সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৫৩)

তিপ্পান্ন

বড় আশা ছিল ডঃ চোঙদারের বাড়িতে টাইম মেশিন জাতীয় কিছু পাব অথবা সি. ডি. র ফোল্ডারের রেক্টাঙ্গুলার হরফগুলোর অর্থ উদ্ধার করার চাবি কাঠি। লুলিয়ার ছেলেকে আনতে যাবার দেরি হয়ে যাবে তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম । বাড়িতে ফিরতেই বাল্মীকির হাজারো প্রশ্ন । রাতে কেন ফিরিনি? ফোন করে খবর দিইনি কেন? আরও কত কি! কিন্তু কাল রাতে যে স্বর্গ সুখের সাগরে ডুবেছিলাম, তখন তো আর বাল্মীকির বোয়াল মাছের মতো মুখটা মনে পড়ার কথা না। মনেও পড়েনি ।যাইহোক ওকে কোনোরকমে ম্যানেজ করলাম । ঘরে ঢুকে ভাবলাম একেবারে স্নান করে নিই। সারা গায়ে এখনও লুলিয়ার সুন্দর গন্ধ ছড়িয়ে আছে । বাল্মীকির নাকে গেলে হয়তো এটা নিয়েও প্রশ্ন করবে । মাঝে মাঝে এমন গার্জেন গিরি করে বিরক্তিই লাগে । স্নান করে এসে বেশ ঘুম পাচ্ছে। বাল্মীকিকে ডেকে বললাম আমি এখন ঘুমোবো । ও যেন আমাকে না জাগায় । বিছানায় শুতেই ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলাম । কতক্ষন ঘুমিয়েছি খেয়াল নেই । ঘুম ভাঙলো মোবাইল ফোনের আওয়াজে । মোবাইল ফোনের রিংটোনটা শুনে ধরমর করে উঠে পড়লাম । কারণ ওই রিং টোনটা শ্রেয়ানের নাম্বারের সঙ্গে সেট করা ছিল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ডিসপ্লে তে শ্রেয়ানের নাম । আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম । ফোনটা রিসিভ করে বললাম, “হ্যাঁ বল শ্রেয়ান কেমন আছিস তুই? কোথায় আছিস এখন?” আরও প্রশ্ন করার আগেই একটা অপরিচিত কণ্ঠের নোংরা হাসি ভেসে এলো ।বললো, “শ্রেয়ান ভালো নেই । আপনার মতো বন্ধু যার সে ভালো থাকবে কি করে”। এতোক্ষনে গলাটা চিনতে পারলাম । প্রাইভেট নাম্বার থেকে এই লোকটাই আমাকে ফোন করেছিল । আমি কঠোর গলায় বললাম,”কে আপনি? শ্রেয়ানকে ফোনটা দিন “। লোকটা আমাকে ব্যাঙ্গ করে বলল,”ফোনটা দিন এরপর বলবেন আর একটা মেয়ে দিন ফুর্তি করবো । মগের মুলুক নাকি?”আমি খেপে গিয়ে বললাম,”মুখ সামলে কথা বলুন, কি যাতা বলছেন?”লোকটা শান্ত গলায় বলল,”শুনুন বেশি ন্যাকামো করবেন না । কাল রাতে কোথায় ছিলেন, কাকে নিয়ে ফুর্তি করেছেন সব আমরা জানি । তবে হ্যাঁ, যা খুশি করুন তাতে আমার আপত্তি নেই ।কিন্তু শরীরে যে অঙ্গটা কাজে লাগালে বন্ধুর জীবন বাঁচে সেটা বাদে অন্য অঙ্গ বেশি কাজে লাগলে আরও তো ধৈর্য্য কমে যায় তাই না?”আমার কানদুটো ভীষণ গরম হয়ে গেল । মাথার শিরা দুটো দপ দপ করছে । লোকগুলো প্রতিদিন সর্বদা আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে চলেছে । লোকটা আবার বলল,”আমি গোকুল কুন্ডু । আর তিনদিন সময় দিলাম আপনাকে । ধাঁধার সমাধান না পেলে আমরা শ্রেয়ানকে ফেরত দিয়ে দেব আপনাকে, তবে প্রাণটা কেরে নিয়ে । ঠিক তিনদিন । কিপ ইট ইন ইওর মাইন্ড মিঃ অর্ক “। বলে লাইনটা কেটে দিলো । আমি এবার বেশ ভয়ে পেয়ে গেলাম । তিনদিনে কি আমি পারবো? না পারলে সত্যি কি ওরা শ্রেয়ানকে মেরে ফেলবে? সঙ্গে সঙ্গে আমি আর্যমকে ফোন করলাম ।
• ফোনে আমাকে গোকুল কুন্ডু নামের কোনো ব্যাক্তি তিনদিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ।, ধাঁধাঁ গুলো সমাধান করার জন্য সেসব কথা বললাম, ও শুনে বলল যে শ্রেয়ানের কল ট্রেস করতে বলবে । আর পুলিশ ফাইল এ গোকুল কুন্ডু নাম কারোর রেকর্ড পাওয়া যায় কিনা সেটাও খোঁজ নেবে সে বললো ।আরও বলল যে সেই ধাঁধাঁ গুলোর জন্য এতো কিছু ঘটেছে সেগুলো একটা কপি দিলে ওকে ও ডিপার্টমেনটাল এক্সপার্ট দের সমাধান করতে বলবে । এই প্রস্তাবটা আমার একেবারে পছন্দ হল না । আমার বুদ্ধির ওপর আমার সম্পূর্ণ আস্থা আছে । তাছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমানদের ক্লাব মেনসার সদস্য, আমি কিনা ধাঁধাঁ সমাধান করতে দেব সামান্য ডিপার্টমেন্টাল এক্সপার্টদের । আমার ইগোতেও লাগলো । তাই আমি আর্যমকে একটা অজুহাত দিয়ে প্রস্তাবটা খারিজ করে দিলাম । ফোন রেখে মনে মনে নিজেকে বললাম, “কাউন্টাডাউন বিগিনস মিঃ অর্কবিক্রম চৌধুরী, মেম্বার অফ মেনসা । বাহাত্তর ঘন্টার চ্যালেঞ্জ । যদি না পার তবে তুমি ‘মেনসার ‘সদস্য হওয়ার অযোগ্য ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।