সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব – ১৮)

তান্ত্রিক পিসেমশাই ও আমরা দুজন

২৭
রতন বললো, এগুলো সব জানলেন কি করে? আপনাকে প্রণাম।আমরা আপনার সঙ্গ পেয়ে ধন্য হয়েছি।
পিসেমশায় বললেন, এর জন্য বিভিন্ন বই পড়তে হয়। মোবাইলে টিকটক আর ভিগো না দেখে গুগুলে সার্চ করলে অনেক পন্ডিতের লেখা থেকে এইসব জানতে পারবে শিখতে পারবে বিশদে। আমি তো সামান্য কটা কথা বললাম।
অঘোরীরা পূজা করে শিবের। এছাড়াও মৃত্যুর দেবী কালীসাধনাও করে থাকে এরা। বারানসীর অঘোরী মেরোনাথ এক সাক্ষাৎকারে ফটোগ্রাফার এবং লেখক ডাভোর রস্তুহারকে বলেন, “হিন্দুবাদে প্রত্যেকটি প্রভুর একটিমাত্র রুপ থাকে। বিভিন্ন গোত্র বিভিন্ন দেব দেবীর পূজা করে। তাদের মতো করে নৈবেদ্য প্রদান করে। শিব আর মা কালী যখন ভক্তদের কাছ থেকে বলী আশা করে, তখন ভক্তরা কিন্তু তা মান্য করতে নিরুৎসাহিতা দেখিয়ে থাকে। আমরাই একমাত্র গোত্র, যারা মা কালী এবং শিবের আশামতো নৈবেদ্য প্রদান করে থাকি।” পিসেমশাই বললেন, আর এক ধরণের তান্ত্রিকের নাম আছে। শিবরাত্রি পশুপতিনাথের মন্দিরে পৌঁছে গেলেই সাক্ষাৎ হয়ে যাবে অঘোরী সাধুদের সঙ্গে। দুর্গম পাহাড় থেকে এরা একে একে বেরিয়ে আসেন শিব পুজোর জন্য। অঘোরী বলতে মূলত বীভত্‍স আচারে অভ্যস্ত শৈব সম্প্রদায়কে বোঝায় যাঁরা মহাকালের তপস্যায় গভীরভাবে বুঁদ হয়ে আছেন। অঘোরীদের সাধন পদ্ধতি যেমন ভয়ানক তেমনই এরা প্রবল ক্ষমতার অধিকারী। এরা বৃষ্টি বা খরার আহ্বান করতে পারেন যখন ইচ্ছে। ইচ্ছে মতো বদলে দিতে পারেন ঋতুচক্রও। আজও মণিকর্ণিকার ঘাটে অঘোরীদের দর্শন পেতে পারেন আপনিও। যদিও প্রবল শীতের সময় ছাড়া বছরের বাকি সময় হিমালয়ের গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকেন এরা। এদের উপাসনা পদ্ধতিও খুব অদ্ভুত। মল, মূত্র, পশুর মাংস, মানুষের মাংস, মদ সবই কাজে লাগে এই ধরনের তপস্যায়।এরা নোংরা, আবর্জনা থেকে খাবার কুড়িয়ে খেতে ইতস্তত করে না। অস্বাভাবিক খাওয়া দাওয়াই নয়, এরা মৃত দেহের সঙ্গে সাধনার জন্য যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। এরা মৃতদেহ থেকে একধরনের তেল বের করেন যা দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ। টানা ১২ বছর কঠোর সাধনার পর অঘোরী গুরুর আশীর্বাদে নিজের ধর্মীয় যাত্রা শুরু করেন অঘোরী সাধুরা। আর তখনই জন্ম হয় এক চরম সাধকের। যাঁদের বস্ত্র হয় মৃত ব্যক্তির জামা-কাপড়ের ছেঁড়া অংশ। শরীরে থাকে মৃত দেহের ছাই। এখানেই শেষ নয়, এমন সাধকদের সারা জীবন একজন গুরুর অধিনে থাকতে হয়। প্রত্যেক অঘোরী সাধু কে একজন গুরুর অধীনে থাকতে হয়। গুরু যা বলেন, সেইভাবে জীবনযাপন করতে হয়। সংগ্রহ করতে হয় মৃতদেহের খুলি, যা তাঁদের সাধনার প্রধান উপকরণ। এরা মন্ত্রোচারণ করতে শুরু করলে শরীরে একজন মানুষকে গায়েও করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
আমি বললাম, পৃথবীর কতটুকু আমরা জানি। পিসেমশাই বললেন, খুব সামন্য অংশ।
রতন বললো, সামান্যই বটে।
২৮
অনেকেই জানেন না, যেমন হরেক কিসিমের সমস্যা আছে তেমনি তার নানা সমাধানও রয়েছে। আর সে সবই হয় মন্ত্রগুণে। তবে মন্ত্রে বিশ্বাস রাখতে হবে। শান্ত মনে জপ করতে হবে। সঙ্গে ধূপ জ্বালাতে পারলে আরও ভালো। তবেই ফল মিলবে। এবং মন শুদ্ধ করতে প্রথমে আরাধ্য দেবতা, গণেশ, গুরুদেব বা মহাদেব-কে স্মরণ করতে হবে।এমনও হয়, দোষ না করেও আপনি দোষের ভাগীদার হয়ে যান। আর অকারণে লাঞ্ছিত হওয়ায় মন অস্থির হয়ে ওঠে। এই অসুবিধে দূর করতে জপ করুন ‘ওঁ হ্রিং ঘৃণীঃ সূর্যায় আদিত্য শ্রী ওঁ হ্রিং জূং সঃ ক্লীং ক্লীং ক্লীং’।কোনও গ্রহের প্রভাবে সব সময় ভয় বা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় মন ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে। এমন আশঙ্কাও হয় যে, ঘর থেকে বের হলেই ভয়ানক ক্ষতি হবে। তখন ঈশ্বরকে স্মরণ করে জপ করবেন ‘ওঁ জূং সঃ পালয় পালয় সঃ জূং ওঁ ওঁ ওঁ’।কর্মক্ষেত্রে উন্নতি চাইলে জপ করুন, ‘ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ,তত্সবিতুর বরেণ্যং,ভর্গো দেবস্য ধীমহি, ধিয়ো যোনঃ প্রচোদয়াত্‍ ক্লীং ক্লীং ক্লীং’।কোনও অঘটনের সম্মুখীন হয়ে যদি মৃত্যুভয় মনে আসে প্রথমে বলুন, ‘ওঁ হ্রিং জূং সঃ’। তারপর বলুন, ওঁ ত্রম্বকং যজামহে,সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্, উর্বারুকমিব বন্ধনান্, মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাত্’।।মন যখন প্রচণ্ড চঞ্চল হয়ে ওঠে. কিছুতেই বশে থাকে না, তখন শান্ত করতে এই মন্ত্র জপ করুন, ‘ওঁ দ্বৌঃ শান্তিরন্তরিক্ষক্ষং শান্তি পৃথ্বী শান্তিরাপঃ শান্তিরোষধয়ঃ শান্তি, বনস্পতয়ঃ শান্তির্বিশ্বেদেবাঃ শান্তির্ব্রহ্ম শান্তিঃ, সর্ব শান্তিঃ শান্তিরেব শান্তিঃ সা মা শান্তিরেধি,ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি’।হতে হতে কোনও হওয়া কাজ মাঝপথে আটকে গেলে জপ করুন, ‘দেহি সৌভাগ্যমারোগ্যং দেহি দেবি পরং সুখম,রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি নমস্তুতে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।