শতভিষা’ শারদীয়া সংকলন ১৩৫৮ (স্বাধীনোত্তর বাংলা সাহিত্যের ১ম কবিতা পত্রিকা)
সম্প্রতি, হাতে এসে গ্যালো ~ আলোপৃথিবী প্রকাশিত ‘শতভিষা, শারদীয়া সংকলন ১৩৫৮’র ফ্যাকসিমিলি সংস্করণ।ভাবতেই পারিনি সুদূর ১৯৫১ থেকে পত্রিকাটিকে ব্যক্তিগতভাবে ছুঁতে পারবো কোনোদিন।আমরা জানি, স্বাধীনোত্তর বাংলা সাহিত্যে ‘শতভিষা’ এবং ‘কৃত্তিবাস’ প্রথম প্রকাশিত ধারাবাহিক কবিতা পত্রিকা হিসেবে গতো শতাব্দীর ৫০র দশকে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল।যেখানে, কৃত্তিবাস ছিল একেবারে তরুণ কবিদের আঁতুরঘর; সেখানে ‘শতভিষা’ মূলতঃ ৪০ ও ৫০’র একটি আদ্যোপান্ত মেলবন্ধন বা পূর্ব দশক থেকে পরবর্তী দশকে উত্তরণের আপডেটেশন্।অতএব, প্রকাশকের মতোই ধন্যবাদ জানাই কবি/প্রাবন্ধিক মুহম্মদ মতিউল্লাহ মহাশয়কে; যিনি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে দুষ্প্রাপ্য এই কপিটিকে প্রকাশকের কাছে দিয়ে, একে পুনঃপ্রকাশিত করার সুযোগ করে দিয়েছেন।এমনকি বইটিতে বিভিন্ন মূল্যবান টীকাটিপ্পনী এবং ভূমিকা লিখে, সাহায্য করেছেন।
এখানে, প্রাসঙ্গিকভাবেই ভূমিকাটির কিছু অংশ এখানে সূচনাপর্ব সম্পর্কিত তুলে ধরা ভালো ~ “স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাসাহিত্যে প্রথম কবিতা পত্রিকা আলোক সরকার এবং দীপংকর দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘শতভিষা’।এঁদের সাথে সঙ্গী ছিলেন তরুন মিত্র। বস্তুত গত শতকের পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত ‘শতভিষা’ এবং ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকদুটি পরবর্তী বাংলা কবিতার দিক নির্দেশন করেছে।আত্ম-উন্মোচনমূলক বিশুদ্ধ কবিতার প্রতি ছিলো ‘শতভিষা’র মূল লক্ষ্য।আধুনিকতাকে সে দেখেছিলো ব্যক্তিত্বচিহ্নিত প্রবহমানতা।’শতভিষা’র প্রকাশ সম্পর্কে পরবর্তীকালে আলোক সরকার লেখেন ~ বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ মূলতঃ ছিলো তিরিশের কবিদেরই প্রতিধ্বনি, নতুন কোনো কবিতার প্রতি পক্ষপাত তার ছিলো না।এই অবস্থায় ‘শতভিষা’, যে আধুনিকতাকে প্রবাহমানতার অর্থেই একদিক থেকে গ্রহন করেছিলো।”
‘শতভিষা’ জন্মের জন্য প্রয়োজনীয়তার বিশ্লেষণ খুব দারুণভাবেই বিশ্লেষিত হয়েছে ভূমিকাটিতে।মোট ষোলো পাতার সংখ্যাটিতে, সূচিপত্র দেখলে চমৎকৃত হতে হয় ~ মোট তেরোজন কবি :: বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় // অরুণকুমার সরকার // অরবিন্দ গুহ // কল্যাণ সেনগুপ্ত // আলোক সরকার // মানস রায়চৌধুরী // শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় // রবীন্দ্র বিশ্বাস // নরেশ গুহ // শ্রীমৃণালকান্তি // প্রমোদ মুখোপাধ্যায় // পূর্ণেন্দুবিকাশ ভট্টাচার্য // কবিশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।এছাড়াও রয়েছে ডবলিউ.বি.ইয়েটস্’র একটি কবিতার অনুবাদ; অনুবাদক তরুণ মিত্র এবং রয়েছে দীপঙ্কর দাশগুপ্ত রচিত সম্পাদকীয় গদ্য, শিরোনাম পূর্বরঙ্গ।
প্রতিটি কবিতা ও কবি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ টীকাটিপ্পনী প্রচুর তথ্যসমৃদ্ধ, যা বইটির শেষে রয়েছে।রবীন্দ্র // জীবনানন্দ পরবর্তী নতুন সময়ের সূচনাপর্বে, আধুনিক কবিদের অবস্থান বুঝতে গেলে ~ এই সংখ্যাটির গুরুত্ব অনেক।কবিতা যাঁরা লিখছি এই সময়ে, প্রতিটি দশকের কবিদের যতো পড়া যায়, ততোটাই ভালো ~ বিশেষত চর্চা এবং অনুশীলনের জন্য।বইটি এখনো কলকাতা লিটিল ম্যাগাজিন মেলা; নন্দন চত্বরে আলোপৃথিবী স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।