একবার অফিসে যাওয়া দরকার একনাগাড়ে এতদিন ছুটি আমি কোনোদিন নিইনি। জয়েন করবো না তবে একবার দেখা দিয়ে আসা দরকার । এতদিন পর যাওয়া মাত্র সকলের হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হল। অফিস ঢোকার আগেই কি বলবো মনে মনে সাজিয়ে নিয়েছিলাম । সেইমতো সবাইকে বললাম এক আত্মীয়ের বিয়েতে গেছিলাম ।সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি । এখনও শরীর ঠিক হয়নি । ডাক্তার বলেছে আরও রেস্ট নিতে । লুলিয়ার বাড়ি থেকেই ডাইরেক্ট অফিস চলে এসেছি । নিজের চেম্বারে ঢুকে নিজের চেয়ারএ বসে বেশ ভালো লাগলো ।কম্পিউটার অন করে দেখি মেইলবক্সে আনরেড মেল গিজ গিজ করছে । নাঃ এখন এগুলো পড়ার দুঃসাহস দেখাবো না । হেড অফিসে আরেক সপ্তাহ ছুটির জন্য একটা মেইল করে দিলাম । নস্করদাকে ডেকে আমাকে চা দিতে বললাম । তারপর ভাবলাম বেতালবাবু এই অফিস এই এসেছে আজ । মাঝে মাঝে ওনাকে অন্য ব্রাঞ্চেও বসতে হয় । লিফটে দেখা হল । ওনাকে আমার কেবিনে একটু সময় করে আসতে বলেছি । কিন্তু আধঘন্টা হয়ে গেল উনি এখনও এলেননা । আমার নিজের পার্সোনাল মেইল গুলো চেক করে নিলাম। এমন সময় বেতালবাবু দরজায় নক করে কেবিনে ঢুকলেন । একমাথা টাক আর এক মুখ হাসি হল বেতালদার বৈশিষ্ট । রোজ দুঘন্টা জার্নি করে অফিসে আসেন । বনগাঁর দিকে থাকেন । ওনার অফিস দোতলায় আর আমার অফিস চারতলায় । বেতালবাবু ঘরে ঢুকে বললেন, “এখন শরীর কেমন আছে স্যার? আর কত কষ্ট দেবেন শরীরটাকে?এবার একটা বিয়ে করুন । যে বয়েসের যা তা না করলে শরীর সঙ্গ দেবে কেন বলুনতো?” বেতাল বাবু খুব রসিক লোক । সুযোগ বুঝে আমায় লেগপুল করে দিলো ।দু একটি নানা কথা বলার পর আমি হঠাৎ বেতালদাকে প্রশ্ন করলাম, “আচ্ছা ফিলসফারস স্টোন কি বাস্তবে হতে পারে?”বেতালদা কথাটা বেশ লাইটলি নিলেন । ওনার জানা নানারকম তথ্য আমাকে জানালেন । কিন্তু তার সব গুলোই গুজব আর ভিত্তিহীন গল্প । সেকথা অবশ্য বেতালদা নিজেই বললেন ।
বেতালদার মুখের দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে বললাম,”বেতালদা আপনাকে কয়েকটা কথা বলবো কিন্তু সেগুলো গোপনীয় । বলে উঠে গিয়ে কেবিনের দরজা লক করে দিলাম ।একটা কগজে ধাঁধার রেক্টাঙ্গেলগুলো কয়েকটা এঁকে ওনাকে দেখিয়ে বললাম, “এই চিহ্ন গুলোর ব্যাপারে আপনার কোনো আইডিয়া আছে?”বেতালদা বললেন,” আরে সাহেব এটাতো আপনারই সাবজেক্ট । আমি রেক্টঙ্গুলার কয়েকটা কোডিং নিয়ে যা শুনেছিলাম তা খুব সম্ভবত অঙ্কের ম্যাট্রিক্স আকারে কোডিফাই করা হয়”। আমি মাথা নেড়ে বললাম, “নানা সেটা আমি জানি । প্যারিডি চেক করা যায় ঐভাবে। কিন্তু এই কোডিং গুলো সম্পূর্ণ আলাদা”। বেতালদা বললেন,”আমাকে একটু খুলে বলবেন স্যার? আমি বুঝতে পারছি কিছু নিয়ে আপনি গভীর ভাবে ভাবছেন । আমাকে পুরোটা বললে হয়তো দুজনেরই সুবিধে হবে”। তারপর ভাবলাম অফিসেও যদি কোনো ট্রান্সমিটার বা কোনো স্পাই ক্যামেরা থাকে? আবার ভাবলাম ক্ষতি কি? এখনও পর্যন্ত আমি যা জানি আমার প্রতি পক্ষও তাই জানে । তাই বেতালদাকে গুছিয়ে সব ঘটনা বলতে শুরু করলাম । আসলে আমি আমার মধ্যে বেশ অনিশ্চয়তায় ভুগছি । তাই আমার বিশ্বস্ত কিছু লোকের কাছে সব কথা জানানো দরকার, যাতে প্রয়োজনে তাঁদের কাছে আমি সাহায্য পেতে পারি । যদি আমাকে মেরেও ফেলা হয়ে তালে যেন কালের গহ্বরে যেন এই আবিষ্কার তলিয়ে না যায় । বেতালদা সব কিছু শুনলেন মন দিয়ে ও বললেন,”স্যার এতো অবিশ্বাশ্য বেপার । এতো কিছু ঘটেছে আপনার জীবনে আমি বা আমার কেউ শুনিনি । ঠিক আছে স্যার আপনি আমার ওপর পুরো নির্ভর করতে পারেন।”অ্যালকেমিস্ট দের ব্যাপারে বেতালদা আরও কিছু আমাকে জানালেন । যদিও ওগুলো আমার কাজে লাগবে না । বেতালদা সিডির ধাঁধাঁ গুলো দেখতে চাইলেন । আমার সঙ্গে নেই বললাম. আমি সিডির কবিতা সল্ভ করেছি সেটা জানালাম না । F, Q, W, X, Z লেটার গুলো দিয়ে ফোল্ডারের কথা বললাম না । আমার সন্দেহ হয়ে আমার অফিস বা আমার কেবিনেও গোপন ক্যামেরা লাগানো রয়েছে । কিংবা দেয়ালের কান আছে । বেতালদা বলল আমার বাড়ি এসে ডায়েরিটা বা সিডিটা দেখতে চান । উনি চলে গেলেন। অফিসেই লাঞ্চ সেরে আমি চারটে নাগাদ বাড়ি ফিরে এলাম ।