রইল এই মহান ব্যক্তিত্বের প্রতি ৷

✍️
রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।