T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় শাল্যদানী

স্ত্রী’র রবি

রবির শুধুমাত্র র কে বিশ্লেষণ সব চিন্তন নিউক্লিয়াসের দিকে ধায় সব অর্বিটাল প্রোপাগান্ডা ভুলে। তা করা কি অতই সহজ? প্রতিজন ইঙ্গিতবহ এক একটি ধর্ষিত গল্প, না গল্প নয়, কেচ্ছা। অথবা – সেটি কেচ্ছা ছিলো বলেই মনে মনে বিশ্বাস করে কিন্তু কেউ সেই কেচ্ছাকে তার মহান দৃষ্টি দিয়ে স্বর্গীয় নন্দন কানন বলে আঁতলামো করছে, এমন মানুষও হাইপ্রোফাইল দার্শনিক স্তরে আছে বইকি।
রবীন্দ্রচর্চা আর রবীন্দ্রনাথ নিয়ে মন গড়া রোশনাই এক নয়। ওকে দেখতে হলে কখনো ছুটির চোখ দিয়ে তাকে আর তার চোখ দিয়ে ছুটিকে দেখুন না। অনন্য প্রাপ্তিসংবাদ পাবেন।।
কেউ কেউ বলা শুরু করেছেন রবি নাকি সবেতেই তার নতুন বৌঠানকে খুঁজতেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। এটা ভুল। রবি মিস করতেন তার প্রিয় আদরের ছুটিকে। উনিশবছরের দাম্পত্যজীবনের সঙ্গী মৃণালিনীদেবীর মৃত্যুর অনেক বছর পর স্ত্রীর প্রসঙ্গে শেষ জীবনে কবি মৈত্রেয়ী দেবীকে বলেছিলেন— “স্ত্রীর বিদায়ের পর আমার কেউ নেই, যাকে সব কথা খুলে বলা যায়।”
কবির জীবনে অনেক নারীই এসেছিলেন— সেই সব নারীচরিত্রের কারো কারো সাথে কবির গড়ে উঠেছিল প্রণয়, রাগ-অনুরাগও— সেকথাও সত্যি। অসমবয়সী রাণু অধিকারী থেকে আন্না কাদম্বরীদেবী যেমন, তেমনি সত্তর বছর বয়সের প্রেম-বহ্নি হেমন্তবালা, পাশাপাশি বিদেশিনী ওকাম্পো, এছাড়াও জাপানী টোমি ওয়াডা কোরা, মিস মুল, মি লং, লুসি স্কট। এঁরা সকলেই কবিকে গভীর ভাবে ভালোবেসেছিলেনও। এঁদের মধ্যে কেও কেও আবার কবির মনোজগতেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিলেন—তা জীবনীকারেরা উল্লেখ করেছেন।
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এঁরা কবির প্রণয়নাসক্ত ছিলেন ঠিকই—- কিন্তু কবির যথার্থ প্রেমাসক্ত-রোমান্টিক চরিত্রের মাধুর্য পূর্ণতা পেয়েছে একমাত্র স্ত্রী মৃণালিনীকেই আশ্রয় করে।
সোহাগ-উন্মুখ স্বামী রবীন্দ্রনাথ তাঁর মনের খোলামেলা কথা একখানি পত্রে স্ত্রীকে লিখছেন,” আমি ফিরে গিয়ে তোমাকে যেন বেশ মোটাসোটা সুস্থ দেখতে পাই ছোট বউ। তোমার সন্ধ্যেবেলাকার মনের ভাবে আমার কি কোন অধিকার নেই ? আমি কি কেবল দিনের বেলাকার ?”
স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও তাঁর উপর কবির এই যে নির্ভরতা— তার প্রমান মেলে, একেবারে নিকট-আত্মীয়া বিধবা প্রতিমাদেবীর সাথে রথীন্দ্রনাথের বিবাহ দেবার ক্ষেত্রে কবির যে মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল, তা নিরসনের জন্য কবি প্ল্যানচেটে মৃণালিনীদেবীর আত্মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন।
কবির মনে বিদেহীস্ত্রীর প্রতি এই যে-প্রণয়াবৃত্তির জীবনভোর ব’য়ে বেরানোর বহমানতা তা— রবীন্দ্রজীবনীর এক অনন্য দিক।
আর বোধ করি এই স্বামীপ্রণয়নী নারীটি রবীন্দ্রসাহিত্য সৃষ্টির অন্যতমা অন্তঃসলিলা প্রেরণার এক নেপথ্যচারিণীও বটে। আবেগ নয়, বাস্তবে চাঁদে পা। ওই যে সে বলেছিলো না-
‘এ বাণী প্রেয়সী হোক মহীয়সী
তুমি আছো আমি আছি।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।