|| মানচিত্র আর কাঁটাতার, হৃদয় মাঝে একাকার || বিশেষ সংখ্যায় উমা বসু

দ্বিখন্ডিতা

বুক ভরা সুধা নিয়ে শ্যামল আঁচলের ঘেরে প্রশান্ত ভারতী মায়ের
প্রসন্ন, স্নিগ্ধ রুপের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল আকাশের লালিমায়,
সমুদ্রের নীলে।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দুরন্ত লোভের ঝাপটে
ভেঙে গিয়েছিল তাপসীর তন্ময়তা।
বিঘ্নিত হয়েছিল শান্তির বাতাবরণ ।
অস্ত্রের ঝনঝনানি ঢেকে দিয়েছিল
প্রার্থনা আর আজানের যুগলবন্দী।
নদীর পবিত্র স্বচ্ছ জলে মিশেছিল
রক্তের লবণাক্ত প্রবাহ।
ছেলেরা নিজেদের পাঁজর দিয়ে গড়েছিল দূর্গ।
হাতে হাত রেখে একটা একটা করে যন্ত্রণা গেঁথে
বানিয়েছিল স্বপ্নের বুনিয়াদ।
সাম্রাজ্যবাদী নেকড়ের দল তীক্ষ্ণ দাঁত দিয়ে
ছিন্নভিন্ন করেছিল মানুষের আদিমতম অধিকার ।
মায়ের বুকফাঁটা আর্তনাদ মরিয়া করে তুলেছিল কোলের ছেলেদের। বারুদ হয়ে ফেঁটে পড়েছিল আকাশে, মাটিতে ।
বাতাসে ভেসেছিল পোড়া গন্ধ ।
সমস্ত শেকল জ্বলে গিয়েছিল খান্ডবদাহনে।
সেই ছাইয়ের গাদা থেকে দেখা গিয়েছিল ভারতীর কল্যাণী মূর্তি ।
কিন্তু এ কি বিস্ময়!
জলন্ত শেকলের স্তুপ থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন প্রণয়িনীকে
উদ্ধার করতে গিয়ে আত্মত্যাগের মূল্য মেপে নিতে চাইলো
কড়ায় গন্ডায় ।
আবার জ্বললো আগুন, উড়লো ছাই,বাতাসে রক্তের গন্ধ ।
দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেলো ভারতীর অন্তরাত্মা ।
তাঁর বুকে হাত দিয়ে টের পাওয়া যায়
কাঁটাতারের লৌহ যবনিকার প্রাণঘাতী অস্তিত্ব ।
তবু সেদিন মঙ্গল দীপ জ্বলেছিল
স্বাধীনতার তুলসী বেদীতে ।
আজও যা অনির্বাণ শিখায় জ্বলে কাঁটাতার পেরিয়ে
দুপারের মানুষের হৃদয় মন্দিরে
সার্বজনীন মঙ্গল কামনায় ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।