• Uncategorized
  • 0

হৈচৈ গল্পে সুপ্রিয় চক্রবর্তী

ভূত? নাকি নয়?

জঙ্গল, নদী, কিছু পাহাড়ি আঁকাবাঁকা ঝর্ণা আর দুটো মন্দির নিয়ে এই ছোট্ট গ্রাম, তাবাকোশি। পুজোয় ভ্রমণ মানেই এমন এক জায়গা খুঁজে বের করা যেখানে মনোরম পরিবেশ আর পছন্দ মতো খাবার পাওয়া যাবে. গতবছর অনেক খোঁজাখুঁজির পরে এই গ্রামটার সন্ধান পেলাম; যথারীতি, প্লেনের টিকিট কাটলাম আর একটা হোমস্টে বুক করলাম।
কেন মশাই, হোটেল পেলেন না?
না, এইসব গ্রামে হোটেল থাকে না. আর ওই আগের বছর অতিমারীর প্রকোপ মনে নেই? পাহাড় বন্ধ, সমুদ্রের ট্রেন নেই, হোটেল বন্ধ, গাড়ি ভাড়া দ্বিগুন…
আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি, এবার আসল কথায় আসুন.
কি শুনতে চান?
ওই কটা ভূত ? এবার কি পাহাড়ি ভূত না কি সাহেব ভূত ? কি দেখলেন?
এই হলো মুশকিল, বলছি পাহাড়ের কথা, আপনি চলে গেলেন ভূত কের্তনে…
উঠি তাহলে? এই গল্পে যখন ভূত নেই তখন শুনে লাভ নেই. ওই গ্রামে গিয়ে ঘুরে আসবো, তাহলেই হবে।
এই হলো মুশকিল, এই গল্পে ভুত আছে। কিন্তু সেই প্রসঙ্গে আসার আগে একটু ভূমিকা দেব না !
না, দেবেন না, সরাসরি ভূত প্রসঙ্গে আসুন।
আচ্ছা বেশ, তাহলে শুধু ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা শুনুন।
তখন প্রায় সন্ধে, তাবাকোশিতে পৌঁছে সুব্বার সাথে কথা বলছি।
বুঝেছি, তাহলে এবার নেপালি ভূত ।
আগে শুনুন, আরে বাংলার পাহাড়ে খুব কম সংখ্যক নেপালি আছে। আপনি শুনেছেন যে দার্জিলিং বা কালিম্পঙে যারা থাকে তারা পাসপোর্ট নিয়ে ঘোরে? তারা ভারতীয়, নেপালের বাসিন্দা নয়। এবার শুনুন ভালো করে, তার পর কথা বলবেন।..
সুব্বা হলো টি ভিলেজ হোমস্টের মালিক। সুব্বা বললো পরের দিন সকালে আমরা আশেপাশে ঘুরে দেখতে পারি। এখন, সন্ধ্যেবেলা জঙ্গলে না বেরোনোই ভালো। কটেজের বারান্দায় বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, পাহাড়ে সন্ধ্যে হয় হঠাৎ করে, সে এক দারুন অভিজ্ঞতা।
বুঝলাম, তাই ভাবছিলাম, ষ্টার হোটেল না পেলেও, কটেজ একটা থাকবে নিশ্চই।
গল্পটা শুনবেন, না কি শুধু টিপ্পনী করবেন?
আচ্ছা, বলুন বলুন…
সুব্বার কটেজের পাশ থেকে একটা ছোট নালা বয়ে গেছে, সুব্বা ওটাকে ঝর্ণা বললেও, ওটা আসলে পাহাড়ি নালা। কিন্তু বেশ গর্জন আছে, সারা রাত ঝর্ণার আওয়াজ ঘরের ভিতরে ঘুরপাক খেতে থাকলো। বেশ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। রাতে শুয়ে ভাবছি, কাল সকালে কোথায় যাওয়া যায় ! এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। জন্তু-জানোয়ারেরা দরজায় টোকা মারে না, সেইটুকু সৌজন্যবোধ তাদের নেই। আমি উঠে দরজা খুললাম, দেখি ডোডো দাঁড়িয়ে । ডোডো কাকে বলে জানেন? ডোডো মানে দাদা, অথাৎ বড় ভাই।
প্রথমে, ডোডো কে দেখে বেশ ভয় পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম কি চাই ?
ডোডো বললো, সুব্বা আমাকে ডাকছে। নালার পাশে ও অপেক্ষা করছে। অনেকদিন পরে, ভাল্লুক দেখা গেছে নালার পাশে, আমি যদি তার ফটো তুলতে চাই, তাহলে যেতে পারি। কিন্তু টর্চ জ্বালানো চলবে না।
কোনোমতে একটা শাল মুড়ি দিয়ে ছুটলাম। গিয়ে দেখি, সুব্বা নালার পাশে একটি গাছের আড়ালে বসে আছে, আমাকে দেখে ইশারা করলো। আমিও আস্তে আস্তে গিয়ে বসলাম ওর পাশের পাথরটায়।
চারিদিকে ঝিঁঝির ডাক, জলের প্রবল আওয়াজ, আর দূরে এক কালো ছায়া ঝর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে জল খাচ্ছে। সুব্বা আমাকে বসতে বলে, উঠে গেলো। বললো টর্চটা নিয়ে আসছে। আমি অবাক হলাম, কি অদ্ভুত, আমাকে টর্চ আনতে বারণ করে, নিজে চললো টর্চ আনতে। সুব্বা চলে যাওয়ার পর অনেকক্ষন বসে রইলাম, কিন্তু ফটো তুললাম না। কখন যে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গেলো, বুঝলাম না। ঘাড়ের কাছে গরম কিছু একটা অনুভব করে উঠে বসলাম। দেখি, ভাল্লুকটা আমার পাশে দাঁড়িয়ে। কি করবো বুঝতে না পেরে কোনোমতে উঠে দৌড়ালাম, আর শ্যাওলায় পা ফসকে পড়লাম নালার ভিতর। মাথায় একটা বড় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারালাম।
আরে মশাই, আপনার এতবড় বিপদের কথা আমরা জানি না তো !
কি করে জানবেন ! একটু আগে কলকাতায় ফিরলাম সুস্থ হয়ে।ঘরে বসে কি করবো, তাই ভাবলাম আপনার বাড়িতে বসে একটু গল্প করে যাই।
ভালো করেছেন, কিন্তু আপনি এখন কেমন আছেন ?
ভালো আছি, বেশ ভালো। এখন উঠি, কাল সকালে একবার বাড়িতে আসবেন।
কালকে কি আছে আবার ? কেউ আসছেন ?
হ্যাঁ, কাল আমার শবদেহ আসবে বিশেষ বিমানে। বন্ধু হিসেবে আপনার থাকা একান্ত কাম্য।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।