ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ২২

তুমি ডাক দিয়েছ কোন সকালে 

কাটরাতে রাত কাটিয়ে পরেরদিন ভোরবেলা আমাদের বেড়োনোর কথা। সর্দারজি হর্ন দিচ্ছিলেন সাড়ে ছটা থেকে, কিন্তু বেরোতে বেরোতে আটটা বেজেই গেলো। আজ সারাদিন বাস জার্নি, রাতে শ্রীনগর পৌঁছে যাওয়ার কথা।
বাস ছাড়তেই মনের মধ্যে লাবডুব খেতে লাগলো। অবশেষে তাহলে ভূস্বর্গে পা পড়বে। বাবা, জ্যেঠু জেঠিমমার কথা মনে পড়ছিলো খুব। বাবা তো কবেই চলে গেছেন, জ্যেঠু, জেঠিমা অসুস্থ, আর বেড়াতে পারেন না। ওদের সাথেই তো যাওয়ার কথা ছিলো কাশ্মীর, কিন্তু ওদের আর যাওয়া হয়ে উঠলো না। জানালার ধারে বসে বাইরে তাকাই, পাকদন্ডী বেয়ে বাস এগিয়ে চললো। সবুজ চারিদিক, মৃদু মন্দ ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে।
যেতে যেতে বেশ অনেকক্ষণ পর, বাস দাঁড়িয়ে গেলো। আর নড়ে না তো নড়েই না। কৌতূহলী হয়ে অনেকের সাথে নামি। সামনে আরো অনেক বাস দাঁড়িয়ে, পুরোদস্তুর চেকিং চলছে। অমরনাথ যাত্রার সময় জঙ্গিরা অনেক সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে, একবার তো ম্যাসাকার করে দিয়েছিল, তাই এই ব্যবস্থা। তবে অনেক সময় যে বজ্র আঁটুনির মধ্যে ফস্কা গেরো থাকে, পরে বেশ কিছু সময় সেই প্রমাণ পেয়েছি। তবে তার কথা পরে।
যে জায়গায় আমাদের বাস দাঁড়িয়ে, তার নাম পাটনীটপ। মনে পড়লো অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর লেখা পড়েছি, ভ্রমণের পাতায়। বাসের ছাড়তে ঘন্টা দুই, আমি, দেবনাথ দা আর জামাইদা( নাম ভুলে গেছি, আমরা জামাইদা বলতাম) বেরোলাম পায়ে হেঁটে। নিস্তব্ধ চারদিক, কয়েকটি পাখি ডাকছে চারদিকে। ঘন পাইন বন,মাঝে শুঁড়ি পথ। এক পা দুই পা করে এগোই।হঠাৎ এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। কোথা থেকে একরাশ কুয়াশা এসে ঘিরে ধরে। ঠান্ডা ও বেড়ে যায়। কুয়াশা কে গায়ে মেখে বাসে ফিরি। একসময় বাস ছেড়েও দেয়।
সন্ধ্যা আন্দাজ আটটার সময়, আমরা ডিনার সারি। ধাবায় খেতে খেতে, আমাদের কিছু জিনিস বলা হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো আমরা যেন একা একা কোথাও দুমদাম বেড়িয়ে না যাই। কারণ এটা *কাশ্মীর*। নিজেদের সেফটি, নিজেদের হাতে। সবাই কথা দেয়, মেনে চলবে।
আরো একগাদা চেকিং পেরিয়ে, রাত বারোটা নাগাদ আমরা শ্রীনগর এসে ঢুকি। ডাল লেকের সামনে একটি হোটেলে আস্তানা গড়ি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।