• Uncategorized
  • 0

The Sky is Pink – Film Review

চিত্র সমালোচনা- অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়

“কোই জরুরত নাহি কিসি কে কেহনে সে আপনে স্কাই কা কলর চেঞ্জ করনে কি, সবকা আপনা স্কাই হোতা হ্যা আওর উস্কা রং ভি অলগ হোতা হ্যায়। জরুরি নহি কি তুমহারা স্কাই ভি ব্লু হো।”
এই একটা সংলাপ পুরো ছবিটাকে ব্যক্ত করে দেয়। অদিতির চরিত্রে প্রিয়াঙ্কার মুখ থেকে নিজের ছেলের জন্য বলা এই সংলাপ পুরো ছবির গভীরতা বুঝিয়ে দিয়েছিল সিনেমা শুরুর কিছুক্ষনের মধ্যেই।
১৯৭৫-এ রিলিজ করা ইতিহাসে যুগান্তকারী ছবি শোলের একটা দৃশ্য খুব মনে পড়ে। গ্রামের বুড়ো ইমাম সাহেবের একমাত্র বেঁচে থাকা যুবক ছেলের লাশ পড়ে আছে  গ্রামের মাঝে, তাকে ঘিরে রয়েছে অনেক মানুষ। চারিদিকে সব শান্ত, শুধু বাতাসের শব্দ। ক্লোজ শটে ইমাম সাহেবের ফ্রেম ইন হয় ধীরে ধীরে। ইমাম সাহেব বলে ওঠেন, “ইতনা সন্নাটা কিউ হ্যায়?” পরে নিজের সন্তানের মৃত্যু বুঝতে পারলে, ওয়াইড অঙ্গেল শটে তার বক্তব্য, “ইস দুনিয়া মে সবসে ভারি চিজ কেয়া হ্যায় জানতে হো? বাপ কে কন্ধো পর বেটে কা জানাজা।” এরকম ভারি দৃশ্য ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে বিরল হয়ে আছে। আর আজ ঐ জানাজার মতো ভারি অনুভূতি অনুভব করলাম এই সিনেমার শেষ ৪৫ মিনিটে।
যখন কোন সিনেমা একটা দর্শককেও সিটে বসিয়ে কাঁদিয়ে দিতে সক্ষম হয়, তখন ওই সিনেমার সাফল্য নিয়ে আর কোন কথা হওয়াই উচিত নয় বলে মনে করি। ওই মুহূর্তেই সিনেমা নির্মাতা ও প্রত্যেক কলাকুশলীই তাদের কাজে সফল হয়েছে বলে ধরে নিতে হয়। অনেকদিন পর কোন সিনেমা দেখে থিয়েটার এর সিটে বসে কেঁদেছি, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছি, বড় লজ্জা পাচ্ছিলাম কিন্তু পরের মুহূর্তে বুঝতে পারি যে, না, আমি একা নই, আমাদের সামনের রোতেও বেশ কিছু লোক রুমাল দিয়ে চোখ মুছছে। বিশ্বাস করুন, থিয়েটার থেকে বেরিয়েছি একটা ভীষণ ভারী মন নিয়ে। আর এখানেই বুঝে নিতে হবে সিনেমাটা কি মারাত্বক হয়েছে। এবার আসা যাক বিচার্য বিষয়ে-
The sky is pink ছবিটি একটি বায়োগ্রফিক্যাল সিনেমা। আইশা চৌধুরী নামের এক ভারতীয় মেয়ে যে এক বিশেষ জেনেটিক সিনড্রোমের কবলে পড়ে এবং মারা যায় ১৮ বছর বয়সে। পুরো ছবিটি মূলতঃ আইশার লেন্স দিয়ে তার বাবা মায়ের প্রেম, তাদের সুখী পরিবার, তাদের সংগ্রাম এবং তার বাবা মায়ের কঠিন পরিশ্রমে তার ছোট্ট জীবনকে বড় করে মুহূর্ত তৈরি করার গল্প। গল্পের যে খুব জোর আছে তা ঠিক নয়, তবে এই গল্পকে যেভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা প্রশংসনীয়। ছবির চিত্রনাট্য অসাধারণ। সিনেমা শুরুই হয় এক গভীর সমস্যা নিয়ে কিন্তু দর্শকদের একেবারে খুব গভীরে না নিয়ে গিয়েও আবহাওয়া খুব ভারি না করে বেশ সুন্দর প্লটিং-এর মাধ্যমে হেসে-খেলে সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে