লেন্সের কালি-গ্রাফি – ৩

অবলোকন ও অবগাহনের পুণ্য স্নান গঙ্গাসাগর

লোকমুখে প্রবাদই হলো, “সব তীর্থ বারংবার, কিন্তু গঙ্গাসাগর একবার।” এই কথা বর্তমানে কতটা প্রচলিত তা বলাটা কঠিন হলেও একসময় সত্যি তা যথেষ্ট দুর্গম ছিল।
গঙ্গাসাগরের যাত্রাপথ যদিও বা আগেই বর্ণনা করেছি। কিন্তু এখন চারিদিকে যানবাহনের প্রচুর সুবিধা হওয়ার ফলে এবং সরকারের পক্ষ থেকেও অনেক সাহায্যের ফলে গঙ্গাসাগর ভ্রমণ অনেকই সহজ সাধ্য হয়ে উঠেছে।
পৌষসংক্রান্তির ভোরে গঙ্গাসাগর স্নান পুণ্য স্নানবলে বিবেচিত হয়। আগে শুধু মাত্র এই স্নানের জন্য গঙ্গাসাগর বিখ্যাত হলেও এখন এই পুণ্যস্নানের পাশাপাশি জমে ওঠে মেলা। পৌষসংক্রান্তি দুদিন আগে থেকে এই মেলা শুরু হয়, এবং টানা এক সপ্তাহ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
অন্যান্য স্বাভাবিক আর পাঁচটা মেলার মতোই ওই কদিন এই গঙ্গাসাগর মেলা জমে ওঠে। ওখানকার স্থায়ী মানুষদের রোজগারের একটি দারুন উপায় হলো এই মেলা। স্থানীয় মানুষেরা তাদের নিজেদের হাতের তৈরী নানারকম জিনিষ এই মেলায় বিক্রি করেন। এছাড়াও পাওয়া যায় শাঁখের নানারকম গয়না সামগ্রী।
আরও রয়েছে মেলার নানারকম আকর্ষণীয় দ্রব্যাদি। এই গঙ্গাসাগরের এই কদিনে দেখা পাওয়া যায় দূর-দুরান্তের নাগা সন্ন্যাসীদের। তাদের ভিড় ও একইরকম ভাবে জমে। পুণ্যার্থী ছাড়াও আরও নানারকম মানুষের সমাগম ও দেখা যায়। শুধুমাত্র ভ্রমণ উদ্দেশ্যেও গঙ্গাসাগর কিন্তু মন্দ নয়।

এর পাশাপাশি ওখানে আছে কপিলমুনির আশ্রম। গঙ্গাস্নানের পাশাপাশি এটিও একটি দর্শনীয় স্থান। মেলার তালে তাল মিলিয়ে ভিড় জমে এই কপিলমুনির আশ্রমে। মূলত নানারকম সন্ন্যাসী এবং নাগা সন্ন্যাসীদের এরই দেখা মেলে এখানে।
গঙ্গাসাগরে থাকার ব্যবস্থা হিসাবে এখন অনেক হোটেল গড়ে উঠলেও, অনেকেরই সেখানে থাকার সামর্থ হয় না। তাই ওখানে আরও একটি দর্শনীয় উপাদান বলতে দেখা যায় হোগলা পাতার টেন্ট বা তাঁবু। সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু হোগলা পাতার তাঁবু গড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অত্যাধিক ভিড়ের কারণে নিজেরাও অনেকে এই পাতার টেন্ট নিজেদের মত গড়ে নেন।
পুণ্য স্নানের পাশাপাশি দু-দিনের ঘুরতে যাওয়ার জন্য কিন্তু বেশ আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে এই গঙ্গাসাগর। চারপাশের বদ্ধ জীবনে হাঁপিয়ে উঠলে গঙ্গার খোলা হাওয়া কিন্তু রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য যথোপযুক্ত।

লেন্সে – সুবীর মন্ডল
কলমে – অনিন্দিতা ভট্টাচার্য্য
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।