সাপ্তাহিক উপন্যাসে সপ্তর্ষি মণ্ডল (পর্ব – ১৩)

অজ্ঞাত

৪৪।।
শীতের রাত্রি । লোকাল ট্রেনের ভিড় আজ বেশ কম । তাই সিট পেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি সন্দীপনকে । ধর্মতলার আজকের সন্ধ্যাটা সন্দীপনের চোখে মুখে এখনও লেগে আছে । ট্রাম লাইনের ধারে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে তার একবার হলেও মনে হয়েছিল যে সে নিশ্চিত দোষী । নাহলে এভাবে কি আর পারতো কষ্ট দিতে ।
সত্যবতীর চোখ মুখ তখন প্রচন্ডই আতঙ্কিত , যখন তার প্রেমিকের দুটো হাত ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে । দুজনের চোখেই জল আর দুজনের মুখেই নিস্তব্ধতা । প্রায় মিনিট পনেরো ; কেটে গেল এভাবেই । তারপর সন্দীপনের হাত দুটো জড়িয়ে নিয়ে সত্যবতী বলে উঠলো , বলা তো নয় যেন একগুচ্ছ অভিমানে মান ভাঙলো এবার ,
—- ভালোবাসার মানুষটিকে বুঝি এভাবে একা ফেলে চলে যেতে হয় ? জানো এই নির্জন অন্ধকারে কী ভয় করছিলো আমার ! তিনটে মাতাল এপাস থেকেই আসছিলো আর আমি একা একজন মেয়ে । ভাগ্যিস ওই পুলিস আংকেল …
সত্যের কথা শেষ হতে না হতেই সন্দীপন তাকে জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিলো আর সত্যের ঘামে ভেজা মাথায় চুম্বন করে চললো , বার চারেক তো হবেই । সত্য প্রথমে কোন বাঁধা না দিলেও , কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্দীপনের হাত সরিয়ে বলে উঠলো ,
—– থাক । থাক । আর ঐ মিথ্যে মিথ্যে ভালোবাসা দেখাতে হবে না ।
সন্দীপন অবশ্য এই মুহূর্তের নেশায় আজ পুরোপুরি মাতাল । প্রথম জীবনে পান করা হুইস্কির নেশাও এত চড়তো না । আর সেই অবস্থায় সে তার সত্যর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো ,
— রাতের চাঁদ তারা আজ দেখো মেঘের আড়ালে
মৃদু হাওয়ায় আজ মন যেতে চায় তোমার মনে হারিয়ে
ভুল করেছি , প্রাশ্চিত্ত করবো বলে
ক্ষমা করে জড়িয়ে নাও , তোমার ঐ মায়াজালে ।
সত্য অবশ্য আজ এসবে কান দিল না একটুও । উল্টে সন্দীপনের হাত ধরে টেনে নিয়ে , চেপে বসলো হাওড়া গামী একটি বাসে ।
এসব মনে করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে সে আজ , টেরই পাইনি সন্দীপন । বেশ জেদ করেই ভালোবাসাটিকে পৌঁছাতে তো চলে গেছিল তখন , তবে এখন চোখ খুলতেই সে বুঝতে পারলো , ট্রেন এখন হাওড়া প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে । ঘুমের ঘোর আরও কিছুটা কাটতেই সে বেশ বুঝতে পারলো যে সে চন্দননগর থেকে হাওড়াগামী ফিরতি ট্রেনে বসে আছে , যেটি এই মুহুর্তে তার গন্তব্যে পৌঁছে ; বর্ধমান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । হুড়মুড়িয়ে উঠে সে ট্রেন থেকে নেমে পড়লো ঠিকই , তবে এসমস্ত ঘটনা শুনে সত্যের সাথে আগামিতে পৌঁছাতে যাওয়ার টিকিটটি তার চিরকালের মত বাতিল হয়ে গেল ।
পরেরদিন এলো সূর্যের হাত ধরে , তবে , অনেক মানা নিজের মধ্যে নিয়ে এবার । হাওড়ার ভিড় আজ প্রচন্ডই । তার মূল কারণ অবশ্য বৃষ্টি । সত্যবতী এসে যখন পৌছালো তখন অবশ্য রোদ হাসছে আকাশ জুড়ে , যদিও সন্দীপনের দেখা নেই কোথাও । ফোন করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটা করুন গলা ,
—- প্রায় পৌঁছে গেছি । দুটো মিনিট অপেক্ষা করো ।
যদিও দু মিনিটের এই অপেক্ষা প্রায় ত্রিশ ছুঁয়ে গেলো আজ , ফলত্ব যা হওয়ার তাই হলো ; অভিমান ; হাজার অভিযোগ , মেজাজ গরম — যদিও সবটা ক্ষণস্থায়ী ।
গরদের শাড়ি আর লাল ব্লাউজের কম্বিনেশনটা বেশ মানিয়েছে সত্যকে , নিজের মনে বলে চলেছিল সে ; যদিও ভিড় মলে দৃষ্টি তার আজ শুধুই ওর দিকে । সল্টলেকের আবহাওয়া মোটেই ভালো নেই আজ । যে রোদ্দুর বুকে নিয়ে ওলা সফর শুরু হয়েছিল কাঁধে মাথা এলিয়ে তাই শেষ হলো বৃষ্টি ঘেরা এক সকালে । সকলে বৃষ্টিতে ভিজে স্নান যখন , তখন নায়কের মাথায় ঘামের ফোঁটা — কারন ভাবি শ্বশুরমশাই আসছেন তার সাথে মিট করতে । এই চিন্তা নিয়েই সে মল উপভোগ , ঘুরে বেড়ানো আর ছবি তুলতে ব্যস্ত করে রাখলো নিজেকে ।

( চলবে )

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।