কালীঘাট পার্কের পিছনে নির্জন ফাটক দিয়ে ঢুকলে বিরাট সমাধিস্থল দেখা যায়।টিপু সুলতানের আত্মীয়দের সমাধিস্থল রয়েছে। টিপু সুলতান জাহাজে করে ফরাসি অস্ত্রশস্ত্র আনিয়েছিলেন।শেরালিঙ্গট্রমের যুদ্ধে টিপু মারা যান। ব্রিটিশ সৈন্য অনেক বেশি থাকার জন্য টিপু যুদ্ধে হেরেছিলেন। টিপুর দুই ছেলে আনোয়ার শাহ্ আর গোলাম মহম্মদ শাহ শিক্ষিত ও রুচিবান মুসলমান ছিলেন।
কলকাতার সতীশ মুখার্জি রোডের আশেপাশে এক বিরাট জনবসতি গড়ে উঠেছে। অফিসের কাজে বিকেলবেলা আমি আর অজয় একটা লজে ঘর ভাড়া করে থাকলাম। আজকের রাতটা কোনোরকমে কাটিয়ে তারপর আগামীকাল অফিসের কাজ সারা যাবে। এই মনে করে আমরা হোটেল থেকে বিরিয়ানি আনালাম। অজয়ের খুব প্রিয়।
খাওয়া দাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে ঠিক রাত বারোটার সময় অফিসের ফাইল রেডি করে আমরা শুতে গেলাম।আমার আজকে ঘুমোতে ইচ্ছে হলো না। এক স্বর্গীয় চাঁদের আলোয় আজকের রাতটা আরও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
হঠাৎ আমি দেখলাম সমাধিস্থলের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আলখাল্লা পরিহিত এক মূর্তি। আজ সন্ধ্যাবেলায় লজের দারোয়ান বলছিলো,রাতে শুয়ে পড়বেন বাবু। এদিকে বারান্দায় আসার প্রয়োজন নেই।
তারপর আমি অজয়কে ডেকে তুললাম। অজয় বললো,এ নিশ্চয় গোলাম মহম্মদ শাহের অতৃপ্ত আত্মা। চারদিকে বট, অশ্বত্থের ঝুরি নেমেছে। আমাদের ভয় লাগছে না তবু হাড়ের ভিতর দিয়ে একটা ঠান্ডা অনুভূতি খেলে চলেছে।
আমরা দুজনে একবার এক প্রত্যন্ত গ্রামের পোড়ো বাড়িতে দু রাত কাটিয়েছি। ভ্রমণ আমাদের রক্তে মিশে আছে। সুযোগ পেলেই অফিসের কাজে হোক কিংবা ছুটিতে আমরা ঘুরতে চলে যাই বাংলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। এই বাংলার বাতাসে মিশে রয়েছে ঐতিহাসিক অনেক কান্ড যা খুঁজলে এক মহাভারতের আকার নেবে।সেখানে আমরা এই আল্খাল্লা পরিহিত সুলতানের সাজ দেখেছিলাম। হয়ত এর সঙ্গে তার কোথাও মিল আছে।
খোঁজ নিয়ে জানলাম টিপু সুলতান একবার শিকারে এসে এই জঙ্গলে আস্তানা গেড়ে এই বিরাট সৌধ তৈরি করেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে গ্রাম। গ্রামের সমস্ত সুযোগ সুবিধা সুলতানের দয়ায় হয়েছিলো।রাস্তাঘাট,হাট,মাঠ সর্বত্র এক উন্নয়নের জোয়ার ছিলো। তারপর কালক্রমে এই পুরোনো বাড়ি ভগ্নাবশেষে পরিণত হয়েছে।আমি আর অজয় এই বাড়ির পাশের বাড়িতে এক রাত কাটিয়েছিলাম। আজ কলকাতা এসে সেই কথা খুব মনে পড়ছে।
গভীর রাতে আলখাল্লা পরিহিত সুলতান ধীরে ধীরে কবরের আশেপাশে ঘুরতে লাগলো।তারপর নর্তকি এলো,গান,বাজনা হলো।জানলা খুলে আমরা দুজনেই অই দৃশ্য দেখে ভয়ে কম্পমান,এই যুগে নবাব এলো কোথা থেকে। হঠাৎ কি করে গজিয়ে উঠলো নৃত্যশালা। ভয়ে আমরা দুজনেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। সকালে উঠে দেখলাম, ফাঁকা জায়গা। কোথাও কিছু নেই। তাহলে এটা নিশ্চয় কোনো ভূতের কারসাজি। অই মাঠের কাছে বয়স্ক লোকদের জিজ্ঞাসা করে জানলাম,এখনও নবাব প্রতি রাতে নৃত্য আর সংগীতের মেহফিল বসান নিয়মিত।