সাপ্তাহিক কোয়ার্কো ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৪৪)

চুয়াল্লিশ

চিরকুটের কথা গুলো পরে প্রথমে রাগই হয়েছিল। শ্রেয়ান এই ছেলেটাকে আমার কবিতার কথা বললো কেন? আমার অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে তো বলা অন্যায়। তাছাড়া বিশেষ করে এই ধাঁধার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। তারপরে ভাবলাম শ্রেয়ান তো আমার উপকারই করতে চেয়েছিল। শ্রেয়ান জানে ধাঁধাঁটা এখনও সমাধান হয়নি। ছেলেটা বেশ মেধাবী মনে হল। শ্রেয়ান ভালো দাবা খেলে। ওকে হারাতে বেশ বেগ পেতে হয়। আমাকেও কয়েকবার হারিয়েছে। সেই শ্রেয়ান যখন ওই ছেলেটার সাথে দাবা খেলে তখন নিশ্চয়ই ছেলেটা খুব বুদ্ধিমান। কারণ শ্রেয়ানের যা নাক উঁচু যার তার সাথে বন্ধুত্ব করেন না। ওনার সমতুল্য বা ওনার চেয়ে বেশি বুদ্ধিমানের সাথেই বন্ধুত্ব করেন। তাই এমন একটা ছেলের সঙ্গে যদি ধাঁধাটা সমাধানের উদ্দেশ্যে আলোচনা করে থাকে তাহলে দোষ দেওয়া যায়না। শ্রেয়ান ছেলেটাকে ফোল্ডারের কথাগুলো বলেছে কিনা জানিনা। যদি না বলে থাকে. তবে কোনো ক্লু ছাড়াই সমাধান করে ফেলেছে। তাহলে তো বলতে হয় ছেলেটা খুবই বুদ্ধিমান। যাইহোক এই অনিকেত মাইতির কথা পরে ভাবলেও হবে। আপাতত আর্জমাকে ফোন করে সেই থ্রেড কলটার কথা জানাতে হবে। আর্জমা আমার নম্বর টা নোট করে নিলো আর সেই থ্রেড কলটার টাইমটাও।
ফোনটা রেখে ঘরে চলে গেলাম। ল্যাপটপটা খুলে বসলাম। প্রথমেই F ফোল্ডার টা খুললাম। সেই একই ধরণের রেকট্রনগুলার ডিসাইন। F দিয়ে নামওয়ালা ফোল্ডার। তারপর Q ফোল্ডার মানে কুইটো মানে ইকোয়াডোরের রাজধানী। এই ফোল্ডারেও রেক্ট্যঙ্গুলার ডিসাইন। তবে আগেরটার থেকে বেশ কিছুটা ফারাক আছে। স্বভাবতই এগুলো কোনো সাংকেতিক বার্তা। তারপর একে একে ওয়েলস, Xai Xai আর Ziro ফোল্ডার গুলোও খুললাম। খানিক ভেবেও কর সুরাহা হল না। ওয়েলস (Wales) হল U.K তে। Ziro আমাদের দেশের অরুণাচল প্রদেশে। কিন্তু Xai Xai জায়গাটা কোথায়? নাম শুনে শুনে মনে হচ্ছে আফ্রিকান। কিন্তু এটা তো কোনো দেশের নাম নয়। দেশের নাম হলে অবশ্যই জানতাম। গুগুলের শরণাপন্ন হলাম। হে পেয়েছি। Xai Xai হল Mozambique দেশের একটা শহর। হঠাৎ মাথায় এলো জায়গার নাম গুলোর মধ্যে কোনো সূত্র নেই তো? ভেতরের সংকেতগুলো নেহাতই গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। জায়গার নামগুলো পর পর লিখলে দাঁড়ায় Finland, Quito, Wales, Xai Xai, Ziro কি মিল থাকতে পারে এদের মধ্যে? অনেক ভেবেও কিছু মাথায় এলো না। এখন প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। মানুষকে আজকাল সবকিছু জানতে হয়না। শুধু ইন্টারনেট কানেকশন আর তথ্যের আপ্লিকেশন জানলেই হয়। জায়গায় নামগুলো পর পর লিখে সার্চ ইঞ্জিনে দিয়ে দিলাম। না, হাবি যাবি কি সব আসছে। এসব আমার কাজে লাগবে না। আসলে ফোল্ডারের ভেতরে সংকেতগুলো ডিকোড না করতে পারলে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। শ্রেয়ানটা থাকলে হয়তো মাথার গিটগুলো খোলা সম্ভব হত। আচ্ছা, এই ছেলেটা মানে অনিকেতকে দেখালে হয়না। ছেলেটার বুদ্ধির পরিচয় পেয়েছি। মনে হচ্ছে মাথাটা শার্প আছে। কিন্তু অচেনা একটা ছেলেকে এতটা ভরসা করা কি উচিত হবে? তাছাড়া ছেলেটা খুব নিরীহ ও গোবেচারা। ওকে বিপদের মধ্যে টেনে না আনাই ভালো । শ্রেয়ানকে নিয়েই আমার শিক্ষা হয়েছে।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।