মার্গে অনন্য সম্মান সুমিতা বেরা (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
পাক্ষিক গল্প প্রতিযোগিতা পর্ব – ০৮
বিষয় : ভৌতিক/ রহস্য
তারিখ : 04/09/2020

রহস্যময়

সালটা ঊনিশশো তিয়াত্তর কি চুয়াত্তর হবে , তখন আমি খুব ছোটো , একদিন বাড়ির বড়োরা ঠিক করলো এই শীতে শিমুলতলা বেড়াতে যাবে.. বিহারের একটি ছোট্ট শহর শিমুলতলা.. পাহাড় প্রকৃতি ও জলবায়ুর টানে সেসময় অনেক বাঙালি সেখানে বেড়াতে যেত , আমাদের উত্তর কলকাতায় বিরাট বাড়ি.. বাবা কাকা জ্যাঠা মামা মেসো আর তাদের সন্তান সন্ততি নিয়ে সে বিরাট ব্যাপার ! সারাদিন হই হই লেগেই আছে.. তখন টিভি মোবাইল কিছু ছিল না , হাতে গোনা কটা বাড়িতে ল্যান্ড ফোন ছিল , তাই মাঝে মাঝেই যখন সবাই একজায়গায় হতো , তখনি হুজুগ উঠতো এখানে ওখানে বেড়াতে যাবার পোগ্রাম ….তো এক শীতকালে হুজুগ উঠলো , এবার সবাই মিলে দিন পনেরোর জন্য শিমুলতলা য় বেড়াতে যাবে, একটা খুব সুন্দর দোতলা বাড়ি পাওয়া গেছে শিমুলতলা স্টেশন থেকে একটু ভিতরের দিকে.. . আমার অ্যাডভোকেট মেসোমশাই সব ঠিক করলেন , বাড়ির কেয়ারটেকার মোহন মালি কে খবর দেওয়া হোলো .. মেসোমশাই আগেও শিমুতলায় দুবার গিয়েছিলেন সেই সূত্রে অনেক চেনাজানা আছে । তো বাড়ির কেয়ার টেকার কে বলা হোলো ওই সব বন্দোবস্ত করে রাখবে.. আমরা ছোটদের সে কি আনন্দ ! জনা পঁয়ত্রিশ এর মতো লোক হোলো.. বেড়াতে যাবার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো , যে যার মতো জামাকাপড় গোছাতে লাগলো.. বড়দিদিরা তাদের সাজগোজের জিনিস মা মাসিরা ওষুধপত্র ফার্স্টএইড বক্স সাথে নিয়ে নিলো.. অতো দিনের জন্য যাওয়া.. পাহাড়ি হাওয়া বদলের জায়গা , ওষুধ পত্র সঙ্গে থাকা ভালো , বিছানা পত্র নেওয়া হোলো , তবে বাসন কোসন ওখানে আছে , খুব গরম বাদ দিয়ে ওখানে লোকজনের ভিড় লেগেই আছে.. তাই বাড়ির কেয়ারটেকার সব বন্দোবস্ত করে রাখে ..
যাই হোক নির্দিষ্ট দিনে ভোর অন্ধকার থাকতে উঠে মালপত্র নিয়ে হই হই করতে করতে আমরা বেরিয়ে পড়লাম.. ও হ্যাঁ লুডো তাস ক্যারাম গল্পের বই এসব নিতে ভুলিনি ..অতদিন থাকবো তো , যাহোক ট্রেনে সবাই মজা করতে করতে মায়েদের হাতের বানানো খাবার খেতে খেতে কখন যেনো গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেলাম.. ঝমঝম করতে করতে ট্রেন যখন শিমুলতলা স্টেশন এ পৌঁছলো তখন বিকেল বিদায়ের পালা.. পাহাড় ঘেরা স্টেশন লাল গোধূলি আলোয় যেনো লাজবধু হয়ে আছে ! ছোট্ট আড়ম্বরহীন স্টেশন , দূরে দূরে মাটির দেওয়ালের ওপরে খড়ের ছাউনি দেওয়া টিমটিমে আলো জ্বলা চায়ের দোকান গুটি কতক , একটু এগোলেই পরপর কতো গুলো মিষ্টির দোকান ছাড়িয়ে আমরা স্টেশন এর বাইরে এসে দাঁড়াতেই , দেখলাম মোহন মালি খান ছয়েক গরুর গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য —- মোহনমালী জাতে বিহারী প্রায় ছ ফুটের ওপর লম্বা.. রোদে পুড়ে তামাটে গায়ের রঙ , শক্ত চোয়ালের চৌকোনো মুখ পরনে খাটো ধুতি আর ফতুয়া , মুখে একটা কাঠিন্য হাসি.. —একগাল হেসে আমাদের দেখে একদম পরিষ্কার বাংলায় বললো —- এসে গেছেন দাদাবাবুরা ! পথে কোনো অসুবিধা হয়নি তো? চলুন সবাই গাড়িতে উঠুন , সবাই মিলে ধরাধরি করে মালপত্র গাড়িতে তোলা হোলো.. সেই প্রথম আমার গরুর গাড়ি চড়া ..ওখানে তখন যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি , কি যে উত্তেজনা সবার !কাঁচা মেঠো পথ দিয়ে ক্যাঁচকোঁচ করতে করতে গরুর গাড়ি চলছে.. চারপাশে ছোট ছোট পাহাড় ঘেরা শিমুলতলা যত দেখছি তন্ময় হয়ে যাচ্ছি.. অবশেষে এসে থামলাম একটি সুন্দর ছিমছাম একতলা বাড়ির সামনে.. কি যে সুন্দর ডিজাইনার বাড়ি ! দেখলাম বাড়িটির নাম মধুর আশ্রম .. গরুর গাড়িগুলো দরজার সামনে দাঁড়াতেই সবাই জিনিস পত্র নিয়ে হই হই করতে করতে বাড়িতে ঢুকলাম.. বাড়িটার মাঝখানে একটা উঠোন . উঠোনের এক পাশে বিশাল পাতকুয়া .. পাশে পায়খানা আর ঢাকা স্নান ঘর… উঃ উঠোনের ধারে ধারে কতো ছোট ছোট আতা গাছ ! আর কতো নাম না জানা ছোটো ছোটো ফুলগাছ , আতা গাছে কতো যে আতা হয়েছে , বাড়িতে অনেকগুলো ঘর ,, সব ঘরে চৌকি পাতা.. সবাই আরামেই থাকতে পারবো.. মোহন মালি মা মাসিদের বললো —- আমি দুটো উনুন ধরিয়ে দিচ্ছি.. রাতে ডিমের ঝোল ভাত বানিয়ে ফেলুন তাড়াতাড়ি.. এখানে তো বিজলি নেই.. হেরিকেন ই ভরসা.. কয়েকটা হেরিকেন আর হ্যাচাকের ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি.. সারাদিন অনেক ধকল গেছে আপনাদের , তাড়াতাড়ি খেয়ে সবাই শুয়ে পড়ুন , আর বাচ্চারা রাতে বেশি হই হই করবেনা কেমন.. এখানে চারপাশে গভীর জঙ্গল ! রাত বাড়লে আলোর নিশানা দেখলেই ডাকাতের দল হামলা করতে পারে.. তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া করে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ুন .. আমি ছাদের চিলে কোঠার ঘরে থাকবো কোনো দরকার হলে হাঁক দেবেন.. এই বলে মোহন মালি চলে যেতে উদ্যত হোলো.. তারপর আবার কি মনে হতে ফিরে এসে আস্তে আস্তে বললো —–রাতে কিন্তু কেউ উঠোনের দিকের দরজা খুলবেন না.. উঠোন পেরিয়ে পায়খানার দিকে কেউ যাবেন না … ঘর লাগোয়া লম্বা বারান্দায় যে ছোট্ট বাথরুম তা আছে ওটা ব্যবহার করবেন খুব দরকার পড়লে… মা জিগ্যেস করলো — রাত বিরেতে যদি কারোর পায়খানা পায় তো কি করবে..? মোহন মালি বললো — আমি তো ছাদের চিলে কোঠায় শুয়ে থাকি , আমার ঘুম খুব সজাগ একবার ডাকলেই উঠে পড়ব… নিচে নেমে আসবো , একলা কেউ উঠোন পেরিয়ে পায়খানায় যাবে না…..এই বলে মোহন মালি চলে গেলো উনোন ধরাতে , যেতে যেতেও ওই একই কথা বলে গেলো.. কেউ কিন্তু অধিক রাতে ভুলেও উঠোনের দরজা খুলবে না….