প্রথমার্দ্ধ পের করলেও দ্বিতীয়ার্দ্ধে শুরু হয় আসল খেলা। মৃত্যুকে আর মৃত্যুর সাথে আসা ব্যথাকে, মৃত্যু যে শুধু একজনের হয় না, একটা শরীর শুধু মরে না, বরং একটা শরীরের সাথে তার আকাশের নিচে যতজন প্রাণি বাস করে সবার মৃত্যু ঘটে- এই বেদনা আর যন্ত্রণাকে পরিচালক সোনালী বোস এতো ধীরে ধীরে দর্শকের হৃদয়ে ইনজেক্ট করেছেন যে তা বুকে সিরিঞ্জ ঢোকানোর মতো মনে হয়েছে আমার। দর্শক একেবারে সরাসরি ওই পরিবারের প্রত্যেকের ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
পরিচালক সোনালী বোস যদিও এর আগেও নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ‘Ammu’, ‘Margarita with Straw’ সিনেমায়।
প্রিয়াঙ্কা জাস্ট অসাধারণ নিজের চরিত্রে। ফারহান আখতার নিয়ে কোনে কথা হবে না। তার অভিনয় ওপর থেকে খুব সরল লাগলেও ভালো করে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কি সুক্ষ্ম পারদর্শিতা আছে এই মানুষটার মধ্যে। জাইরা ওয়াসিম এই সিনেমা না করলে হয়ত আমরা জানতেই পারতাম না সে এতটা পরিণত অভিনেত্রী। রোহিত সরফের সেরকম বিশেষ কিছু করার ছিল না।
ছবির চিত্রনাট্য খুব বেশি ধীর নয় বরং সবকিছু সব দৃষ্টিকোণকেই জায়গা দিয়েছে।
এটা মূলতঃ একটা গল্প যা ১৯৮৫-২০১৫ পর্যন্ত সময়কালকে দেখিয়েছে। তাই প্রত্যেক বছরের খেয়াল রেখে সময়ের সাথে হওয়া পরিবর্তনগুলোর ওপরেও খুব সতর্ক নজর রাখা হয়েছে, যেমন জামা-কাপড়, চুলের ধরন, গাড়ি, রাস্তা ঘাট, বাড়ি ঘরের আদল যে সময় যেমন ছিল তেমনটাই রাখার চেষ্টা করা হয়েছে (কিছু কিছু জায়গায় পেরে না ওঠাটাই স্বাভাবিক)।
অধিকাংশ সময় (বিশেষত দ্বিতীয়ার্দ্ধে) ততটা ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড রাখা হয়নি, নিঃশব্দতাকে নিজের হাতিয়ার করেছেন নির্মাতা যা একেবারে সঠিক বলেই মনে হল।
সব শেষে বলতে হবে ২০১৯-এ এখনও পর্যন্ত দেখা, আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হল সর্বোত্তম সিনেমা। সপরিবারে যান আর একটা সিনেমার মতো সিনেমা দেখে আসুন।

Anirban Chatterjee – জন্ম তৎকালীন বিহারের ‘কয়লার রাজধানী’ নামে পরিচিত ধানবাদ শহরে। প্রাথমিক শিক্ষা ওখানেই পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় আসায় বাংলা সাহিত্যের সাথে পরিচয় এবং ভালোলাগা, ভালোবাসায় পরিণতি পায়। সাথে নানান ভাষার সাহিত্য পড়তে শুরু করে। লেখা শুরু হয় গল্প দিয়ে। ২০০৯ প্রথম লেখা গল্প প্রকাশিত হয় লিটিল ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালে আশাবরী প্রকাশনী থেকে প্রথম বই প্রকাশিত হয় “অনির্বাণ”, তারপর “অনুভব”। সাহিত্যের পাশাপাশি অনির্বাণের নেশা সিনেমা ও বাচিক শিল্প। নিজে একসময় বাংলা সিনেমায় সহ-পরিচালকের কাজও করেছে এবং কয়েকটি স্বল্প দৈর্ঘ্য ছবিও করেছে। অভিনয় করে জাতীয় স্তরে পুরস্কৃত।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।