• Uncategorized
  • 0

গল্পবাজে সুপ্রতীক

তারপর…

দিনদুপুরে হঠাত একটা অচেনা মেয়ের হাতে থাপ্পর খেতে হবে কে জানতো!!!আমি লোকটা নিরীহ গোছের, নট ইন ফাইভ নট ইন সেভেন টাইপ, আমার চরিত্রে ভালো দিক বলতে যা কিছু আছে তার কোনোটাই আমি ঈশ্বরপ্রদত্ত মনে করি না, তারসবটাই আমি অর্জন করেছি খেটেখুটে। আর খারাপ দিক যা আছে তার মধ্যে কিছু সঙ্গদোষে আর উত্তরাধীকার সুত্রে পেয়েছি। এই যে আমি সিগারেট খাই, (যদিও এখন কমিয়ে দিয়েছি) এটা মারাত্মক ব্যপার নয়। কারন আমার বাবা কাকা জ্যাঠামশায় সবাইকে আমি সিগারেট খেতে দেখেছি চোখ ফোটার পর থেকে। তবে বাপ খেলে বেটা কেও খেতে হবে এমন উইলোচিত ব্যপার অবশ্যই নয়!! মুশকিল টা সিনেমা আর গপ্পের বই!! আমরা বাঙালী!!আমাদের ছবি বিশ্বাস আছে,কমল মিত্র আছে, পাহাড়ী স্যান্যাল,উত্তম কুমার আছে, আশ্চর্য!!প্রত্যেকের ঠোটে সিগারেট বা একখানা পাইপ নয়তো চুরুট!!!পরিচালক খাচ্ছে, বিপ্লবী খাচ্ছে, প্রেমিক খাচ্ছে, বেকার খাচ্ছে……সিনেমা হলের নীল আলোয় আমিও বাজে ছেলে হয়ে গেলাম একদিন। বন্ধু একটা সিগারেট এনে বলেছিলো “নে,জাস্ট একটা টান মার!” সেই টানে সুখ ছিলো না,তবে একটা কিছু ছিলো, টানই বটে!!!সে যাকগে!!ব্যপারটা যখন মায়ের রেটিনায় আর বাবার কর্ণপটহে ঢুকলো তখন আমার বুকে ফিদেল কাস্ত্রো চুরুট চুষছেন। কমিয়ে দিলেও ছাড়তে পারিনি। আমার এক জেঠু দিনে একসময় দু প্যাকেট সিগারেট খেতেন। উনিই বলেছিলেন যে সিগারেট আর স্মোকারের সম্পর্কটা অনেকটা প্রেমিক প্রেমিকার মতো। তো যাইহোক,আমি সিগারেট খাচ্ছিলাম আজ দুপুরে ধর্মতলার মেট্রোর সামনে। হঠাত একটা গলা শুনলাম “এইযে!!শুনছেন?” ফিরে তাকাতে দেখলাম একটা মেয়ে, বয়স হয়তো আমারই মতো,বেশ সুন্দরী, চোখে চশমা, আমাকে বলছেন “হ্যা,আপনাকেই বলছি, সিগারেট খাচ্ছেন কেন?” অবাক হলাম, আমি মাঝে মাঝে চুড়ান্ত ভদ্র হয়ে যেতে পারি, গলাটা মিহি করে বললাম “এতে কি আপনার অসুবিধে হচ্ছে কোনো?” ও ঝাঝিয়ে উঠলো “নো, আপনার অসুবিধে হওয়ার কথা, ডোন্ট ইউ কেয়ার অ্যাবাউট ইয়োর হেল্থ?”  এ কে রে মা ভৈরবী!!!হাসি পেলো!! বললুম “ভালো লাগছে দেখে,অন্তত আপনি তো আমার কেয়ার করছেন”। ” শাট আপ!!!সিগারেট টা ফেলুন” বিশ্বাস করুন আমি সিগারেট টা ফেলে দিলাম। ওর দিকে তাকিয়ে বললুম “কিছু মনে করবেন না, আপনার যদি কোনো কাজ না থাকে তো আসতে পারেন”। দেখুন একটা সত্যি কথা বলি, যারা একটু ভারী ভরভরন্ত সেটলড লোক,তারা সিগারেট খেলে কেউ কিছু বলেনা, আমরা যারা বাপে খ্যাদানো মায়ে তাড়ানো পোলাপান সিগারেট খাই তাদের এমন অনেক উটকো ফ্রী অ্যাডভাইস ফেস করতে হয় রাস্তাঘাটে। মেয়েটা হঠাত বললো ” আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই??ও আপনাকে খেতে না করে না??” এবার একটু চুপ থেকে বললাম “বলতো,তবে আপনার মতোই ক্লান্ত হয়ে গেছে বলতে বলতে, আপনি যেমন আপনার বয়ফ্রেন্ডকে শোধরাতে পারেননি”।  আন্দাজে ছোড়া ঢিল টা যে এমন মোক্ষম জায়গায় লাগবে ভাবিনি। মেয়েটা মুখ নীচু করে বললো ” আপনি কি করে জানলেন?আমার বয়ফ্রেন্ড আছে!!” এবার হাসলাম “সেই রাগটাই তো আমার ওপর ঝাড়ছেন তখন থেকে।” এবার যেটা হোলো তারজন্য প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটা আমার দিকে সোজা তাকিয়ে আগুনে একটা দৃষ্টি দিয়ে বললো “হ্যা,রাগ ঝাড়ছি। রাস্তায় কাউকে সিগারেট খেতে দেখলে আমার শরীর চিড়বিড় করে!!!আমার বাবার নিথর দেহটা মনে পড়ে, বেসিনে রক্ত পড়তো কাশির সাথে!!!লাস্ট স্টেজ থ্রোট ক্যানসার!! জানেন!!বাবা প্রতিবার কেমো দিয়ে আসার পর হাউহাউ করে কাঁদতো, আমার মনে পড়ে ওসব।  চেন স্মোকার ছিলো আমার বাবা।” আমি পাথর হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। মেয়েটা একটু থামলো, তারপর বললো “সিগারেট খেলে অন্তত কোনো ননস্মোকারের সামনে খাবেন না। জানেন তো!আমার মায়ের ওই একই রোগ ধরা পড়েছে,যদিও ফাস্ট স্টেজ!সারিয়ে তুলতে পারবো মাকে হয়তো! জাস্ট ফর প্যাসিভ স্মোকিং”! আমি শকড হয়ে গেছিলাম। ঠিক কি বলা উচিত বুঝতে পারছিলাম না, শুধু বললাম ” আপনার মা ঠিক হয়ে যাবেন। আপনাকে ভুলবো না”। মেয়েটা এবার ব্যঙ্গের হাসি হেসে বললো “বাঁচলে তবে না মনে রাখবেন!!” বিশ্বাস করুন, আমি বহুদিন পর থাপ্পর খেলাম আজ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।