সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১৯)
রেকারিং ডেসিমাল
বাড়ির সামনের রাস্তাটা ভিতর দিকে ঘুরে গিয়ে চলে যায় পুরোনো আমলের কবরখানার সামনে, যাকে এলাকার মানুষ ডাকেন সিমেট্রি।
ডান দিকে ঘুরে গেলেই সাবেকি কলকাতা দূরদর্শনের স্টুডিও , যাকে রাধা স্টুডিও বলেই ডাকা হত।
নতুন বউমা এই জায়গাটা ভালো চেনে।
ইস্কুলে পড়তে পড়তেই এই স্টুডিওতে মায়ের সঙ্গে এসে শুটিং করেছে অনেক বার। ক্লাস ফোর থেকে শুরু করে বেশ কয়েকবার। ছোটদের অনুষ্ঠান হরেকরকমবাতে রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক গান গেয়ে গেছে। প্রথম বারের অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়েছিল বাংলা নববর্ষের দিন, সাতাত্তর সালে।
সেই অভিনব অভিজ্ঞতায় সঙ্গে ছিলেন এক আশ্চর্য উজ্জ্বল মানুষ, শিল্পী শ্রীমতী সুচিত্রা মিত্র।
রবিতীর্থের ছাত্রী হবার খাতিরে ক্লাস ফোর ওয়ালার দুঃসাহস ছিল এতবড় মানুষটিকে সুচিত্রাদি বলে ডাকার। তিনি কিনা রবিতীর্থের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম এবং প্রধান শিক্ষিকা ও।
আর নিজের ইস্কুল নবনালন্দার অজস্র অনুষ্ঠানে ও তাঁকে সব সময় কাছেই দেখা যেত একেবারে তিন বছরে নার্সারি ওয়ানে উঠে রিহার্সালের মজায় যোগ দিয়ে থেকেই।
তাই ততটাও নার্ভাস লাগেনি প্রথম দিনের শুটিংয়ে।
সুচিত্রাদি শিখিয়ে দিয়েছিলেন মনিটরের দিকে না তাকাতে।
তাঁর সঙ্গেই গাওয়া হয়েছিল, এস হে বৈশাখ…
সেই অপূর্ব অভিজ্ঞতা মনে পড়ে গেলেই আলো হয়ে যায় মন।
রাধা স্টুডিওর সামনে দিয়ে এসে আবার মেন রোড, ট্রাম লাইন। ডান হাতে বাঙুর হাসপাতাল। সামনের ফুটপাতে সারি সারি খাটিয়া বাঁধা, বিক্রির জন্য। আরেকটু ডানে গেলেই বাড়ির গলি।
রোজ সন্ধ্যেবেলা নতুন কর্তা গিন্নি হাত ধরে ঘুরে আসে এই রাস্তাগুলো বকবক করতে করতে।
পাড়ার পুরোনো বউয়েরা গুনতে থাকেন।
হ্যাঁ রে, আজ এরা ক পাক দিলো?
কোন দিন তিন, কোন দিন বেশি আড্ডা হলে চার।
হেসে খুন হয় সবাই।
আচ্ছা কি এত কথা থাকে রে এদের? বাবা, চারপাশের কিছু দেখে না। কেবল বকবক আর বকবক।
এই এক জোড়া মানুষ কিছুই এসব খেয়াল করে না। নিজেদের হ্যা হ্যা সেরে বাড়ি ঢুকে যায়।
রোজই বিকেলে অফিস থেকে ফিরে জলখাবার আর চা খাওয়া হলে শাশুড়ি মা হ্যাট হ্যাট করে বের করে দেন তো।