• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক প্রকল্পশ্রীরিয়্যাল ধারাবাহিকে প্রকল্প ভট্টাচার্য (পর্ব – ৩ ।। দ্বিতীয় ভাগ)

নাম: পরিমলবাবুর পরিবারকথা

পর্ব ৩: জন্মদিনের উপহার   

(আগে যা ঘটেছেঃ আগামী সপ্তায় বাড়ির ছোট ছেলে প্রিয়মের জন্মদিন। সকলেই চিন্তিত তাকে এমন কী উপহার দেওয়া যায়, যা পেলে সে সবথেকে খুশী হবে।)
(রাতে, পরিমলবাবুর ঘরে)
পরমা- কিগো, সত্যি বলোতো, তখন থেকে এত চুপচাপ কেন? কিছু সমস্যা হয়েছে? নাকি এখনো সেই নাতির উপহার নিয়েই চিন্তা করে যাচ্ছ?
পরিমল- বুঝলে পরমা, আগেও দেখতাম যে লোকজন রিটায়ার করবার পর কিপ্টে হয়ে যায়। তখন কারণটা বুঝিনি। আসলে যখনই এই টাকাপয়সার যোগানটা সীমিত হয়ে যায়…
পরমা- হে ভগবান! তুমি এতদিন পর টাকাপয়সার চিন্তা আরম্ভ করলে!! কোনদিন তো তোমায় এমন চিন্তা করতে দেখিনি!
পরিমল- সেটাই তো বলছি! আগে কখনো তো এই চিন্তা আমাকে করতে হয়নি!
পরমা- ধুত! শুধু নাতির জন্মদিনে একটা উপহার কিনতে হবে বলে তুমি টাকার চিন্তা করতে বসলে! সত্যিই তুমি বুড়িয়ে যাচ্ছ।
পরিমল- শুধু নাতির জন্য উপহার বলে নয় গো! ভেবে দেখ, গতমাস আর এইমাস মিলিয়ে মোট সতেরোটা নেমন্তন্ন এসেছে আমাদের, তার মধ্যে এগারোটাই আবার বিয়েবাড়ি! কুটুম মানুষদের আবার সোনাদানা না দিলে মান থাকে না। তাহলে কত টাকা অতিরিক্ত খরচ হয় ভেবে দেখেছ!
পরমা- তো কী হয়েছে, বছরের এই কয়েকটা মাসই তো বিয়ের মরশুম থাকে! নাহয় অন্য সময় টাকা জমাবে!
পরিমল- আরে শুধু কি বিয়ে! অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, সাধভক্ষণ, গৃহপ্রবেশ।। এখন তো আবার এত্ত ঘটা করে জন্মদিন পালন হয়, অল্প কিছু উপহার দিয়ে সারা যায় না। ভাবছি আগামী কয়েকটা উৎসবে নিমন্ত্রণ করলেও যাবোনা। খালিহাতে যাওয়ার থেকে না যাওয়া ভালো।
পরমা- শোনো কথা! তা বলে অসামাজিক হয়ে ঘরে বসে থাকবে নাকি!
পরিমিল- এখন সামাজিকতার খরচ অনেক বেড়ে গেছে গো, আমি ভেবেচিন্তেই বলছি। সেবার সবাই বললে ক্রেডিট কার্ড করাতে। ভাগ্যিস করাইনি, তাহলে আবার এর ওপর ঘাড়ে চাপতো ঋণের বোঝা!
পরতমা- নাঃ, আজ তোমার মুড একেবারে বিগড়ে আছে বুঝতে পারছি। কাল একবার প্রেশারটা চেক করাতে হবে তোমার। এমন তো আগে ছিলেনা!
(বাইরে থেকে প্রসূন ডাকে) বাবা, মা, তোমরা কি শুয়ে পড়েছ?
পরমা- না রে, শোব কি! তোর বাবা কী সব বুড়োদের মত কথা বলে বোর করছে আমায়!
