সবেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে।তিনতলার ব্যালকনিতে বসে প্রখ্যাতা লেখিকা শ্বাশ্বতী মিত্র,হাতে প্রিয় লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ট্রিলজির প্রথম প্রতিশ্রুতি।এই বই গুলো যতবার পড়েন আশ মেটে না ,যেন মনে হয় ‘বার বার পড়ি।’
ঠান্ডা বাতাস মধুর পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে লেখিকার মুখে চোখে।কাঁচা পাকা এক মাথা চুলের সামনের দিকে ফোঁটা ফোঁটা হীরের কুচির মত ভেজা বাতাসের সঙ্গে উড়ে আসা কার্নিশের জল।বিকেলের সূর্য বেশ নরম।মেঘ সরিয়ে উঁকি দিলেও হাল্কা কমলা আলো,তাতে তেজ নেই, সৌন্দর্য আছে বিস্তর।
জোরে নাক টানলেন।নাঃ! গ্ৰামের বাড়ির মত ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধটা এখানে পাওয়া যায়না বটে তবে পিচ রাস্তার ধুলোর আস্তরণের উপর বৃষ্টির জল পড়ে যে গন্ধটা ,দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে যথেষ্ট।নিজের ব্যালকনির রেলিংয়ের টবে লাগানো থোকা বেলিগুলো বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে যেন ঝলমল করছে।সঙ্গে পাতাপাহার।সবুজ আর লাল পাতাগুলো মনে হচ্ছে যেন এই কেউ পালিশ করে দিয়ে গেল।
নীচে তাকালেন,বাড়ির সামনের পিচ রাস্তাটা চকচক করছে সাপের গায়ের মত,পিচ্ছিল, মসৃণ।সামনের বাড়ির ছাদের টবে লাগানো কামিনী, কাঁঠালি চাঁপা,আর গন্ধরাজের গন্ধ ,আহা এই তো সুখ।হাতের বড় কফি মাগের থেকে এক ঢোক গ্ৰীণ টি খেলেন।একটু ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে তবে দারুচিনির গন্ধটা আছে বেশ ভালোলাগা জাগানোর মত!
ছেলেমেয়েরা যারা রাস্তায় ইট পেতে ক্রিকেট খেলছিল,সব বাড়ি ঢুকে গেছে।একটু পরেই কেউ পড়তে বসবে,কেউ যাবে টিউশনে।সব ফ্ল্যাটের আলো জ্বলতে শুরু করেছে এক দুই তিন করে।
শ্বাশ্বতীর কোনো তাড়া নেই।উনি এখানে একাই থাকেন।এক মাত্র মেয়ে সায়ন্তিকা জার্মানিতে সেটল্ড,তাও বছর সাতেক।ওরা রোজ নিয়ম করে ফোন করে,সে রাত দশটায়।জামাই ফ্রান্সিস, জার্মান হলে কি হবে,বেশ ঘরোয়া।শ্বাশ্বতীর তো মনে হয় ফ্রান্সিসের জন্যেই সম্পর্কটা টিকে রয়েছে।সায়ন্তিকা যা বদমেজাজি!নিজের মেয়েকে তো চেনেন।
হঠাৎই চোখে পড়লো,পাশের বাড়ির ছতলার রণ ওনাদের পাশের অ্যাপার্টমেন্ট এ ঢোকার গলিতে টুক করে ঢুকে পড়ল,একটু পরে পাশের ফ্লাটের ঝিলি!রাস্তার আলোয় স্পষ্ট দেখলেন ও ও এদিক ওদিক তাকিয়ে ঢুকে গেল গলিতে।বেশ মজা পেলেন শ্বাশ্বতী।বুঝতে পারছেন ওরা কেন ঢুকল ওখানে।
বেশ দুষ্টুমি করে একটু উঠে তাকালেন গলিটায়।ওপর থেকে বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।রণ আর ঝিলি কিছুক্ষণ কথা বলার পর রণ প্রথমে ঝিলির মাথায় একটা চাটি মারলো তারপর আলতো একটা চুমু খেল ঝিলির কপালে।এরপর দুজনেই হাত ধরাধরি করে বেরিয়ে এলো গলির থেকে। চলে গেল দুজনের বাড়ির দিকে।
শ্বাশ্বতীর অবাক লাগলো।তার প্রায় সাতান্ন বছর বয়স,তবু কিশোরকিশোরীদ্বয়ের এই ঘনিষ্ঠতা ওনার মনে কোনো খারাপ ভাবনা জাগালো না।বরং উনি মনে মনে খুশি হলেন,মনে হল এক পবিত্র ঘটনার যেন সাক্ষী থাকলেন ।একটু লজ্জাও পেলেন যেন।হয়তো কোনো পুরোনো ঘটনা নাড়া দিয়ে গেল লেখিকার স্মৃতিকে!