সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৪৭)

সাতচল্লিশ

আর্জমা বিকেলে নিজে থেকেই ফোন করল। বলল,যে আজ নাকি মন্ত্রীর রিভিউ মিটিং -এ ব্যাংক ডাকাতির কথা উঠেছে। গোটা ডিপার্টমেন্টকেই তিরস্কার করেছে।বাস্তবে তো কিছুই এগোয়নি। আর কটা খবরও দিলো যে প্রাইভেট নাম্বার ট্রেস করা যায়। তবে তার জন্য উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে রিটন অ্যাপ্লিকেশন দিতে হবে। মানে ওয়ারেন্ট না থাকলে টেলিকম কোম্পানি কোনো কাস্টমারের নাম্বার জানতে দেয়না।আর্জমার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হল যে, রিটন কমপ্লেন করে লাভ হবে না। কারণ বিরুদ্ধ পক্ষ খুব চৌখস আর প্রফেশনাল, তাই দেখা যাবে যে নাম্বারটা কোনো ভুয়ো নাম নেওয়া। বেকার পরিশ্রম আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আর রিটন কমপ্লেন মানেই লোক জানাজানি। আর্জমার সঙ্গে আমার যোগাযোগটাও পুলিশ ডিপার্টমেন্টে জানা জানি হবে। বিরোধী পক্ষও জেনে যাবে। তাই আপাতত প্রাইভেট নাম্বার মানে হুমকি কলের পেছনে ধাওয়া করা স্থগিত থাকলো। কথা শেষ করে আর্জমা ফোন রেখে দিল।
• ফোনটা রেখে একটা কথা মনে হল। শ্রেয়ান কি এই SOAM বা বার্গস্টাইন সন্মন্ধে কিছু জানে? চান্স খুব কম। আচ্ছা ওর দাদার পার্টনার অনিকেত মাইতির সাথে ওর কোনো কথা হয়েছে কি? ওকে একবার ফোন করে দেখলে কেমন হয়! ওকে বরং কাল একবার আস্তে বলি আমার কাছে। সব ধাধাঁ গুলো ওকে একবার শোনাই। যদি কোনো ক্লু বা সমাধান দিতে পারে। এতো সব ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে যাওয়ায় আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে এবং নিজের ওপর কনফিডেন্স হারিয়ে যাচ্ছে। শ্রেয়ান থাকলে আর কাউকে দরকার হত না। হয়তো এতক্ষনে সব সমাধান হয়েও যেত। ওর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে। ভালোকরে ভাবার সময়ও পাচ্ছিনা। খুব সম্ভবত SOAM একটি সংস্থার নাম। এটা আন্তর্জাতিক অথবা জার্মানিতেই কেবল এর অস্তিত্ব। এই সংস্থার চিফ একজন জার্মান। এই সংস্থার সিম্বলটা বেশ অদ্ভুত। তবে আমি একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে ওই সিম্বলগুলো কেমিস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। সিম্বলগুলো মানব সভ্যতার অনেক আগের ধারণা বা কনভেনশন এর ভিত্তিতে সাজানো। আমাদের অফিস এর বেতালদাকে একবার ফোন করে দেখলে হয়। বেতালদা হলেন আমাদের অফিসের বড়োবাবু বা হেডক্লার্ক। ভালোনাম গুইরাম বেতাল। ম্যাথামেটিক্স এ এম.এস. সি। হয়তো নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী উনি চাকরি করেননা। উনি বোধহয় এক চাকরিতেই সন্তুষ্ট। কারণ কোনো উচ্চাসা নেই তবে ওনার মতো জ্ঞানী লোক আমি দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। অবশ্য বর্তমানের এই চাকরি করার আগে উনি ভারতীয় নৌবাহিনীতে পনেরো বছর চাকরি করেছেন। আর চাকরি করার পাশা পাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। গত বছর আমাদের ব্যাংকের হয়ে আমরা দুজন অলইন্ডিয়া কর্পোরেট ক্যুইজ কম্পিটিশনে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অফিসিয়ালি ওনার সঙ্গে আমার খুব একটা মেলামেশা না হলেও ক্যুইজ প্রতিযোগিতা কল্যানে ওনাকে খুব কাছ থেকেই দেখে চিনেছি। একজন জুয়েল উনি। জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। আমার মনে হচ্ছে এই SOAM যদি কোনো সংস্থা হয় তালে বেতাল দা নিশ্চই জানবে। শেষ পর্যন্ত ফোনে ধরলাম বেতালদাকে। উনি ফোন ধরেই জিজ্ঞাসা করলেন, “স্যার আপনার কি হয়েছে? শুনলাম আপনার নাকি শরীর খারাপ হয়েছে? দিন দশেক হল অফিসে আসছেন না “বেতালদার প্রশ্ন শেষ হতে আমি হেসে বললাম, “এতো ছেদো খবরও রাখেন আপনি?”অনেক কথা ও হাসির বিনিময়ের পর ওনাকে SOAM এর কথা জিজ্ঞাসা করলাম। উনি শুনে বললেন এরম কোনো সংস্থার নাম উনি শোনেননি। সিম্বলগুলোর বর্ণনা শুনে বললেন যে এগুলো প্রাচীন কালে বিজ্ঞানীরা রসায়ন বা অ্যালকেমিস্টে ব্যবহার করতো। প্রথম সিম্বল অর্থাৎ এর মানে সালফার। দ্বিতীয় সিম্বল মানে বললেন হয় সল্ট বা অক্সিজেন। তৃতীয় সিম্বল মানে এর মানে এয়ার আর চতুর্থ সিম্বল এর মানে মার্কারি। হিসাব মিলে যাচ্ছে। সিম্বলগুলোর যা মানে তার প্রথম অক্ষর গুলো সাজালে সালফারের S, অক্সিজেন এর O এয়ার এর A ও মার্কারির M পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ SOAM। বেতালদা এর বেশি আর কিছু বলতে পারলেন না।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।