গদ্যের বড়দিনে শ্রীতন্বী চক্রবর্তী

বড়দিন আর রডোডেনড্রন বিকেলগুলো

যে দুপুরগুলো যাজক হয়ে পানকৌড়ি ডুব দেয় গির্জার আকাশে, যে বিকেলগুলো পার্ক স্ট্রিটের খোলা আকাশের নিচে আমার কলেজবেলার রোদ মেখে ঈর্ষাকাতর হতো, প্রেসিডেন্সির ফুটপাথ-ঘেঁষে কলকল করতে করতে ছুটতাম ক্লাসের বাইরের আকাশটাকে ছুঁয়ে ফেলবো ঠিক বড়দিনের মতো করেই, এই ভেবে, সেই বিকেল-আর দুপুরগুলোই এখন কেমন চোখরাঙানো, স্কারলেট-লাল বোগেনভিলিয়ার ছুতো খুঁজে আড়ি পাতেনা আমি কবে স্বপ্নগুলোর কাছে ফেরত যাবো সেটা খোঁজ নিতে। আমি কেমন আছি? তোমার জন্য অপেক্ষার অবসান জানতে চাইবোনা, মনে আছে তো? আমার বড়দিন কেমন? তোমাকে ছাড়া রডোডেনড্রনগুলো পাহাড়েই রংমিলান্তি খেলে, ঠিক সেই বিকেলের অস্তরাগে যখন খ্রীষ্টমাস আলো ফুটে ওঠে, আর বৌদ্ধিক ধাতু-ঘন্টার অনুরণন ছড়িয়ে যায় পাহাড়ি মেঘমালার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, ঠিক সেই সময় আমার বড়দিন ফুঁপিয়ে কাঁদে, এক চিলতে হেসে ফেলি ঠিক কান্না-ভেজা, কাজল-বোনা দৃষ্টিকটু প্রেম-বিরহে।
বড়দিন এখনো আসে, ঠিক যেমন রুক্ষ মাঠের, কাঠ-গনগনে, চুল্লি-দুপুরে সর্ষেফুল-রোদ সম্বল করে তোমার হাত ধরে ফেলতাম, চিনে নিতাম কোনটা বসন্তবৌরি, আর ঠিক কিভাবে দুপুরের মিঠে-জল পান করে মাছরাঙা, নীল-সবুজ ওর ডানা, আর দূরের দিকভ্রান্ত মেঠো বিকেলের সুর তখন আমি-তুমিতে একাকার হয়ে যেত। আমি এখনো দিন-পান করি, রাত্রি-যাপন আর বড়দিনের বেলুন-আলো-আনন্দের উষ্ণতায় তীব্র থেকে তীব্রতর ভালোলাগা খুঁজতে যাই, ক্লান্তির ভেজাল মেখে, শহুরে রগড়ের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে বিরাজ করি হুডখোলা, স্নায়বিক বিলাসযাপনে, পাঁচতারার খাঁজকাটা পাঁজরাগুলোর সাঁঝবেলাতে ইচ্ছে হলেও আমার পুরোনো যীশুকে খুঁজতে যাইনা, চিঠি লিখি মনে মনে, কলমের কালিও বোধহয় আজ নিঃশেষিত। চেয়ারের হাতলে সংযত শীতলপাটি-বড়দিনের মুহূর্ত!
বড়দিন কি কবিতা চেনায়? সোয়েটারে বুনে দেয় তোমার নামের টুং-টাং শব্দ? মার্বেলের ঘুরন্ত পরী আর অবিন্যস্ত জীবনের উড়ন্ত ফরমায়েশ, এগুলো নিয়েই কেমন যেন দোলাচলে ভুগি, শতছিন্ন মোজাটা মনে হয় পড়েই আছে ঘাসবিন্দুতে, অবহেলায়, এখনো এক পা দিয়ে রেখেছি শেষ ট্রামের পাদানীতে, যদি আবার গল্প তৈরী করে মাছরাঙা, মিঠে-জল, দ্বারকা-নদী আর যীশু! কি জানি!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।