• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ১৩)

সুমনা ও জাদু পালক

পাখিটা যে বলল, মা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু কি করে হবে? জীবন মাস্টারের দেওয়া ওষুধে কি মায়ের জ্বর ছাড়বে? পুটু পিসি যে বলে,ওগুলো সব সাগুর দানা। ওতে অসুখ ভালো হয় না ।
কিন্তু তাদের মত যারা গরিব ,তারা তো অসুখ হলে জীবন মাস্টারের কাছেই ওষুধ আনতে যায়। গ্রামে যাদের অবস্থা একটু ভালো, যাদের অনেক জমি-জমা আছে বা যারা চাকরি বাকরি করে ,তাদের বাড়ির কারুর অসুখ হলে মধু ডাক্তারের কাছেই ওষুধ আনতে যায় ।মধু ডাক্তার তাদের দেখলে কেমন হাসি হাসি মুখ করে কথা বলে। অথচ সুমনাকে দেখলেই মুখটা কেমন বেজার করে। কেমন যেন খেঁকিয়ে বলে, ,যা, আগে পঞ্চাশটা টাকা নিয়ে আয়, তারপর আমার এখানে এসে বেঞ্চিতে বসবি।
এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়ির কাছাকাছি আসতেই অবাক হয়ে যায় সুমনা। বাড়ির বাইরে বকুল গাছটার নিচে বাদল দাদু দাঁড়িয়ে আছে কেন? শালপাতা দিয়েই বা কি ঢেকে এনেছে দাদু?
সুমনাকে দেখতে পেয়েই বাদল ঠাকুর হাতে যেন স্বর্গ পেলেন মনে হল। বাদল ঠাকুর বলেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলি রে দিদিভাই? সেই কখন থেকে আমি দাঁড়িয়ে আছি তোর জন্য ।
—–কেনে গো দাদু?
—- আমি তোর জন্য মন্দির থেকে ভোগের প্রসাদ নিয়ে এসেছি। তখন ছোট গিন্নি তোর সঙ্গে কী রকম খারাপ ব্যবহার করলে, আমি তো কিছুই বলতে পারলাম না।
——-ওসব কথা ছাড় দাদু। কিন্তু দাদু ,তুমি প্রসাদ পেলে কি করে? তোমার ভাগ থেকে আমাদের দিচ্ছ বুঝি?
—– নারে না, আমার ভাগেরটা তোদের দিয়ে দিলে আমি খাব কি ?
—তাহলে কি তুমি আমাদের জন্য লুকিয়ে প্রসাদ এনেছো?
— ধুর পাগলী! আমি কি চোর যে লুকিয়ে তোদের জন্য প্রসাদ আনব,?
—– তাহলে?
—- বেশ, শোন তাহলে ।সরকার বাবুদের বাড়িতে কাজে ঢোকার সময় আমার এই কথা বলা ছিল যে, রোজ দুপুরবেলায় আমাকে দুজনের জন্য প্রসাদ দিতে হবে ।
—–বুঝেছি, তোমার জন্য আর দিদিমার জন্য ।—— হ্যাঁ। বড় গিন্নিমা থাকলে বলতে হয় না কিছু। দুজনের থেকে অনেক অনেক বেশি প্রসাদ দিয়ে দেন উনি ।আজ ছোট গিন্নি আছে বলে নিয়মমতো দুজনের প্রসাদই নিয়েছি।
—– তাহলে? আমাদের দিয়ে দিলে তোমাদের তো কম পড়বে।
হাহাহা করে হেসে ওঠেন বাদল ঠাকুর।
সুমনা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, তুমি হাসছো কেনে দাদু?
—- তাহলে শোন্, আজ সকালবেলায় তোর দিদিমা তার বাপের বাড়ি কুসুমকলি গ্রামে গেছে।তাহলে একজনের প্রসাদ বাড়তি হয়ে গেল । কি ,ঠিক তো?
——হ্যাঁ।
—-সেটাই দিতে এলাম তোকে।
—-ওটা ঢেকে রাখলে তুমিতো রাতে খেতে পেতে দাদু।
—–বয়স হয়েছে,রাতে বেশি খাইনা। সারাদিন খাটাখাটনি যায়,তাই একটু রাত হতেই এক কাপ চা আর দুটো শুকনো মুড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ি। নে, ধর তাড়াতাড়ি ।সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি, হাত তো ধরে গেল আমার।
সুমনা হাত বাড়িয়ে প্রসাদের খালাটা বাদল ঠাকুরের হাত থেকে নেয়।শালপাতাটা একটুখানি সরিয়ে সুমনা দেখে ,ভোগের সবরকম প্রসাদ সাজানো আছে সেখানে। কি সুন্দর গন্ধ ভেসে আসছে।
সুমনা বলে, একটুখানি দাঁড়াও দাদু, আমি প্রসাদ টা রেখে তোমার থালা এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
—– না না, তোকে ব্যস্ত হতে হবে না দিদি। কাল একবার মন্দিরে যাস না দিদিভাই ।তুই গেলে আমার একটু সাহায্য হয়।বুড়ো হয়েছি তো।
—- তোমাকে বলতে হবে না গো দাদু, আমি যাবো ।
—- যখন যাবি তখন নিয়ে যাস থালাটা।
বাদল ঠাকুর চলে যান। প্রসাদের থালাটা সযত্নে ঢেকে রেখে সুমনা মায়ের কাছে যায়।
মা তো ঘুমোচ্ছে। তাহলে মাকে প্রসাদ দেবে কি করে?
মায়ের কপালে হাত রাখে সুমনা। না ,জ্বরটা এখনো ছাড়েনি মনে হচ্ছে ।
চোখ মেলে তাকায় মা।
সুমনা তাড়াতাড়ি মায়ের হাতটা ধরে বলে, মা,এখন কেমন লাগছে শরীর?
—ভালো !
—-জ্বর তো ছাড়েনি মনে হচ্ছে।
—ও ছেড়ে যাবে মা ।
—–ও মা , তুমি কি একটু মন্দিরের ভোগের প্রসাদ খাবে?
—-কোথায় পেলি?
—-বাদল দাদু দিয়েছে ।
—–তুই খেয়ে নে।
—- একটুকুন ও খাবে না তুমি ?
——-এখন ইচ্চে করছে না রে মা।অল্প এট্টুখানি
প্রসাদ ঢেকে রেখে দে , পরে খাব।
সুমনা মায়ের জন্য অল্প প্রসাদ তুলে রেখে নিজে খেতে বসে। খুব সুবাস বেরিয়েছে প্রসাদের। খিদেটা হঠাৎ যেন খুব বেড়ে যায়।
কিন্তু প্রসাদ মুখে তুলতে গিয়েই সুমনার হঠাৎ মনে পড়ে যায় যে ,ক্ষ্যাপা কালির থানে অশোক কাকা হয়তো এখনো বসে আছে। অপেক্ষা করে আছে প্রসাদ পাবে বলে।
মুখে আর প্রসাদ তোলা হয় না সুমনার।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।