ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ১৩

দুই পা ফেলিয়া 

পূর্ব প্রকাশিতের পর

রাত বাড়ছে, আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাওয়ার দাপট। ঘুম দূর অস্ত। হিজিবিজি চিন্তা মাথায় শুয়ে আছি। পকেটে একগাদা লজেন্স রাখা ছিলো, মাঝে মাঝে তাই চিবোচ্ছি। বাবা আর জ্যেঠু ঘুমিয়ে পড়েছে কি না জানি না, জ্যেঠি আমার পাশে শোয়া,মাঝে মাঝে কঁকিয়ে উঠছে। ফায়ার প্লেসের আগুন নিবুনিবু, ঠান্ডা যেন তেড়ে আসছে সগর্জনে।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙলো বাবার ঝাঁকুনিতে। বাবান শিগগিরই উঠে জ্যাকেট চাপিয়ে চল। কি হল বুঝতে পারলাম না, পাশে দেখলাম জ্যেঠু জ্যেঠি ঘুমন্ত অঘোরে।ঘড়ি বলছে রাত আড়াইটে, রুমে রাখা থার্মোমিটার দেখাচ্ছে – ৪ ডিগ্রী, এই সময় লেপ থেকে বেরনোর কি এমন দরকার পড়লো জানি না। কিন্তু পিতৃ আদেশ শিরোধার্য। তাই লেপের বাইরে পা বাড়ালাম।
লেপ ছাড়তেই একরাশ বুনো শীত আমার হাড় কাঁপিয়ে দিলো। কোনোমতে দুটো জ্যাকেট পড়ে যখন বাইরে বেরোলাম, বাবার ডাকাডাকি তে দেখি জ্যেঠু জ্যেঠিও বেরোচ্ছে। কি দেখলাম আমরা?
দেখলাম ঝড় বৃষ্টি থেমে আকাশ পরিষ্কার। ঝকঝকে চাঁদের আলো, আর আমাদের সামনে? শান্ত স্নিগ্ধ রূপ নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। মনে হলো হাত বাড়ালেই তাকে ছোঁয়া যাবে।
অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে আমরা সেই রূপ দেখেছিলাম। রাতের সেই দৃশ্য আজো উজ্জ্বল আমার মনের মণিকোঠায়। তারপর কতোগুলো বছর কেটে গেছে। বাবা চলে গেছেন তাও ১৫ বছর হবে। জ্যেঠু জ্যেঠি বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী, কতো বছর ওদের সাথে দেখা হয় নি। এতোগুলো বছরে আর ফেরা হয়নি সান্দাকফুর আঙিনায়। এই বছর কি পরের বছর ইচ্ছা আছে, আমি আর আমার বন্ধু ফিরবো ফেলে আসা সেই স্বপ্ন প্রাঙ্গণে। প্রণাম জানাবো সেই শান্ত গিরিরাজকে।
এখন একটাই অপেক্ষা… গিরিরাজের ডাক পাঠানোর।

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।