সেই রাতে সবাই তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার শুয়ে পড়লাম , আওয়াজ ও বেশি করিনি কেউ , ওই যে কেয়ার টেকার বলে গেলো বাড়ির আশেপাশে বেশ দূরে দূরে গভীর জঙ্গল ! ডাকাতের বাস… তাছাড়া বাড়িটা যদিও খুব সুন্দর কিন্তু কেমন যেনো একটু গা ছমছমে ! সে রাতে আমরা ভাই বোনেরা চুপচাপ ডিমের ঝোল ভাত খেয়ে শুয়ে পড়লাম l
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যেতেই ধড়ফড় করে উঠে বসলাম ! আরিব্বাস কি সুন্দর পাখিদের কলতান ভেসে আসছে ! তাড়াতাড়ি করে বারান্দা পেরিয়ে উঠোনের দরজা খুলে দিতেই পুবের নরম রোদ হুড়মুড় করে বারান্দা আর ঘরে ঢুকে পড়লো.. কতগুলো টিয়া পাখি আতা গুলো ঠুকড়ে ঠুকড়ে খাওয়ার চেষ্টা করছিল , আওয়াজ পেয়েই ট্যা ট্যা করতে করতে উড়ে পালালো , ছোট ছোট গাছগুলিতে রংবেরঙের ফুল ফুটে আছে ! রাতের সেই গা ছমছম এখন পুরো উধাও !
এই ভাবে দুদিন হই হুল্লোড়ে কাটাবার পর সেদিনও মা মাসি মামীরা বিকেল বিকেল রান্না বান্না সেরে সন্ধ্যে সন্ধ্যে সবাই বারান্দায় লম্বা করে বসে খেতে বসেছি , আজ দেশি মুরগির ঝোল আর গরম ঝুরো ভাত.. সবাই অন্য দিনের চেয়ে পেট পুরে খেয়ে হেরিকেন কম করে বারান্দার এক কোনে রেখে যে যার শুয়ে পড়লাম ,
গভীর রাতে হটাৎ আমার মেজদির পেটে চাপ পড়লো , অনেকক্ষণ চেপে থাকার চেষ্টা করলো .. নাহ আর পাড়া যাচ্ছে না ! মেজদি কাউকে না ডেকে বারান্দার কোনে রাখা হেরিকেনের সলতেটা একটু বাড়িয়ে হাতে নিয়ে উঠোনের দরজাটা যেই খুললো কেমন যেনো একটা ক্যাচ করে আওয়াজ হোলো ! মেজদি বরাবর ই একটু সাহসী , ভূতের বই রহস্যের বই এর পোকা ! সারাদিন ওই সব বই এ মুখ গুঁজে থাকে… . মোহনমালী বারণ করা সত্ত্বেও মেজদি উঠোনে নামতেই দুর থেকে দেখলো —— কে যেনো একটা বৌ এক গলা ঘোমটা দিয়ে কুয়ো থেকে জল তুলছে ! মেজদি ভাবলো হয়তো মোহন মালির বৌ টৌ কেউ হবে, মেজদি আর এগোলো না , দেখলো বৌ টা বালতিতে জল ভরে পায়খানার দিকে এগোচ্ছে .. তার মানে মেজদি কে এখন অপেক্ষা করতে হবে , আজ পূর্ণিমা .. সাড়া উঠোন যেনো পূর্ণিমার আলোয় ধুয়ে যাচ্ছে… হটাৎ মেজদি দেখলো পায়খানার ওই উঁচু তিন ধাপ সিঁড়ি থেকে কে যেনো পড়ে গেলো ! বালতি পড়ার ঝনঝনে আওয়াজ হোলো.. একটি মেয়েলি আর্তনাদ ! আর একটি মহিলার রাগত কণ্ঠস্বর .. মেজদি ঘুমাচ্ছন্ন চোখেও কেমন যেনো ভয় পেয়ে গেলো ! জোস্নালোকে কেমন যেনো মনে হোলো লাল চাপ চাপ রক্ত চারিদিকে ! আর একটা ছায়া হিহিহিহি করে হাসছে ! এ সব দেখে মেজদি বাকরুদ্ধ ! ভয়ে একেবারে কাঠ ! কি করে যে উঠোনের তিন সিঁড়ি উঠে বারান্দায় পৌঁছে উঠোনের দরজা সপাটে বন্ধ করে ঘরে এসেই অজ্ঞান.. ততক্ষনে দরজা বন্ধ করার জোর আওয়াজে মায়ের ঘুম ভেঙে গেছে.. আমাদের অনেকেরই ঘুম ভেঙে গেছে.. জল