• Uncategorized
  • 0

লেন্সের কালি-গ্রাফি – ৪

সুন্দরী আর সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে সুন্দরবনের অপরূপ শোভা…

চারপাশের এই কংক্রিট আর ব্যস্ত জনজীবনের ভিড়ে একফালি সবুজ যেন বড়ই দুষ্প্রাপ্য। এই দ্রুত বয়ে যাওয়া সময়ের ভিড়েও আমার মন যেন সবসময়ই একটু নিরিবিলি আর সবুজ খোঁজে। তাই মন আর চোখ দুদিকেই শান্তি দিতে বেরিয়ে পড়লাম একদিনের জন্য। কোথায় যাবো কোথায় যাবো, ভাবতেই মাথায় এলো সবুজে ঘেরা সুন্দরবনের কথা। বইয়ে পড়া আর লোকমুখে শোনার পালা শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম নিজে চাক্ষুস করতে।
শিয়ালদহ সাউথ সেকশন থেকে ক্যানিং লোকালে করে ক্যানিং পৌঁছাতে হবে। শিয়ালদহ থেকে ১ঘন্টা বাদে বাদে ক্যানিং লোকাল ছাড়ে। তবে বেশি বেলার ট্রেন ধরলে একদিনে ফেরাটা অসুবিধার। তাই আমরা বেশি দেরি না করে সকাল ৬টায় বাড়ি থেকে বেরোই। আর শিয়ালদহ থেকে ৭:২৫ এর ক্যানিং লোকাল ধরি। এটি নিতান্তই পরিবার সহযোগে ভ্রমণ ছিল। যেখানে শুধু আমি, মা, বাবা আর ভাই।
সত্যি বলতে আমি ঘুরেছি প্রচুর জায়গায়। ঝুলি খুললে সেখান থেকে পাঞ্জাব, গুজরাট, হরিদ্বার, পুরী, দিঘা, বৈষ্ণবদেবী, তামিলনাড়ু, কেরল অনেক কিছুই বেরোবে। কেরলের ব্যাক ওয়াটার অনেকটাই এই সুন্দরবনের মত। অপরূপ শোভা। চারিদিকে জল আর সবুজের সান্নিধ্য। আর মাঝখান দিয়ে নৌকায় ভেসে চলেছি আমরা। সে যেন আরেক শিহরণ জাগানো গল্প। সেই গল্প না হয় আরেকদিন হবে।
আর এই সব কিছুতেই সঙ্গী আমরা এই চারজন। এই বারও তাই চারজনেই বেরিয়ে পড়েছিলাম একটু হাফ ছাড়তে।
তবে এখানে একটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, সুন্দরবন ঘুরতে যাওয়ার জন্য শীতকাল উপযুক্ত। গরমে
যেন হাঁসফাঁস সেসব জায়গা।
তো যাই হোক শিয়ালদহ থেকে ক্যানিং পৌঁছাতে ট্রেনে ১ঘন্টা ৩০মিনিট লাগে। তাই আমার যখন ক্যানিং পৌছালাম তখন ঘড়িতে কাটায় কাটায় ৯টা বাজে।
ট্রেনে আসতে আসতে যে খুব একটা সবুজের প্রাচুর্য পেয়েছি সেরম নয়। কারণ শিয়ালদহ থেকে সোনারপুর আসতেই প্রায় ৪৫মিনিট লেগে যায়। আর সোনারপুর পর্যন্ত তো সবুজের আশা করা বৃথা। তারপরের বাকি সময়টাও সেরম চারপাশে গাছপালা ছিল না। তাই চোখের শান্তি খোঁজার জন্য ক্যানিং পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হলো আমাদের।
