• Uncategorized
  • 0

কবিতায় ভজন দত্ত

মা

ছেলেটির মা কবিতা লিখতেন :
ঘরের নানান দায় দায়িত্ব,
ক্রিয়াকর্ম বিদেয় করে
নির্জন দুপুরের চুপচাপ বেলায়।
এলোচুল শুকোতে শুকোতে গান ধরতেন,
‘পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু ‘
ছেলেটিকে ছেলেবেলায় শিখিয়েছিলেন ‘বীরপুরুষ ‘।
খুব ভালো আবৃত্তি করতো কলেজে ‘আফ্রিকা ‘।
স্বপ্ন দেখত :
এই পৃথিবী বদলের স্বপ্ন।

ওর মা ওকে শিখিয়েছিল, অন্যায় যে করে অন্যায় যারা সহ্য করে তারা সব সমান।
মা ওকে বলেছিলেন, দেখবি একদিন সত্যিকারের ভোর হবে,সেদিন সূর্যর আলো সবাইকে সমান ভাবে স্পর্শ করবে। পৃথিবী থেকে মুছে যাবে জাত-পাত,ধনী-দরিদ্র,ছোট-বড় সব ব্যবধান।

ছেলেটি বুঝেছিল,এসব করতে হলে,এই পৃথিবীকে বদলাতে হবে।বদলাতে গেলে জোট বাঁধতে হবে।
সে জোট বেঁধেছিল তার সমমনস্ক মানুষদের সঙ্গে।
একদিন যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেল তাকে। হাতে কালাশনিকভ নেই। নিরস্ত্র।হাসি মুখে,হাতে কলম নিয়ে, সে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল সবার সামনে।
যাদের চোখে বেজেছিল খুব এরকম একটা ব্যতিক্রমী দৃশ্য,তারা ওকে সহ্য করতে পারল না। প্রথমে ওর হাত থেকে কলম কেড়ে নিল তারা। তারপর বন্দি করে নিয়ে গেল চোখে কাপড় বেঁধে। তারপর…
তারপর কি হয়েছিল অনুমান করল সকলে। তবুও গণতান্ত্রিক সরকার বসাল তদন্ত কমিশন। বিশবাঁও জল জমল নগরের মোড়ে। কী হয়েছিল,দিনের আলোয়, সবাই তা জানে। তবুও জল ঢুকল কমিশনে। গণতন্ত্রের গলা টিপে তাকে খুন করা হোল সয্তনে।
ছেলেটির মা আজও কবিতা লেখেন,
দিন বদলের স্বপ্ন দেখেন, এলোচুল আর শুকোতে হয় না আগের মতন। এখন তার লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে। অনেক কাজ। তাদের শেখান ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গে’র গান, ‘সবুজের অভিযান ‘।
লেখেন, দৃপ্ত পায়ে পায়ে আগুন জ্বালানোর কথা।
আর অবকাশে নির্জনে গুনগুন করেন আপন মনে, ‘যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙ্গল ঝড়ে…’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।