সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৩২)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ৩২

বল্টুদার হাঁটার জোর বেড়ে গেলো। মনের মধ্যে খারাপ কিছু একটা ডাকছে। বিপদের সম্মুখীন হলে মানুষের যেমন হয় আর কি। তবুও বল্টুদা বেশ সজাগ এবং সচেতন। মনে মনে উত্তেজনা কমাচ্ছেন। স্থির বিশ্বাস একটু পরে ক্লাইম্যাক্স। দূর থেকে বাসটা দেখা যাচ্ছে। লোক জন কম। এদিক ওদিক কয়েকজন বিভিন্ন চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। বিভিন্ন বাসের আসপাশে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়ানো কয়েকজন। হয় গাড়ির ড্রাইভার কিম্বা খালাসী। বল্টুদা আস্তে আস্তে বাসের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলেন। খালাসী সবে মাত্র আরামের বিড়ি ধরিয়েছেন, হঠাৎ করে বল্টুদাকে দেখে চমকে উঠলেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই বাসের পিছন দিকে দৌড় লাগালেন। বল্টুদা ওতটা নজর দিলেন না। এবার বাসের সামনে গিয়ে দেখলেন দরজা বন্ধ। বল্টুদা একটানে খুলে ফেলে দিলেন দরজাটা।
বাসের মধ্যে নিমেষে যেন তুলকালাম শুরু হয়ে গেলো। হাতে বন্দুক নিয়ে বল্টুদার দিকে তাক করে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি এ গাড়ির ড্রাইভার কানাই। বল্টুদা অবাক হয়ে দেখলেন বাসে বসে তার চামড়ার বুট জোড়ার সোলটা খুলে ফেলছে কানাই। বল্টুদা বন্দুকে ভয় পেলেন না। অকুতোভয় তিনি। চেঁচিয়ে বলে উঠলেন—-“কানাই, আমি কিছুদিন ধরেই এটা আন্দাজ করছিলাম। তুমি যে হীরে চুরি করে আমাদের বাসে ড্রাইভার সেজে পালিয়ে এসেছো এটা আমরা জানি। আরো জানি তুমি প্রথম দিন রাতে ধাবার ধারে খাবার সময়ে বাসের যাত্রীদের কয়েকটা জুতোর হাল্কা হিলের নীচ খুলে ছোটো ছোটো হীরে কাপড়ে মুড়িয়ে রেখে দিয়ে আবার সোল আটকে দিয়েছিলে। এবং এই রাখার সময়ে এত সুচারু ভাবে একটা ভ্যাকুওম তৈরি করে কাজটা করেছিলে যাতে জুতো পায়ে দিলেও বোঝা না যায়। যে কটা জুতোয় করেছো, জুতো গুলো পায়ে দিতে প্রথমে সবারর অস্বস্তি লাগছিলো। কিন্তু কেউই অতটা লক্ষ্য করেনি। সীমান্তে চেকিং হতে পারে বলে তুমি এটা করেছিলে। তারপর যেটা হয় তোমার নিজেরও মনে থাকেনা কোন কোন জুতোর নীচে হীরে রেখেছো। আর তাই জুতো চুরির খেলা চলতেই থাকে। আর আজ ছিলো সেই হীরে ফিরে পাবার লাস্ট পর্ব। বাকী সবগুলোই পেয়ে গেছো তুমি। আমার জুতোর নীচে থাকা হীরেটা পাও নি। আর পাবেও না কানাই। কারন কলকাতা থেকে গোয়েন্দা তোমার পিছু নিয়েছে। তাদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা আমায় জুতোতে হীরে লুকোবার জায়গার কথা বলাতে আমি হোটেলের ঘরে বসে সেটা খুলে দেখি। এবং দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কি ভীষণ সুচারু ভাবে কাজটা করা। আমার জুতোর হীরে গুলো এখন পুলিশের জিম্মায় কানাই। আর আমাকে বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখিয়েও লাভ নেই। পুকিশের ভ্যান আমাদের গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে আছে। আমি ফোনে জানিয়ে দিয়েছি। যে কোনো মুহূর্তে তারা এসে পড়তে পারে এখানে। “
এত দীর্ঘ একটা সংলাপ বলার পর বল্টুদা রীতিমতো উত্তেজিত। কানাই বন্দুক হাতে। বুঝতে পারছে ধরা পরে গেছে। ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। তারপর হঠাৎ বল্টুদার সামনে দৌঁড়ে এসে এক ধাক্কায় বল্টুদাকে ফেলে দিয়ে বাস থেকে নেমে চিল্কার দিকে ছুট লাগায় সে।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।