অণুগল্প সিরিজে সুদীপ ঘোষাল – ৯

লকডাউন ডায়েরী

২৩.
কোভিড নাইনটিন কেড়ে নিল দাদুর জীবন। লাঠিটা  দাদুর বাবার লাঠি। যত্ন করে তুলে রাখা আছে বাঙ্কে। কার জন্য?  বৃদ্ধ আমার জন্য। কত সুখস্মৃতি জড়িয়ে লাঠির অঙ্গ প্রত্যঙ্গে। দাদামশাই লাঠি ধরে পথ চলতেন। লাঠিকে বলতেন, বাবা ভাল করে ধরে রাখিস। ফেলে দিস না এই বুড়ো বয়সে। কোমর ভেঙ্গে যাবে তাহলে। বিশ্বস্ত লাঠি তার দায়ীত্ব পালন করেছে পলে পলে। এবার তার নাতির পালা।
নাতি বয়স বাড়লেই পাবে তিনপুরুষের পরশ…
২৪.
শরীরটা আছে।সে করোনার ভয়ে ব্যস্ত।দেহের অণু পরমাণু   অংশ ভাইরাস ভয়ে ভিজে।কিন্তু মন যে শুষ্ক।মনের শূণ্য অংশও অধিকারে নেই তার।সে ছুটেছে পদ্মবনে। সেখানে তার রূপ দর্শনে মোহিত তার মন। এদিকে করোনাভিত সে খবর রাখে না। ভিজে ভিজে ভালোলাগা শেষে বিরক্তির বিশ্রাম।আর মনলোভি নাগর দখল করে নেয় প্রিয়ার মন। শরীরে তার আসক্তি নেই।
ক্ষণিকের আনন্দ নয়, অসীম আনন্দের অনুসন্ধানী তার মন। এখানেও সংযমের কাছে কোভিড পরাস্ত।
২৫.
এক ছিলো রাজা।সে প্রজাদের রক্ত খেতো।তাদের পরিশ্রমের ফসলের সবটুকু হরণ করে নিত।প্রজারা বেঁচে থাকার জন্য করোনার ভয়ে  পালিয়ে যেতে  শুরু করলো।শয়তান, রাজাকে অন্ধকার জগতে নিয়ে যেত।সে ঝগড়া কলহ নিয়েই ভালো থাকত।প্রজারা তার অন্ধকারের দাসত্ব স্বীকার না করলেই তাকে সুস্থভাবে বাঁচতে দিত না।আলোর পরশ সহ্য করার ক্ষমতা রাজার ছিলো না।অত্যাচারী,ভন্ড ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠলো। রোগীদের শয়ে শয়ে মারতে লাগলো।
একদিন প্রজাদের প্রার্থনায়  এলো আলোর ফেরিওয়ালা।তার আলোতে আলোকিত প্রজারা তার কাছে ভালো পরামর্শ পেতো।মানুষকে শান্তিতে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতো সে।  একদিন আলোর ফেরিওয়ালাও বন্দি হলো রাজার কারাগারে,নিষ্ঠুর অন্ধকারের অন্তরালে।
 রাজার কর্মচারিরাও আলোর ফেরিওয়ালার প্রেম পরশে চেতনা ফিরে পেলো।তারা প্রতিজ্ঞা করলো,আমরা বাঁচার মত বাঁচবো।শয়তানকে বন্দি করবো।
রাজা একা হয়ে পড়লো।কারণ আলোর পরশ পেয়ে সকলের করোনার কালো অন্ধকার দূর হয়েছে।তারা ভালো মন্দের পার্থক্য বুঝতে পেরেছে।সুস্থ জীবনের সন্ধান পেয়েছে। তারা বুঝলো, ভয় নয়, চেতনার প্রয়োজন এই রোগী রাজাকে বন্দী করতে।
অবশেষে অত্যাচারী ভাইরাস রাজা আলোর কাছে পরাজিত হলো।আলোর প্রাচুর্যে অন্ধকারের রাজার অন্তর আলোকিত হলো।
রাজা বুঝতে পারলেন,শান্তিতে বেঁচে থাকার  জন্য  পৃথিবীতে আলোর বিশেষ প্রয়োজন। ভাইরাসের রাজা পরাজিত হল।

চলবে…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।