মার্গে অনন্য সম্মান সুমিতা চৌধুরী (যুগ্ম সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
পাক্ষিক গল্প প্রতিযোগিতা পর্ব – ১০
বিষয় : ভৌতিক/ রহস্য
তারিখ : ৩১\০৮\২০২০

ভূতের প্রশ্ন শিক্ষিত মানুষদের প্রতি

ঘুমের ঘোরে মনে হলো কে যেন পাশে বসে কাঁদছে। কিরকম অস্বস্তি হওয়াতে উঠে বসে অস্পষ্ট ছায়া ছায়া উপস্থিতি টের পেলাম। শীতের রাতেও ঘেমে উঠলাম। নিজের হৃদস্পন্দন যেন নিজেই শুনতে পেলাম। গলাও শুকিয়ে কাঠ, কিন্তু হাত বাড়িয়ে জলের বোতলটা নিতেও সাহস জোগাড় করতে পারলাম না। অনেক কষ্টে ও চেষ্টায় ফ্যাসফ্যাসে গলায় শুধু “কে” শব্দটুকুই বেরোল। নিজের এ হেন গলার আওয়াজে নিজেই চমকে গেলাম। আমার প্রশ্নে ছায়ামূর্তি যেন একটু নড়ে উঠল। কান্নার স্বরে আমাদেরই মতো স্বাভাবিক গলায় বলে উঠল,” কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি আজ। বহুদিন নয়, বহুযুগ ধরে তোমরা আমাদের সর্বক্ষেত্রে কদর্য রূপটা তুলে ধরেছো। কেন? তোমরা তো ভূতের গল্প ভালোবেসেই পড়ো। ভালোবেসেই সেইসব বই কেনো, নিজেরা গল্পও লেখো। তোমরা যাকে ভালোবাসো, তাকে সুন্দরভাবে ভাবতে পারো না? সর্বদা কদাকার রূপ দাও কেন? কেনই বা তারা, সবসময় ভয়ের কারণ হয়? ক্ষতিকর হয়? ভূত মানে তো অতীত, তোমাদেরই পূর্বপুরুষ তাঁরা। তাহলে তাঁরা তোমাদের চোখে কুচ্ছিৎ কি করে হয়? মৃত্যুর পর তাঁদের দেহের সৎকার করো, নশ্বর দেহ পুড়ে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আত্মা তো অবিনশ্বর। তা তো একই থাকে। আর আত্মাই তো আসল মানুষটা। যিনি তোমার আত্মায়, অন্তরে মিশে থাকে আজীবন। তোমার মায়ের রূপ তো তোমার মনের আয়নাতেই ধরা থাকে, সেই মা মৃত্যুর পর কি অসুন্দর হতে পারে? যিনি আজীবন তোমার মঙ্গল কামনা করে এসেছেন, মৃত্যুর পর কি তিনি হানিকর হতে পারেন? তোমরা তো আজ শিক্ষিত। তবে তোমাদের মন মানসিকতা এতো বিকৃত কেন? যদি ভূতেদের ভালোইবাসো, তবে তাদের যথাযথ সুন্দর রূপদান করো। সুখপাঠ্য হয়ে উঠুক গল্পকথাও। আর নাহলে আমাদের নিজেদের স্থানেই থাকতে দাও, অশ্রদ্ধার পাত্র বানিয়ো না দয়া করে।”
হঠাৎই ঘুমটা ভেঙ্গে গিয়ে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে দেখি, অসমাপ্ত ভূতের গল্পের বইটা পাশে পড়ে আছে, আর বইয়ের মলাটে বিকৃত ভূতের অবয়বে টাটকা কয়েকবিন্দু তপ্ত অশ্রু পড়ে আছে।
সত্যিই কোনো যুতসই উত্তর খুঁজে পেলাম না প্রশ্নগুলোর। শিক্ষিত মানুষ হিসেবে খুব লজ্জা বোধ হলো, নিজের কাছে নিজেই কুঁকড়ে গেলাম যেন। ভয়টা মুহূর্তে বিবেকদংশনে পরিণত হলো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।