সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৬০)

ষাট

ডায়েরিটা তাড়াতাড়ি খুব ভালোভাবে পড়া প্রয়োজন। এখন এটাই আমার সবথেকে প্রয়োজনীয় কাজ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ডায়েরির মধ্যেই শ্রেয়ানকে উদ্ধারের হদিশ পাওয়া যাবে। আমার এই বিশ্বাসের কারণও আছে । এই ডায়েরিটা আমার শত্রুপক্ষ আমাকে অনেক প্ল্যান মাফিক পৌঁছে দিয়েছে । কিন্তু ডায়েরির মধ্যে থেকে হদিসটা খুঁজে পেতে ভালো করে মাথা খাটাতে হবে । আর তার জন্য ব্রেনের একটু ডোপিং দরকার । আমি তো আমাকে চিনি। এক দু দান দাবা খেলতে পারলে আমার ব্রেনের ডোপিংটা ভালো হবে । তাই তো অনিকেতকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি । অনিকেত যদি সত্যি শ্রেয়ানের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে থাকে তাহলে ওর সঙ্গে খেলে আনন্দ পাওয়া যাবে । ব্রেনের নারিশমেন্ট ভালো ভাবে । বেডরুম থেকে দাবার বোর্ড আর ঘুঁটি নিয়ে এসে ড্রয়িংরুমে বসলাম । ঘরটা আলুর চপ আর বেগুনীর গন্ধে ম ম করছে । বাল্মীকিকে দেখলে মাঝে মাঝে আমার “গল্প হলেও সত্যি” সিনেমার রবি ঘোষের কথা মনে পরে ।এত চট জলদি ও সব কিছু তৈরী করে সার্ভ করে যে আমি খুব অবাক হয়ে যাই । আমাকে ও অনিকেতকে বাল্মীকি দুকাপ ধোয়া ওঠা কফি দিয়ে গেল । আমি দাবার বোর্ড টা কাঁচের টেবিল এ পেতে অনিকেতকে বললাম, “কি হে এক দান হবে নাকি?”অনিকেত অন্যমনস্ক ছিল । তবুও মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো । জিজ্ঞাসা করলো,”শ্রেয়ান এখনও ফেরেনি?”আমি ঘাড় নেড়ে ফেরেনি জানিয়ে দিলাম। আমার দাবার বোর্ড টা বোর্ড নয় ওটা কাপড়ের তৈরি ।অনেকটা বসার আসনের মতো । রোল করে রাখা থাকে । অনিকেত বোর্ডটা দেখে খুব উৎসাহিত হল ।আর ঘুঁটিগুলো দেখে ওর এতো ভালো লাগলো যে বলেই ফেললো “বাঃ বেশ সুন্দর তো ঘুঁটি গুলো “। আমার ঘুঁটি গুলো সত্যি করেই দেখতে ভালো । সব ঘুঁটি গুলোই স্বচ্ছ একরকম পদার্থ দিয়ে তৈরি । সাদা ঘুঁটি গুলো একদম কাঁচের মতো । কালো ঘুঁটিগুলো যেন কোনো কালচে গগলসের আড়ালে থাকা চোখের মতন । বোর্ড ও ঘুঁটি বাবার ছিল । নিজে হাতে ধরে এতেই প্রথম দাবা খেলা শিখিয়েছেন । বাবার সঙ্গ আমি যেটুকু পেয়েছি তার বেশির ভাগটাই দাবার বোর্ডে । অনিকেতকে বললাম,”এই দাবার বোর্ড ও ঘুঁটি গুলো বলতে পার আমার পৈতৃক সম্পত্তি । বাবার পছন্দেই সব অর্ডার দিয়ে বানানো । আমার বাবার খুব শখ ছিল দাবা খেলার ।
আমাদের খেলা শুরু হল। কিছুক্ষন খেলা চলার পর বুঝলাম অনিকেত সত্যিই পাকা খেলোয়াড় । শ্রেয়ানের খেলার ধরণ এটাকিং । আমি সাধারণ ডিফেন্সিভ খেলি । অনিকেতের খেলাটাও আমারই মত । সময় একটু বেশি নেয় কিন্তু একটা ঘুটিকেও হেলায় হারায় না । ওর খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছে ও আমার চাল গুলো ভালো করে এনালাইসিস করে নিজের চাল দিয়ে সেগুলো
আটকাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে নিজের স্ট্রাটেজি অনুসারে চলছে । খেলতে খেলতে কখন যে রাত সাড়ে দশটা বেজে গেছে খেয়ালই নেই এখনও একটা খেয়ালই শেষ হল না । বাল্মীকি এসে টিপ্পনি কেটে গেল ।”আগে খেয়ে নিন তার পর সারা রাত ধরেই খেলুন “। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম,” বোঝা যাচ্ছে এই গেমের ফয়সালা হবেনা । ধরে নাও ম্যাচ ড্র । অনেক রাত হয়ে গেছে ছল খেয়ে নি “। অনিকেত বাধ্য ছেলের মতো ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো । দাবা খেলা ব্ন্ধ করে দুজনে খেতে বসলাম । খেতে খেতে ভাবছি অনিকেতকে রেক্ট্যাঙ্গুলার কোডের ধাঁধার কথা বলবো কিনা
। কিন্তু আবার ভাবলাম লুলিয়া যা খেলে দেখাচ্ছে আর কাউকে বিশ্বাস করা উচিত হবে না । হয়তো অনিকেতও লুলিয়ার মতো শত্রু পক্ষের একজন ভেখধারী বোরে । অনিকেত চুপ চাপ ঘাড় গুঁজে খেয়ে যাচ্ছে । ও যে গ্রামের ছেলে ওর খাওয়া দেখলেই বোঝা যায় । জিজ্ঞাসা করলাম, “শ্রেয়ান তোমাকে কবিতার একটা ধাঁধাঁ দিয়েছিল না? ওটা তুমি ঠিকই সল্ভ করেছো । উত্তরটা আমার জানা। অনিকেত হঠাৎ বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠল । বলল “ও বলেছিলো এটা পারলে আরেকটা সাংকেতিক ধাঁধাঁ দেবে “। আমি একথার উত্তর না দিয়ে হাসি মুখে বিদায় জানালাম ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।