যেহেতু আমরা অনেক সকালে বেরিয়েছিলাম তাই ক্যানিং পৌঁছাতেই যেটা সবার আগে অনুভব করলাম তা হলো পেটের কলকলানি। তাই সেই কলকলানি নিবারণে খোঁজা শুরু হলো খাবার। ক্যানিং এর ওখানে পেটাই পরোটা(একটা বেশ বড় মাপের পরোটা কে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ওজনে বিক্রি করা হয়, তাই এরকম নাম) খুব চলে। ট্রেন থেকে স্টেশন এ নামলেই স্টেশন এর ওপর সারি সারি এই খাবারের দোকান। তবে সেগুলো যথেষ্ট অস্বাস্থ্যকর, তাই সেখান থেকে না খাওয়াই ভালো। আমরা স্টেশন থেকে বেরিয়ে কিছু দূর হেঁটে গিয়ে একটা দোকান থেকে সকালের জলখাবার সেরে নিলাম।
যেহেতু আমরা একেবারেই খোঁজ না নিয়ে গেছিলাম তাই ওখানের স্থানীয় লোকজন কে জিজ্ঞেসা করে আমাদের গন্ত্যব্যের হদিস করতে হলো।
এখানে বলে রাখা ভালো ক্যানিং থেকে সুন্দরবনের নানা দিকে যাওয়া যায়। যেমন ঝড়খালী, গড়খালী, মালতি ইত্যাদি। তাই স্থানীয় কাউকে সুন্দরবন কিভাবে যাবো জিজ্ঞেস করলে কেউই উত্তর দিতে পারবে না।
আমাদের এই বারের গন্ত্যব্য ছিল ঝড়খালী।
ওখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞেসা করে জানতে পারলাম ট্রেনের টাইম অনুযায়ী ওখানে বাস পরিষেবা চালু আছে। ক্যানিং স্টেশন এর পাশেই বাস স্ট্যান্ড। বাসের পাশাপাশি অটো, ট্রেকার ইত্যাদি পরিষেবাও আছে। ক্যানিং স্টেশন থেকে ঝড়খালী পৌঁছাতে প্রায় ১ঘন্টা ৩০মিনিট মত লাগে। বাস আর ট্রেকারে একই সময় লাগে। আর অটো তে কিছুটা বেশি সময় লাগে। ট্রেকার আর বাস যেমন ক্যানিং স্টেশন টু ঝড়খালী ডাইরেক্ট যায়, অটো কিন্তু সেরকম যায় না। অটো তে গেলে মাঝে অটো চেঞ্জ করতে হয়।
সে যাই হোক আমরা ঠিক করলাম বাসেই যাবো। যেহেতু আমরা ভোটের কিছুদিন আগে গেছিলাম তাই বাস পরিষেবা খুব একটা সচল ছিল না। তাই সময় বাঁচানো আর ঘোরা কে সফল করার উদ্যেশ্য নিয়ে আমরা ট্রেকারে করে বেরিয়ে পড়লাম ঝড়খালীর সন্ধানে।
স্টেশন থেকে প্রায় মিনিট ১০এর হাঁটা পথের দূরত্ব ট্রেকার স্ট্যান্ড। ট্রেকার স্ট্যান্ড এ আবার লাইন দেওয়ার একটা ব্যাপার আছে। আমরা নিতান্তই দেরি করে ফেলায় প্রায় শেষ মুহূর্তে ট্রেকারে কোনরকমে চারটে জায়গা পেয়ে যাই। সেই ট্রেকার টা ছেড়ে দিলে আবার অনেকক্ষন পর। মূলত ট্রেকার ছাড়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। একটি ট্রেকারে প্রায় ১৫-১৬ জন করে যাত্রী নেওয়া হয়। তাই যাত্রী ভর্তি হয়ে গেলেই ট্রেকার ছেড়ে দেয়।
বেশ কষ্ট করেই ট্রেকারে যৎসামান্য জায়গা করে নি চারজনে। তারপর ট্রেকার ক্যানিং ছেড়ে বৈতরণী নদী পার করে দুরন্ত সবুজ ভেদ করে এগিয়ে চললো ঝড়খালীর সন্ধানে।

ক্রমশ…

কলমে – অনিন্দিতা ভট্টাচার্য্য
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।