সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ২৭)

রেকারিং ডেসিমাল

বাড়ির অন্দরমহল নিজেদের নিজেরাই সামলে রাখার চেষ্টা করে বেশির ভাগ সময়। নতুন বউকে বেড রেস্ট দিয়েছিলেন ডাক্তার পেটে বেবি আসার পরে পরেই।
শ্বাশুড়ি মা অক্ষরে অক্ষরে পালন করানোর চেষ্টা করেছেন। এমনকি চানের জন্য দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাথরুমে যেতে হবে বলে গরম জল করে ঘরে নিয়ে এসে নিজে স্পঞ্জ করে দিয়েছেন। লম্বা চুলে জট পরে যায়, তাই টেনেটুনে দুটো বিনুনি করে দেওয়া ত তাঁর নিত্যকার কাজ কারণ ছোট ননদ ও রোজই চিরুনি হাতে চলে আসে।
— জেঠি, চুল বেঁধে দাও জলদি। ইস্কুল আছে।
তার ঘন লালচে খয়েরী চুলে পাঞ্জাবি মেয়েদের মত বাহারের বিনুনি বাঁধতে বসেন জেঠি।
এবারে শ্বাশুড়ি মা পায়ে চোট পেয়ে এসেছেন। ডাক্তার বউ জানে পায়ে কোনো ভাবে চাপ পড়লে ফ্র‍্যাকচার ঠিক ভাবে জোড়া লাগবে না। তাই সে কোমর বেঁধে লেগে পড়ে। সংসার-অন্তপ্রাণ শ্বাশুড়িকে বিছানায় আটকে রাখতে হবে। চা, জলখাবার বিছানায় এনে উপস্থিত। চান ধরে ধরে একবার বাথরুমে নিয়ে যাওয়া। বাকি সময় চেয়ারে বাথরুম সারা। ভাতের থালা খাটে হাজির। খাওয়া শেষে থালাতেই হাত ধোয়া। আবার বিকেলে চা, জল খাবার, রাতের খাওয়া দাওয়া।
কাকি, দিদা, গায়ত্রীদি সবাই মিলে হবু মায়ের সাথে দৌড়ে চলে।
সকালে শ্বশুর এবং বর অফিসে যায়।
দু জনের জল খাবার। শ্বশুরের টিফিনবাক্স ভরে ভাত, তরকারি, মাছের ঝোল। প্যাকেটে ছোট বাক্সে ভরা চারটি পান গার্ডার দিয়ে আটকানো।
দু জনের গেঞ্জি, জামা, প্যান্ট, মোজা, রুমাল, এবং যাতায়াতের পয়সা, খাটের ওপর সাজিয়ে রাখা। এরা কেউ নিজেদের জিনিসপত্র কিছুই দেখে চিনে নিতে জানেন না। সবই মহিলা মহলের মাথা ব্যথা।
শ্বাশুড়ি চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠেন। কি করে সামলাবে এই আনাড়ি মানুষ ?
কিন্তু এ ত কঠিন ঠাঁই।
বকলেও শোনে না, গালি দিলেও দাঁত বের করে। কিন্তু খাটের থেকে নামতে দেয় না মোটেই।
যা যেখানে আটকে যায়, পাশের ঘর থেকে ডেকে নেয় মানুষকে বাধা টপকে যাওয়ার জন্য।
দু সপ্তাহ হই হই করে কেটে গেল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।