(প্রসূন, প্রীতি আর জুঁই ঢোকে)
প্রীতি- রিয়ালি!! বাবা, আর বুড়ো!! কান্ট বিলিভ ইট! বাবা, তোমার বয়স কতো হলো গো?
প্রসূন- কী বলছে বাবা, শুনি?
পরমা- ঐ টাকাপয়সার চিন্তা করছে, খরচ বেড়ে যাচ্ছে নাকি…
জুঁই- সত্যি বাবা, আপনাকে কি এইসব চিন্তা মানায়! আর আপনার ছেলে, মেয়ে, আমি, সবাই তো আছি!! আপনি কেন শুধুশুধু টাকাপয়সার চিন্তা করবেন!!
পরিমল- আরে তা নয়। সে তো তোমরা আছোই, জানি, কিন্তু বলছিলাম, আজকাল এই উপহারের হিড়িকে আর মাসে বাজেট ঠিক রাখা যাচ্ছে না। সকলেরই তো এই সমস্যা, তাই না? কেউ বলে, কেউ বলেনা।
প্রসূন- এটা কিন্তু বাবা একদম ঠিক বলেছ! আরে, আমাদের অফিসের খাড়ুস বস রিটায়ার করবে, তার গিফট কেনা হলো চাঁদা তুলে, আর বাজেট দিল এক হাজার টাকা করে! বোঝো! ওইসব হাড়জ্বালানে লোকের বিদায়ের জন্যও হাজার টাকা, গায়ে লাগে না!
জুঁই- তুমি থাম তো! হচ্ছে একটা সিরিয়াস আলোচনা! না বাবা, আপনি এরকম বললে তো চলবে না, কারণ আমরা সবাই এখন আপনার কাছে এসেছি সাজেশন চাইতে।
পরিমল- সাজেশন? কিসের!!
প্রীতি- হ্যাঁ বাবা, ভেবে দেখলাম ইউ আর দ্য রাইট পার্সন। প্রিয়ম ঘুমিয়ে পড়েছে, তাই এখনই ডিস্কাস করে ফেলা ভালো। বলো তো, প্রিয়মকে আমরা জন্মদিনে কী গিফট দেব, যা ওর সত্যিকারের পছন্দ হবে?
পরিমল- ওতো সেবার কী একটা ভিডিও গেম চেয়েছিল…
প্রসূন- আরে ওর ভিডিও গেম অনেক আছে, আর দিতে হবে না।
জুঁই- পুরো জঞ্জাল বাবা! দু’দিন খেলবে, তারপর ফেলে রাখবে। সব জমা হবে আলমারিতে, তারপর ডাস্টবিনে। ওসব দিয়ে লাভ নেই। অন্য কিছু বলুন।
পরিমল- অন্য কিছু… মানে, বই তো বাদ…
পরমা- আমি কিছু বলব?
প্রীতি- হ্যাঁ মা, নিশ্চয়ই বলবে! বলো।
পরমা- প্রসূন, প্রীতি, তোদের মনে আছে, তোরা ছোটবেলায় কী পেলে সবথেকে খুশী হতিস?
প্রসূন- আরে আমাদের ছোটবেলা তো একেবারে অন্যরকম ছিল। তার সঙ্গে এখনকার ছেলেদের…
প্রীতি- না দাদা। এক মিনিট। মনে হচ্ছে আমি ধরতে পেরেছি মা কী বলতে চাইছে। মা, আমি আর দাদা সবথেকে খুশী হতাম রবিবার তোমাকে আর বাবাকে একসঙ্গে বাড়িতে পেয়ে। আর কিচ্ছু চাইতাম না।
প্রসূন- ঠিক! আমার মনে আছে, বাবা সারা সপ্তাহই আমার ঘুম থেকে অঠার আগে অফিস চলে যেত, আর ফিরত আমি ঘুমিয়ে পড়বার পর। বাবাকে দেখতে পেতাম শুধু ঐ রবিবারেই।
প্রীতি- হ্যাঁ, আর সেইজন্যই আমরা দুজনেই অনেকদিন পর্যন্ত বলতাম সপ্তাহের সাতটা দিন হল সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, আর বাবা!!
