সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ২৯)
বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ২৯
বাসে যেতে যেতে টুকটাক খাওয়া দাওয়া চলছেই। প্যাকেট লাঞ্চ হয়ে গেছে। ভ্রমনের শেষের দিকে তারা। এবার যাবে উড়িষ্যার চিড়িয়াখানা নন্দনকাননে। পুরী যাওয়ার দৌলতে প্রায় বাঙালির নন্দনকাননে একবার যাওয়া। এমন কি অনেক মানুষ আছেন, যারা কখনো কলকাতার চিড়িয়াখানায় যান নি, কিন্তু নন্দন কানন থেকে ঘুরে আসা। খুব সাজানো চিড়িয়াখানা। সাদা বাঘ বা সিংহদের জন্য আলাদা ওপেন স্পেস। সেখানে খাঁচা দেওয়া গাড়ির মধ্যে যেতে হয়। খুব রোমাঞ্চ লাগে এই সাফারিতে। গাড়ি চলছ, আর বাঘ সিংহ চারিপাশে নিজেদের মত করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একেবারে নিজেদের মত করেই থাকে তারা। অনেকটা জায়গা নিয়ে এই বাঘ,সিংহের থাকবার ব্যবস্থা। সুন্দর লাগে ঘুরতে।
বল্টুদাদের বাস এবার নন্দন কাননের পথে যাত্রা করেছে। ভুবনেশ্বর স্টেশান থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে এই নন্দনকানন। সাইট সিনে এটাই শেষ দ্রষ্টব্য স্থান। গাইডও সঙ্গে থাকে। তারাই ভিতরে গিয়ে সহজে চিড়িয়াখানা দেখতে সাহায্য করে। বল্টুদাদের দলের সকলে ছোটো কিম্বা বড়, সবাই মিলে নন্দনকাননে গিয়ে একেবারে বাচ্চাদের মত হয়ে গেলো।
বল্টুদা ভিতরে ঢোকেন নি। বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। বাস ড্রাইভার কানাই, খালাসী এরা সবাই সঙ্গে আছে। কানাইকে নিয়ে একটু এগিয়ে একটা চায়ের দোকানে বসে গল্প করছেন বল্টুদা। এ কদিনে কানাইয়ের সঙ্গে বেশ একটা ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে বল্টুদার। কিন্তু কানাইয়ের সঙ্গে এর আগে যোগাযোগ ছিলো না। যেখান থেকে বাস নেওয়া হয়েছিলো, তারাই পাঠিয়েছে কানাইকে। তাদের ওখানেও খুব একটা বেশী দিন জয়েন করেনি কানাই। এটাই তার প্রথম ট্রিপ। কানাইয়ের বাড়ি নাকি বর্ধমানের দিকে। ফ্যামিলি আছে। আগে কিসব ব্যবসা করত কানাই। এখন বাস চালাচ্ছে। কানাইকে বেশ ভালোই লেগেছে বল্টুদার, শুধু বাস চালানো নয়, বল্টুদাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজও করেছে কানাই।
বল্টুদা আজ একটু কৌতূহলী হয়ে কানাই কে জিজ্ঞেস করলো..
” আচ্ছা কানাই, এই যে বাস থেকেও জুতো চুরি যাচ্ছে, তুমি কি কিছু জানো? তুমিতো বাসের সঙ্গে বা আশপাশে থাকো, তবুও তোমার চোখ ফাঁকি দিয়ে এমনটা হয় কি করে?”।
প্রশ্নটা আসবে এমনটা যেন কানাই আগেই আন্দাজ করে রেখেছিলো। তাই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো….
“আমি সবসময় নজর রাখি দাদা। আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া খুব অসুবিধের। কিন্তু তারই মধ্যে আমি যখন একটু গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে এদিক ওদিক যাই, তখনই বোধহয় ঘটনাগুলো ঘটেছে। তবে খালাসী তো থাকে সবসময়।”
খুব স্বাভাবিকভাবেই বল্টুদার সন্দেহের তীর গিয়ে পরলো খালাসীর উপরে। একটু অবাক হলেন বল্টুদা। এই আপাত নিরীহ লোকটি ভিতরে ভিতরে এতটা? এ যে সাংঘাতিক কান্ড। কিন্তু বল্টুদার যুক্তিবাদী মন কোনো কিছুকেই এড়িয়ে যেতে চাইছিলো না। ভালোই হলো একথা জেনে। এবার নজরটা একটু কড়া দিতে হবে। ওদিকে বল্টুদা ভেবে চলেছেন যে হীরে আর জুতোর মধ্যে কি বিশেষ কোনো মিল রয়েছে? কেন তবে এই জুতো চুরির সঙ্গে হীরে চুরিটা এসে জুড়ে গেলো। অনেক প্রশ্ন মাথার ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে। ওদিকে সেই পুলিশের গাড়িটাকে আর দেখতে পাচ্ছেন না বল্টুদা।
বিকেল গড়িয়ে প্রায় গোধুলি। অন্ধকার নেমে আসবে একটু পর। নন্দনকাননের ভিতর থেকে একে একে সবাই বেরিয়ে গাড়ির কাছে চলে এলেন। সবার দারুন আনন্দ হয়েছে। খুব খুশী ওরা। ফিরতে হবে পুরীর গেস্ট হাউজে। আগামীকাল আবার বেরনো চিল্কার দিকে। তাই ঠিক হলো যে গেস্ট হাউসে ফিরে তাড়াতাড়ি সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পরবেন। তবে আপত্তি জানালেন অনেকে। আর মাত্র একদিন থাকা পুরী, তার পরের দিন, রাতে ট্রেন। সুতরাং ফিরে আগে কিছুক্ষন সমুদ্রের পাড়, তারপর খাওয়া দাওয়া, এবং খাওয়ার শেষে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা সবাই মিলে।
বল্টুদা সবাইকে নিয়ে বাসে চেপে বসলেন। বাস চলতে শুরু করে দিলো। রাতের উড়িষ্যার এই অংশ গুলো কেমন মন কেমন করা। ঘুম আসছে চোখে। বল্টুদা মনে মনে ভাবছেন আর হেড গুনছেন। তারপর হঠাৎ কেমন যেন নড়ে উঠলেন। আরে একমাত্র তাঁরই জুতো চুরি হওয়া বাকী। বাকী সবার জুতো চুরি হয়ে গেছে।