সাপ্তাহিক মুড়িমুড়কি -তে সুদীপ ভট্টাচার্য (পর্ব – ৩১)

বল্টুদার ট্রাভেল এজেন্সি – ৩১

পুরী ভ্রমনে অন্যতম আকর্ষণীয় এই চিল্কা সাইট সিন। চিল্কা পৃথিবীর দ্বিতীয় বড় লেগুন। এর তিন দিকে স্থল, আর সামনের মুখটা সমুদ্রের সঙ্গে জুড়ে থাকে। জোড়ার ভাটা খেলে এখানে। বোটে চড়ে চিল্কায় ভেসে যেতে হয়। ডলফিন দেখে তারপর সমুদ্রের কাছে এক দারুণ দ্বীপ। খুব সুন্দর। যাওয়ার পথে পরিযায়ী পাখির দল পাড়ের দুধারে কিম্বা চিল্কার মধ্যে ছড়িয়ে থাকা দু একটি ছোটো ছোটো দ্বীপে গাছের ডালে বসে থাকে ওরা। কি যে সুন্দর লাগে দেখতে। বালিহাঁস একসঙ্গে ভেসে থেকে জলে। মটর বোটের আওয়াজে আবার সবাই দল বেঁধে উড়ে যায় আকাশের পানে। কি অপূর্ব লাগে দেখতে। যেন স্বপ্ন দেখছি। দ্বীপে পৌঁছতে বেশ অনেকক্ষন লাগে। সমুদ্রের খুব কাছে। অনেকটা বড় দ্বীপ। সারি দিয়ে বোট। তারি মাঝে নিজেদের বোট রেখে সবাই নেমে পরে দ্বীপে। তারপর চারিপাশের সৌন্দর্যে মোহিত হওয়ার পালা। উঁচু নীচু ভূমি। জঙ্গলে ভর্তি। কেউ একটু বেশী রোমাঞ্চিত হয়ে জঙ্গলের ভিতরে যায়। ম্যানগ্রোভের সঙ্গে অন্যান্য অনেক গাছও আছে। খুব ঘন জঙ্গল নয়, তবে যেহেতু সমুদ্রের ধারে প্রায় নির্জন, তাই সবাই খুব বেশী ভিতরে যাওয়ার চেষ্টাও করেন না। সারা দ্বীপ জুড়ে দোকান। খারারের দোকান বেশী। যেন শুক্রবারের হাট। মাছ আর কাঁকড়া দেখলে লোভ আসে জিভে। অনেকেই চিল্কায় বোটে উঠবার আগে লাঞ্চ সেরে নেন। এই লাঞ্চের সঙ্গে ট্যুর কোম্পানি গুলোর কখনো যোগাযোগ থাকে, তাই স্থানীয় গাইডরাও উৎসাহিত করে লাঞ্চটা খেয়ে নেওয়ার জন্যে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাই হয়। বল্টুদা বিষয়টা জানতেন, তাই সকালের খাবার খেয়ে বেরনোর পরও এগারোটার দিকে আরেকবার হাল্কা কিছু খাবার সার্ভ করেছেন গাড়িতে। আর প্রত্যেককে বলে দিয়েছেন খাবার দ্বীপে গিয়ে খাবো। ভালো খাবারের জন্যে একটু অপেক্ষা করতে হবে শুধু। সবাই খাবারের বিবরন শুনে অত্যন্ত উৎসাহ দেখিয়েছিলো। আর দেখাবেনাই বা কেন? বিশাল সাইজের কাঁকড়া, ইয়াবড় চিংড়ি, ভেটকি, পমপ্লেট আরো কত রকম মাছ, এবং লাইভ কিচেনের ব্যবস্থা। দামে সাংঘাতিক কম। এমন সাইজের চিংড়ি বা কাঁকড়া হলে আমাদের এদিকে প্রচুর দাম হবে।
বাস মন্দির ঘুরে চিল্কার রাস্তায়। এবারের ট্যুরে গাইড নেননি বল্টুদা। রাস্তা অনেকটা। চারিদিকের প্রকৃতি নয়নাভিরাম। চিল্কার ধারে এসে দেখে অনেক বাস দাঁড়িয়ে। প্রচুর মানুষ এসেছেন। বল্টুদার চোখ সর্বদা সতর্ক। সজাগও বটে। বল্টুদার ফোনে কিছুক্ষন পর পরই কার যেন ফোন আসছে। বল্টুদা খুব আস্তে আস্তে কথা বলছেন। পাশে বসে থেকে বৌদি পর্যন্ত বুঝতে পারছেন না বল্টুদা কি বলছেন। মাঝে মাঝে রেগে যাচ্ছেন বৌদি। কিন্তু বল্টুদা চুপ। বৌদি জিজ্ঞেস করলেই বলছেন দরকারী ফোন।
বাস থেকে একএক করে সবাই নেমে পরেছে। স্থানীয় একটা রেস্ট্রোরেন্টে সবাইকে নিয়ে ঢুকেছেন বল্টুদা। নৌকায় অনেকক্ষনের জার্নি। তাই সবাইকে ফ্রেশ হয়ে নেবার সুযোগ দিতে হবে। রেস্ট্রোরেন্টে বসে সবাই চা খাচ্ছেন। আদা চা। আহা, সঙ্গে হাল্কা কিছু খাবার। বল্টুদা ভুলো মনের মানুষ। হঠাৎ খেয়াল হলো, বল্টুদা বাসে জুতো খুলে চলে এসেছেন। খালি পায়ে রেস্টুরেন্টে। কি যে হয় বল্টুদার। সবাই শুনে খুব হাসছে। বৌদি তো খেঁকিয়ে উঠলো, কিছুই মনে থাকে না তোমার। বাকী যারা বসে আছেন তারা হাসছেন, গুহ দা, বৌদি, নদী, কানাই, আরো সবাই হেসেই চলেছে। এবার বল্টুদা সবাইকে বললেন লঞ্চ ঘাটে যেতে। কানাইকে বললেন গাড়িটেকে পার্কিংএ নিয়ে যেতে। বল্টুদা চললেন লঞ্চের দিকে। কানাইকে বললেন ওদের লঞ্চে তুলে দিয়েই আসছি, তারপর তোমায় নিয়ে যাবো। কানাই প্রথমে না না করছিলো। বল্টুদা বড় মনের মানুষ। কাউকেই বাদ দেন না।
বল্টুদা সবাইকে নিয়ে লঞ্চ ঘাটের দিকে গেলেন। সাংঘাতিক ভাড়া লঞ্চ গুলোর। বড় বোট প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। কুড়ি পঁচিশ জন ধরে। সুন্দর সাজানো। দরদাম করে কিছুটা কমালেন। দুটো বোট নিতে হবে তাকে। দরদাম ঠিক হওয়ার পর বল্টুদা টাকা দিতে যাবেন, দেখলেন কিছু টাকা কম পরেছে। বাসে অন্য ব্যাগের মধ্যে টাকা রাখা আছে বল্টুদার। বল্টুদা বললেন, তোমরা অপেক্ষা করো, আমি আসছি এক্ষুনি। বলেই খালি পায়ে প্রায় দৌঁড় দিলেন।

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।