(সকলের হাসি)
পরমা- প্রসূন হাসছিস বটে, কিন্তু ভেবে দেখেছিস, প্রিয়মও সারা সপ্তায় তোকে ঠিক ঐটুকুই পায়, কিম্বা আরো কম!
প্রসূন- কিন্তু মা…
জুঁই- কোনো কিন্তু নয়। মা একদম ঠিক বলেছেন। প্রিয়মকে তুমি একদম টাইম দাও না।
পরিমল- বাঃ, বেশ তো! তাহলে প্রিয়মকে এই জন্মদিনে পুরো দিন টাইম দে! এর থেকে ভালো গিফট আর কীই বা হতে পারে!
প্রীতি- ওয়াণ্ডারফুল! দাদা, জাস্ট ডু দ্যাট। ঐদিন ছুটি নে, সারাদিন ওর সঙ্গে কাটা।
জুঁই- আর মোবাইল ফোনটাও অফ রেখো। নয়তো শ্যামের বাঁশি বাজলেই তো রাধা যমুনায় ছুটবে!
প্রসূন- আচ্ছা, তাই হবে। তোমাদের কথামতো আমি সেদিন ছুটি নেব। তবে আমারও একটা ইচ্ছে আছে।
পরমা- কী ইচ্ছে, শুনি?
প্রসূন- সেদিন বাড়িতে নয়, আমরা বেড়াতে যাব। চিড়িয়াখানা, সায়েন্স সিটি বা বোটানিক্যাল গার্ডেন, চাইলে আরো দূর কিন্তু একদিনের ট্রিপ। কোথায় যাবো সেটা পরে ঠিক করব। ওকে?
পরিমল- তা বেশ তো, ছেলের সঙ্গে বেড়াতে যাবি ইচ্ছে হয়েছে, তাতে আমরা বাধা দেব কেন!
প্রিয়ম- বাবা, শুধু আমরা দু’জন নয়, আমার ইচ্ছে, তুমি, মা, জুঁই, প্রীতি, আমরা সব্বাই মিলে সেদিন বেড়াতে যাব সারাদিন!
প্রীতি- ইয়ে-য়ে-য়ে-য়ে-য়ে!! থ্রি চিয়ার্স ফর দাদা!!
জুঁই- হিপ হিপ হুরররে!!
পরমা- আরে, শোনো কথা! আবার আমাদের নিয়ে টানাটানি কেন করছিস, তুই প্রীতি জুঁই আর প্রিয়ম ঘুরে আয়, সেটাই ভালো হবে।
জুঁই- না মা, হবে না, আপনাদেরও যেতেই হবে!
প্রীতি- হ্যাঁ, দাদার কথাই ফাইনাল। ভোটে তোমরা হেরে গেছ! সবাইকেই যেতে হবে!
প্রসূক- আসলে, মা, এখন তো আমিও সবথেকে খুশী হই তোমার আর বাবার সঙ্গে একসাথে সারাদিন কাটাতে পারলে, তা ছেলের নাম করে নিজের ইচ্ছেটাই বা অপূর্ণ রাখি কেন!!
পরিমল- ব্যস, ছেলের কাছে জব্দ তো? এবার বল কী বলবে!
পরমা- আমি আর কী বলব, বলছিলে তো তুমি! কত্তো নাকি চিন্তাভাবনা! এই শোন প্রসূন, তোর বাবার প্রেশারটা কাল একবার…
পরিমল- আরে অসব প্রেশার-ফেশার কিস্যু না! আমার আর কোনো চিন্তা নেই! আরে, অন্যকে গিফট দিতে হলে পকেটে চাপ পড়ে ঠিকই, কিন্তু নিজে যখন নিজের পরিবারের কাছ থেকে কোনো উপলক্ষ ছাড়াই এইরকম অমূল্য গিফট পাই, তখন সেই আনন্দে সব চিন্তা ভুলে যাওয়া যায়! কী বলো?
সক্কলে- ঠিক, ঠিক!!

সমাপ্ত 

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।