সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব – ১)
অমৃতায়ণ
অমৃতাকে যেদিন প্রথম আমাদের ঘরের কথাটা বলি , মনে হয় কালো ছায়ার আড়ালে চন্দ্রাহত হয়েছিল এক নক্ষত্র । তার ছায়া এসে এক জোরা হাতের তালুর উপর পড়তেই ছাই হয়ে গেছিল সবটা। কিন্তু আমার শব্দের মায়া আর অমৃতার চোখের স্পর্শে সেদিন রাস্তা পার হয়ে যাওয়া কালো বিড়ালটার নজর আমাদের চোখ এডিযে় যায় । চোখে দেখলেও কিছু হতো কিনা জানি না , কারণ আমি ঘোর নাস্তিক। রঙের বিচারে শুভ অশুভ নিয়ে ভাবা আমার কাজ নয় । আমার জীবন দর্শনশাস্ত্র নিয়ে, ভাবনা আর ভাবের মাঝেও যে একটা বাস্তব পৃথিবীর অবস্থান করে, সারাজীবন এই কথাটুকু মনে করিয়ে দেওয়া জন্যই মনে হয় অমৃতা আমার হাত ধরেছে।
কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন এক একটা মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, আরও কিছু আছে আমাদের গা ঘেঁষে, তারা গন্ধ নেয় স্পর্শ নেয়, কিন্তু কালো চরাচর থেকে কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। সত্যিই কি তাই, নাকি …
কেউ এ কথাগুলো শুনছে? পিছনে ফিরে দেখলাম একটা কুকুর : এ কি!
– কি দেখছো
– কুকুরের চোখে থেকে জল পড়ছে , অদ্ভূত, মুখটা হাসি হাসি কেমন
– উফ! তুমি পারও বটে, কোথায় নিজেদের বাড়িতে যাচ্ছি সেই আনন্দ করবে তা নয় ।
– কুকুর কখন কাঁদে জানো?
আমরা পৌঁছে গেছি তখন পেয়ারাবাগানে। না কোনও বাগান নয়, একটা পাড়ার নাম আর এখানেই আমাদের নতুন পৃথিবী।
চারপাশের সবটা ভালো করে দেখছি। মূল রাস্তা থেকে ঢালু রাস্তাটা কেটে নেমে এসেছে এই পাড়ার দিকে। চারপাশে বাড়ি আছে , তবে সেগুলো শুধুই যেন বাড়ির অবয়ব । নৈঃশব্দ কখনও কখনও অনেক নতুন কথা বলে, অনেক কিছু শুনিয়ে দেয় যা আমার আপনার শোনার নয়।
আমাদের বাড়িটা ভাড়া নেওয়া । তার উল্টো দিকে একটা পাঁচিল ঘেরা বাড়ি আছে, জানলার ভিতরের দিকে যেন বাসা বেঁধে আছে কত বছরের বন্দি অন্ধকার । ঘরটা প্রতিটা কোণ থেকে লতার সর্পিল আবর্তন যেন বিদ্রুপের দৃষ্টিতে দেখে মানুষের নির্মম উপস্থিতি । সমস্ত বাড়ির ভিতরেই তো আর মানুষ থাকার জায়গা নাও হতে পারে …..