কবিতায় স্বর্ণযুগে তাপস গুপ্ত (গুচ্ছ কবিতা)
by
·
Published
· Updated
১| ফলক
হলদে সাদা ফুলের গুচ্ছ
রাখা হয় সমাধি ফলকে
অথবা ঘরের টেবিলে রাখা হয়
কোনো নির্বাক মালিনী ফটোফ্রেম
রাখা হয় অর্থাৎ
রেখে দেওয়াটা ঝট করে হয় না
জ্যাকেট খুলে জোরে শ্বাস নিই
চোয়াল আলগা হয়
আর চোখ চিক চিক করেছিল মনে হয়,
আঙুলগুলো ফুলের পাপড়ি বৃন্ত ছুঁয়ে
সমানুপাতিক হয় শরীর মাপে
সেদিনও অপসৃয়মান সূর্য
গিলে নিয়েছিল বর্তমান
আজ দুটো পাহাড় গড়িয়ে সে লুকায় নিজেকে
তার ছিটানো নদীর পিঙ্গল জলে
মুখ ধুয়ে উড়ুক্কু ডানা দুটো খুলে
ভাসিয়ে দেওয়া হল না এবারও
২| অ্যান্টিগোনাইজড
ডুকরে ওঠা রাতে
বেলচা হাতে বেরোতেই
চুম্বকে ভেবেছিলে হয়তো
জোৎস্না খুঁড়তে চলেছি,
গোলার্ধ পাল্টে ভর দুপুরে
রাস্তার মাঝে মুখে ব্রাশ দিতে
আকাশ নীল অপরাজিতা
মিন্ট তাজায় জমে গেল দাঁতে,
সেই সব ঠান্ডা বিষাদ সুখ ধুয়ে ধুয়ে বুঝি
কলা কৈবল্যের বিষণ্ণ শরীর
বিড় বিড় উচ্চারণে জড়ানো
বিড়ম্বিত প্রেক্ষিতে শূন্যতা ময়,
কাঠামো হীন কলোনিয়াল শিল্প মহল
এখন কলার মান্দাসে ভাসে
ভৌতিক বিশ্বাসে,
কিছু কিছু স্থানিক বস্তু যেমন রূপগত আছে
আছে চেয়ার টেবিল গ্লাস কাপ প্লেটে
মাচিস, সিগারেট আধপোড়া, আর ছাই দানি
সাবলীল সহজেই কেমন নজর বদ্ধ,
এখানে নেই ডিং ডং ডোর বেল
নেই পোষ্য র প্রভুডাক,
এখন ছবি আছে শিল্পী নেই
পতি আছে উদ্যোগ নেই,
এখানে নেই বাদামি রঙের ম্যাডোনা শরীর
যে ভূমি চষে মিশকালো নিগার
তার দাসখত লেখে মহাকালে,
এখানে ঘোড়া নেই
ঘোড়ায় জিন নেই বাহুল্য বোধে
এখানে আভিজাত্যের খচ্চর ঘাস চাটে,
তার উল্লম্ব পিঠের নগ্ন বিভাসে
লবণ জারিত ঝোলানো মুরগি আলোকিত হয়
শিল্পের ক্যানভাসে
এখন যদি বৃষ্টি হয়
তাহলে কি বলা যায়
এই আবহ হল…. মানে
এখুনি যা অনুভূত হল
বিচার্য চেতনায় শব্দ হয় অর্থাৎ শব্দ করে বলে অ্যান্টিগোনাইজিং
তাহলে বৃষ্টির বদলে অভিনয় হোক বৃষ্টির মত
বস্তু ময় আহরিত দৃশ্য সমুহ ধুয়ে যাক
বেঁচে যাক বৃষ্টির অভিনয়
উবে যাক বিকলন সময়।
৩| সম্মোহিত অন্ধকার
শুধু উপেক্ষা নেমে এলে
উপেক্ষার আস্তরণে ওড়ে ছাই
মৃত্যুও ঘটমান অতীত অপেক্ষার
অন্ধকার আয়নার ভাঙনে ভাঙলে বুঝি
মুখোমুখি সেসব অস্থিরতা যদি নাম পায়
তাহলে নিশ্চিত জানা যায় স্থিতধি হওয়া নয়
পদসঞ্চার অধবা দৈবাৎ পক্ষ বিস্তারে
কে যেন বলে অনন্তে এষণা প্রতীক
তবুও ভেঙে গেলে টুকরো ছড়িয়ে দীন দীর্ণতায়
সঞ্চরমান শৃঙ্গার টিপ এই রাত আর ঘুমের ভান
সরে সরে সব স্পষ্ট হয় মায়াজাল অন্তরীক্ষে
রাস্তা হেসে দিলে
রতিশীল আকাশও ডানা খুলে দেয়
এইসব প্রাপ্তির সম্ভ্রম সম্মানে
অন্ধকারের জোড়ায় জোড়ায় সম্মোহন
আর অদ্ভুত জাগরণ ঘটে যায়।
৪| একটি অন্য গল্প
ডাল লেক জুড়ে এবার
সেবারেও শুধু বরফ ছিল
একটু ঝুঁকে ঘাড় তুলে সে চুপ করে গেল
তারপর তারা সত্যিই চুপ করে গেল
১৯২৪ সালের হাতে তৈরি এক
টার্কিস বন্দুকের বারুদ গন্ধ আর
পাকানো ধোঁয়ার বাষ্প ছিল চোখে মুখে,
আখরোট কাঠের বানানো সে একনলা হাতিয়ারে
বাঁটের নকশায় ছিল খোদিত প্রজাপতি
বারুদ ঠেলে আগুন ওগরানোর আগেই
নলের আগায় উড়ে এসে তার বসা ছিল যেন গল্পের আবহসঙ্গীত
লাল ছিটেয় কতবার রঙিন হয়ে উঠত তার ডানা
বাইনোকুলার আর জলপাই রঙা হেলমেট সমেত
এরপর স্রেফ একদিন
আখরোট বাঁটে খোদিত হয়ে গেল
সেবার ডাল লেকের জলে
অনেক প্রজাপতি সব ভেসেছিল… উড়েওছিল