• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৩)

ঢেপ্সির প্রেমকাহিনী

তৃতীয় ভাগ

বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম। কিন্তু Palanquin Bearers বা Freaksর analysis কিছুতেই মাথায় ঢুকছেনা। সামনে বাংলা আর ইংরেজি খাতা পাশাপাশি রেখে আমি জানলার দিকে উদাস চোখে চেয়ে আছি। হঠাৎ পিলে চমকানো আওয়াজে আমার মাথা ঘুরে গেল। ঘুরে তাকাতেই দেখি আমার আশঙ্কায় সত্যি। মা সামনে দাঁড়িয়ে। বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো ‘পড়াশোনা হচ্ছে!? কোনটা পড়ছিস, বাংলা না ইংরেজি?’ আমিও সটান মিথ্যা কথা বলে দিলাম ‘ইংরেজি পড়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে গেল স্যার বাংলা পরীক্ষা নেবে। তাই নোট টা একটু বের করলাম। সামনে পরীক্ষা তো কি কি পড়া এখনো বাকি আছে এই সবই ভাবছিলাম।’ মা চলে গেল। আমিও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
এবার আমি সিরিয়াসলি পড়তে শুরু করলাম। রাত্রে ডিনার করে এসে ঢেপ্সিকে ফোন করলাম। ফোন বেজে গেল সে ফোন ধরলো না। আধঘন্টা পর এগারোটার দিকে সে কলব্যাক করল। ফোন ধরেই বললাম ‘আর তর সইছে না ইয়ার।শুরু কর তোদের গল্প। আমার উত্তেজনা দেখে সে হাসতে হাসতে বলল ‘কি ব্যাপার বলতো? প্রেম করছি আমি আর উত্তেজনায় ভুগছিস তুই!?’ আমি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললাম ‘আরে ধুররর। এসব কিছুই না। এমনিই জানছি আর কি।’
তারপর ম্যাডাম বলতে শুরু করল তার প্রেম কাহিনী। অজয়ের সঙ্গেওতার বেশ স্মুথলি কথাবার্তা হয় রোজ। রাত দেড়টা দুটো পর্যন্ত ওদের মধ্যে এখন গল্পগুজব হয়। যদিও সম্পূর্ণটাই ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটিং এর মাধ্যমে। আমি বেশ বুঝতে পারছি ঢেপ্সি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। সে বলেই চলেছে অজয় তাকে কত ভালোবাসে, কত কেয়ার করে, কত খোঁজখবর নেয়। দুদিন আগে সে অজয়ের ফোন নাম্বার নিয়েছে। প্রতিদিন একবার করে ফোন‌ও করে কিন্তু তার পকেট মানির পরিমাণ কম হয় সে ফ্রি মিনিটস রিচার্জ করতে পারে না। বান্ধবীকে হাসিখুশি দেখে আমার বেশ ভালোলাগছিলো যতই হোক সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল। সেজন্য আমি বললাম ‘এই খুব ঘুম পাচ্ছে। চল, আজ রাখি। আবার পরে গল্প হবে। তুই কিন্তু আমাকে আপডেট দিতে থাকবি’ এই বলে ফোন কেটে দিলাম। পরের দিন সকালে টিউশন পড়তে গিয়ে দেখলাম ঢেপ্সি পড়তে আসেনি। বুঝতেই পারলাম ম্যাডাম সারারাত প্রেম করে খুব ক্লান্ত সেজন্য আর ঘুম ভাঙেনি। লেখার ফাঁকে ফিসফিস করে রিমাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘শোনো মন বলি তোমায়/ সব করো প্রেম করো না- গানটা শুনেছিস?’ রিমা আমার দিকে না তাকিয়েই বললো ‘প্রেমে পড়েছিস নাকি বে?’ আমি না বলার আগেই লক্ষ্য করলাম স্যার আমাদের দুজনের দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে আছে। আর উত্তর না দিয়ে লেখায় মনোনিবেশ করলাম।
টিউশন থেকে বাড়ি ফিরে পড়তে বসলাম। সেদিন দোল ছিল কলেজ যাওয়ার কোনো বালাই নেই। পড়তে পড়তে ঢেপ্সিকে ফোন করলাম। সে ফোন কেটে দিয়ে মেসেজ করলো বিকেলে মন্দিরে দেখা হবে।
সন্ধ্যায় ঢেপ্সি দেখলাম খুব সেজেগুজে মন্দিরে এসেছে মায়ের সঙ্গে। আমার কেমন যেন সন্দেহ হতে লাগলো ওকে দেখে। কিন্তু দুই বাড়ির লোকজনের সামনে কিছুই জিজ্ঞাসা করে উঠতে পারলাম না। আমার নজর কিন্তু ওর ওপর থেকে সরছে না। সে আমার পাশেই বসে ছিল হঠাৎ দেখলাম একটা ফোন এল আর টুক করে বেরিয়ে গেল। আমিও পিছু নিলাম। শেষমেশ মন্দিরের পেছনে গলির মধ্যে আলো-আঁধারিতে দেখলাম অজয় আবির মাখিয়ে তাকে বুকে টেনে নিল। এই দৃশ্য দেখে আমার চোখ ভিজে গেল। ওকে কেউ বোঝে না। ওর চিন্তা ভাবনাটা আর পাঁচজনের থেকে অনেক ম্যাচিউর বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু ও শুধুমাত্র মোটাসোটা বলে এতদিন অনেক ঠাট্টা, তামাশা, অপমান হজম করতে হয়েছে। আজকে কেউ তো ওর জীবনে এসেছে যে ওকে বুকে জড়িয়ে আগলে রাখবে সব সময়। ওরা দু’জন আমাকে দেখে ফেলার আগেই আমি মন্দিরে ফিরে এলাম। কাকীমা টেপ্সির খোঁজ করায় ম্যানেজ করার জন্য বললাম স্কুলের কতগুলো পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে তাই বাইরে দাঁড়িয়ে ওদের সঙ্গে গল্প করছে। এখনই ফিরবে তুমি চিন্তা করো না। সেদিন পুরো সন্ধ্যাটায় ঢেপ্সির মেজাজ ফুরফুরে ছিল। সাড়ে নয়টার দিকে ওরা বাড়ি ফিরে গেল। পরদিন ছিল রবিবার প্রতি রবিবার আমাদের বর্ধমানে মাঝিল্যা স্যারের কাছে টিউশন পড়া থাকে। আমি আর ঢেপ্সি সাড়ে ছটার বাসে বর্ধমান যাই। আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে কি গেলেও দেখলাম তার পাত্তা নেই। সেদিন প্রথমবারের জন্য ঢেপ্সিকে ছাড়াই আমি বর্ধমান গেলাম। স্যার পড়াতে শুরু করার প্রায় মিনিট কুড়ি পর হন্তদন্ত হয়ে প্রায় হুড়মুড়িয়ে ‘সরি স্যার লেট হয়ে গেল’ বলে ঢেপ্সি হাসতে হাসতে আমার পাশে এসে বসলো।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।