ঝাপ্টে মেজদির জ্ঞান ফেরানো হলো কিন্তু আতঙ্ক কাটছে না মেজদির অবশেষে বাবা খুব অস্থির হয়ে বারান্দার গ্রিলের কাছে গিয়ে মোহন মোহন বলে দুবার ডাকতেই মোহন একটা হ্যাচক নিয়ে নেমে এলো.. –কি হয়েছে দাদাবাবু? তারপর মেজদির দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত গলায় জিগ্যেস করলো –“কি হয়েছে কি হয়েছে দাদাবাবু? ” বাবা ঘটনাটা জানাতেই মোহন আঁতকে উঠল , —আমি তো বলেছিলাম অধিক রাতে উঠোনের দরজাটা না খুলতে .. আমাকে একবার ডাকলেই তো আমি… মামা বললেন কিন্তু রহস্য টা কি মোহন? —রহস্য ! না না ওসব কিছু না , এটা পাহাড়ী জায়গা অধিক রাতে কতো পাহাড়ি বিষাক্ত সাপ খোপ বিছে বেরোয় তাই বারণ করেছিলাম .. তারপর একটু থেমে মোহন মালি বললো —যান সবাই একটু ঘুমিয়ে নেন.. ভোর হয়ে এলো.. কেয়ার টেকার চলে যেতে উদ্যত হলে আমার এক শখের গোয়েন্দা দাদা হটাৎ বলে উঠল —মোহন চাচা একটু দাঁড়াও , তুমি ভয় পেয়েছো তোমার মুখ পাংশু হয়ে গেছে.. তুমি কিছু একটা লুকোচ্ছ , আসল রহস্য টা কি তোমায় বলতেই হবে , মোহন মালি মুখ কাচুমাচু করে বললো — বললাম তো কিছু হয়নি গো… গোয়েন্দা দাদা টিও ছাড়বার পাত্র নয়… ও সামনে গিয়ে মোহন মালির হাত ধরে একটা প্লাস্টিকের চেয়ার এ বসিয়ে দিলো — নাও এবার বলো তো সত্যি কি ঘটেছিলো ? তুমি অধিক রাতে উঠোনের দরজা খুলতে মানা করেছো কেন? তারপর মেজদির দিকে তাকিয়ে বললো — ও এভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলো কেন? কি দেখে ভয় পেয়েছে? সবার চাপাচাপিতে এতক্ষনে দুহাতে মুখ ঢেকে মোহন মালি কান্নায় ভেঙে পড়লো —কি বলবো দাদা বাবু , সব আমার কপাল ! বলে মোহন মালি মাথা ঝুকিয়ে ফেললো —-সে অনেকদিন আগেকার কথা তখন এই বাড়ির ছাদের ঘরে আমি আমার বৌ দু বছরে ছেলে কে নিয়ে থাকতাম .. নিচের ঘর গুলো তালা লাগানো থাকতো বাড়ীওয়ালার এমন ই নির্দেশ ছিল যে লোকজন বেড়াতে এসে ঘর ভাড়া নিলে তখন খুলে দেবে.. ছাদের ঘর যেটাই আমি থাকি ওটা বেশ বড়ো তোমরা সবাই দেখেছো তো … পাশে রান্না করার জায়গাও আছে ,
ছেলে বৌ নিয়ে আমি ওই ঘরে থাকতাম.,দিন গুলো ভালোই চলছিল.. একদিন গাঁও থেকে চিঠি এলো , ভাই কে সাপে কেটেছে জমিতে চাষ করবার সময় , ভাই এর নববিবাহিতা স্ত্রী একা .. নিজের বলতে কেউ নেই., তাই খবর পেয়ে আমি ওখানে গিয়েছিলাম এবং অনেক চিন্তা করে ভাই বৌ কে মন্দিরে বিয়ে করে নিয়ে এসেছিলাম.., —-কি বলছো? ! অনেকের মুখে জিজ্ঞাসার চিহ্ন দেখে মোহন মালি বললে —-আজ্ঞে আমাদের জাতে এই নিয়ম আছে.. একজন মেয়ে কে দু চার ভাই বিয়ে করতে পারে ….কিছুক্ষন চুপ থেকে মোহন মালি বললো, এছাড়া তো আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না, গ্রামে একা একা থাকলে বৌ টাকে শ্যাল কুকুরে ছিঁড়ে খেতো..
