সুলগ্না এখন ঘরের মধ্যেই আছে। পুলিশের কাছে গিয়ে সমস্তটা বলার বলেছে। কার কার উপর ওর সন্দেহ হয় । এখন আর সন্দেহ করে কিই বা হবে। কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই একটার পর একটা ছেলে পাল্টে গেছে। আজাদ, ঋজু, শুভজিৎ, সৌরভ – এখন আপাতত আর্য । ব্যক্তির স্বাধীনতা আর সম্পর্ক তৈরির এই খেলা খেলতে থাকার একটা অসাধারণ নেশা কোকেনের গন্ধের মতো কাজ করে।
সুলগ্নার বাবা মা সহজ সরল মানুষ । আসলে এই পৃথিবীতে বাবা মায়ের সবচেয়ে বেশি জ্বালা । স্বাধীনতা দিলে ছেলে মেয়েদের ঠকে যায় তারা। এই ঠকবাজিগুলো দেখতে পাই রোজ।
সুলগ্না ছোটকে ফোন করেছে –
– হ্যালো , শোন পারিজাত দা যেন সবটা জানতে না পারে !
– কেন?
– না আমার সমস্যা আছে।
– আর কিছু?
– না
চুপ করে ঘরে বসে আছে। বাড়িতে সবাই সকালের পোস্টার নিয়ে বেশ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে । কিন্তু সবচেয়ে আশংকা যেটা নিয়ে তৈরি হয়ে গেছে – আর্যর সঙ্গে বিয়েটা কি হবে ?
বাড়িতে সবাই আর্যর সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারটা ঠিকই করে রেখেছে। কলেজেও কেউ কেউ আমরা জানি। তবে সবাই যেটা ভাবে আর্য আর সুলগ্নাকে নিয়ে – সেটা একেবারেই তা নয় । আমার আর পারিজাতের সামনে সুলগ্না ওদের সম্পর্কের একটা মিথ্যা গোলক তৈরি করে রেখেছে। সেই গোলককা অনেকটা আত্মগোপনকারী গর্তের মতো যেখানে ঢুকে পড়লে সুলগ্না ভাবে আর কেউ বুঝি ওকে দেখতে পাবে না ।
একদমই তা নয় সুলগ্না, তুমি নিজেকে বড় বেশি চালাক মনে করে ফেলছো না তো? আর সেই চালাকির একটা বিশাল ফাঁদে তুমি প্রথম পা ফেলে দিয়েছো এতক্ষণে ।
আর্য , পোস্টারের খবরটা জেনে গেছে সকাল থেকেই। ও তো এখানে থাকে না – দিল্লিতে পড়াশোনা করতে গেছে ইঞ্জিনিয়ারিং। বিভিন্ন ফোন আসে কলকাতা থেকে সুলগ্নার নামে, কখনও কখনও থ্রেট কলও যায় – আর্য দূর থেকে একটা একলা মানুষ কিই বা করতে পারে – এগুলো সুলগ্নাকে বলা ছাড়া! হয়তো রাগারাগি হয় , বিশ্বাসের কাছে সে তখনও সে হার মানে নি। কিন্তু পোস্টারের খবরটা আর্যর কাছে পৌঁছে দিয়েছে কেউ! কে সে?
এ কি সন্দেহ তালিকার মধ্যে একজন কেউ ?
হঠাৎ আর্যর ফোন নম্বর পেলই বা কি করে?
এ প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে বিপন্ন মাথা ভরে, তার চেয়ে বড় সমস্যা হয়ে গেলো সুলগ্নার বাড়ির লোকের। সকালে আর্য ফোন করে বলে –
আর্য – শুনুন , সুলগ্নার নামে পোস্টার ছড়িয়ে গেছে ! আমাকে একটা নম্বর থেকে ফোন করে জানিয়েছে , প্রথমে বিশ্বাস করি নি – পরে আমার কাছে ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয় । ছিঃ , ও এই সব কাজ করছে আজকাল । শুনুন , আপনাদের মেয়েকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কীর্তির কথা জানিয়ে ফোন আসে। আমি ওকে কিছু জিজ্ঞেস করলে, কথাটা এরিযে় যায় – কেন? তার মানে সত্যিই কি কোথাও সমস্যা আছে !
আর্য প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো ফোনে বলে সুলগ্নার বাবাকে। ওর মা’কে শেষে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন – “মনে হয় না আর্য আর বিয়েটা করবে ওকে”
– তাহলে কি হবে?