অণুগল্পে শম্পা সাহা

বিকৃতি

আঃ! কি তৃপ্তি, সমস্ত সুখ এসে জমা হয় শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে, যখন কোনো মহিলার শরীরের কোন মাংসল অঙ্গের স্পর্শ পান, স্বর্গীয় সুখ অনুভব করেন অরুণবাবু। মুখে খেলে যায় এক অপার্থিব আনন্দ, কিন্তু মুখ দেখে তা বোঝা যাবে না। মুখে এক আলগা বিরক্তির ভাব ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন অত্যন্ত ভীড় বাসের লেডিস সীটের সামনে।
এই সাতান্ন বছর বয়সে এসে সেই মুহূর্তগুলোয় নিজেকে সাতাশের তাজা যুবক মনে হয়। অফিস থেকে ফেরার পথে তাই ইচ্ছে করেই ভীড় বাস দেখে ওঠেন। তবে কোনোদিন কাউকে হাত দিয়ে সাধারণত ছোঁননা, তাহলে সহজেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা।
প্রথম প্রথম যখন বুঝলেন এই অনুভূতি তাকে ভালোলাগা এনে দিচ্ছে, তখন কিছুদিন অপরাধবোধে ভুগেছিলেন, ধীরেধীরে তা ছাপিয়ে গেছে এই সুখানুভূতি, এখন যেন তা অরুণবাবুর নেশা। বিশেষ করে অবিবাহিতা, যুবতীরাই তার লক্ষ্য, কিশোরী হলেতো কথাই নেই। মাঝেমাঝে মুখের অতিরিক্ত ভালোলাগার অনুভূতি লুকাতে না পেরে বাসের রড ধরা হাতের উপর মাথা রাখেন, চোখ বোজেন পরম আশ্লেষে ভাবখানা এই বড় ক্লান্ত। কেউ কেউ একটু সন্দেহ করলেও তার ক্লান্ত বিষণ্ণ ভাব দেখে আর কিছু বলেনা।
সেদিন বাসে ওঠাই দুষ্কর, মেয়েরা পর্যন্ত পাদানিতে ঝুলছে। সুযোগ বুঝে অরুণবাবু সেঁধিয়ে গেলেন ভীড়ে, তারপর যথারীতি শিকারের খোঁজ। ঐ প্রচন্ড ভীড়ের ফাঁকে হঠাৎ চোখ গেলো সামনের মেয়েটির দিকে। মুখ দেখা যায় না, কিন্তু মেয়েটি পাশ হয়ে দাঁড়ানোতে…… । জানালার দিকে মুখ করে একটা সীটের গায়ে ঠেস দিয়ে ভীড়ের চাপ সামলাচ্ছে।
অরুণবাবুর আঙুলগুলো নিজের অজান্তেই নিশপিশ করে উঠলো, যা কোনোদিন করেন না তাই করে বসলেন। হঠাৎই একটা ঝাঁকুনির সুযোগে, সীটের মাথার হাতল ধরার অছিলায় বসিয়ে দিলেন থাবা। মেয়েটি ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। গলাটা চেনা চেনা লাগছে যে, একি এতো তার মেয়ে জয়ীর গলা!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।