ওকে দেখে আমার বৌ তো রেগে অগ্নিশর্মা .. অনেক করে বুঝিয়ে সব বলতে একটু শান্ত হোলো.. ঘরের মাঝখান দিয়ে ভারি পর্দা টানিয়ে দেওয়া হোলো .. দু বৌ কে নিয়ে শুরু হোলো আমার সংসার… একদিন হটাৎ রাতে আমার ছোটো বৌ নিচে পায়খানায় গেছিলো , তখন গভীর রাত এমনই পূর্ণিমার আলো উঠোনে লুটোপুটি করছিলো .. আমি সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম নিচে ছোটো বৌ বারণ করলো অগত্যা আমি শুয়ে রইলাম আর কখন যেনো চোখ লেগে গেছিলো ! হটাৎ এক বিকট চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়… ধড়ফড় করে উঠে নিচে যাবার আগে পর্দা সরিয়ে দেখি, বড়ো বৌ বিছানায় নেই.. দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচে গিয়ে যা দেখলাম ! বলে মোহন মালি দু হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো —- তারপর? তারপর কি হোলো? বলো মোহন —– দেখলাম ছোটো বৌ পায়খানার সিঁড়ির নিচে পড়ে আছে .. রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর ! বালতি উল্টে একপাশে পড়ে আছে.. আর বড়ো বৌ পায়খানার ওপরের সিঁড়িতে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে, চোখ দুটো হিংস্রতায় জ্বলছে ! আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ ! একি করলে বড় বৌ ! ও যে অন্তঃসত্ত্বা ছিল , সাপের মতো হিসহিস করতে করতে বড়ো বৌ জবাব দিলো ” জী হা ইসিলিয়ে মার ডালা…. ঘরে তখন পিন পতন নিস্তব্ধতা ! গোয়েন্দা দাদা টা জিগ্যেস করলো —— পুলিশে খবর দিয়েছিলে? মোহন মালি মাথা নিচু করে বললো —– হ্যাঁ দিয়েছিলাম.. ভোরে পুলিশ এসে ডেড বডি উঠিয়ে নিয়ে গেছিলো — বলেছিলাম দুর্ঘটনা কেস অন্ধকারে উঁচু সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে…. জল ঘোলা হয়েছিল একটু অনেক কষ্টে সামলেছি.. বাবা জিগ্যেস করলেন ” আর তোমার বড়ো বৌ ! ওকে পুলিশে দাওনি?” —- মোহন মালি উদাস গলায় বললো — কাকে পুলিশ ধরাবো ! ওই দিনের পর বড়ো বৌ এর বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে.. কেমন যেনো পাথর হয়ে গেছে ! ও উন্মাদ হয়ে গেছে দাদাবাবু … বলতে বলতে মোহন মালি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললো… ওই ঘটনার পর থেকে এ বাড়িতে আর থাকি না… পাশে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকি.. —– তোমার ছেলে তো এখন বড়ো হয়ে গেছে? মোহন মালি বললো —-“হা সেতো ভিন্ রাজ্যে কাজ করে , ছুটিছাটা পেলে ঘর আসে ” তাহলে তোমার বৌ বাড়িতে একলা? —- জী হা ওকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তবে আসি … তারপর খুব উদাস গলায় বললো — দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়, নাহলে পাঁচিল টপকে চলে আসে এখানে আর পায়খানার সিঁড়িতে বসে থাকে ! লোকজন বেড়াতে আসলে , আমি ছাদের ঘরে সেকটা দিন থাকি , কখন কি দরকার হয় কিন্তু সারারাত ঘুমোই না, ভয়ে ভয়ে থাকি .. রাত গভীর হলেই মনে হয় বিচিত্র আওয়াজ আর মেয়েলি কান্নার স্বর… ! চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকি , একটু থেমে মোহন মালি আবার বললো —-তাই আমি উঠোনের দরজাটা খুলতে বারণ করেছিলাম ! আজ সেই দিন ! সেই ভরা পূর্ণিমা ! এমন দিনে অনেকেই অলৌকিক কিছু দেখতে পায়.. বিড়বিড় করতে করতে মোহন মালি হ্যাচাক টা নিয়ে ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো…..
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।