কবিতায় আকিব শিকদার

১। চাকরী সমাচার

চাকরী চাই। পিয়ন হবার জন্য পনেরো লাখ।
ঘুষে হোক, তবু সরকারি চাকরী। একবার জুটে গেলে
ফাঁকিতে ঝাপিতে জীবন পার।
আমি জানি, সরকারি চাকরী মানে একজন স্ত্রীর একটাই স্বামী।
মাস ফুরালে বেতন, সঙ্গম শেষে যেমন
আদর আদর আর আদর।
আমি জানি, বেসরকারি চাকরী মানে একজন বেশ্যার
অনেকগুলো নাগর; রাতভর বলাৎকারের পর গায়ে মুখে
ছুড়ে মারবে কয়টি টাকার নোট।
আমি জানি, আত্মকর্মসংস্থান মানে ধর্ণাঢ্য সমাজপতির
আদুরে কন্যা। যাকে বাটে ফেলতে লোকেরা তেল মেখে
দাড় করিয়ে রেখেছে গোপনাঙ্গ; নিস্ফল আশায়।
“কী করো তুমি? সফ্টওয়ার বিজনেস! ওহ… তুমি বুঝি
চাকরী পাওনি?”
“কী পেশা তোমার? ফ্রিলেন্স ওয়ার্ক! একটা চাকরী
জুটিয়ে নিলে ভালো হতো।”
“তুমি নাকি সিনেমা বানাও? তোমার নাকি
গরু মোটা-তাজাকরণ প্রজেক্ট? হাস-মুরগির খামার?
এসব ফেলে চাকরী খোঁজো বেটা। না হলে কেউ
মেয়ে দেবে না।” -এই আমাদের সমাজ।
বনরাজ সিংহের মুক্তজীবন নয়, এ জাতি পনেরো লাখের বিনিময়ে
সোনার শিকল কিনে পোষা কুকুরের মতো গলাতে ঝুলাবে
আর অনুগ্রহের আশায় মালিকের মুখে তাকাবে।
ধনী বাপের আদুরে কন্যা না হয়ে
পুরুষের একমাত্র বউ হওয়াতেই যেন সব আগ্রহ।
হায় রে হুজুগে মাতাল জাতি, হায় রে আরামপ্রিয় ফাঁকিবাজ।

২। প্রতীক্ষিতের ফরিয়াদ

করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এমন করে তুমি আসবে
ভাবিনি কখনো। তোমার কথা
খুব মনে পড়তো। পড়বে না…!
আমার পেটে যে তোমার সন্তান।
আমি তার মাঝে অনুভবে
তোমার স্পর্শ পাই। অনাগত, তবে অচিরেই
পৃথিবীর মুখ দেখবে।
তোমার খুব জানতে শখ ছিল, উদরগহীনে
শিশু কেমনে নড়েচড়ে ওঠে। সে কি হাত পা ছোড়ে
এদিক ওদিক, সে কি মাকে মা ডাকতে পারে, সে কি তোমাকে
বাবা বাবা ডাকে, কী কৌতূহল তোমার।
পেটের মাঝে কান পেতে রইলে আধাঘন্টা, কোন ফল
পেলে না। না মা ডাক, না বাবা ডাক, না কোন
কান্না-হাসি।
আমি শুধু হাসলাম তোমার পাগলামি দেখে
আর কুকড়ে গেলাম সুরসুরি পেয়ে। নাভীর উপর
চুলের ঘষা, সুরসুরি লাগবে না তো কী…!
তুমি কোনদিন
বাবা ডাক শুনতে পাবে না; কী দুর্ভাগা তুমি।
এমন করে তুমি আসবে ভাবিনি কখনো। সীমান্ত প্রহরীদের
ছুটি মেলে না সহজে, তাই
আমার মতো স্ত্রী-গণ
চিরপ্রতীক্ষার পাত্র। ছুটি নেই বলে
হানিমুনটাও করা হয়নি। তুমি বলতে পেনশন পেয়ে
তবে যাবে হানিমুনে, সাথে থাকবে নাতি নাতনিরা
কখনো সখনো ফোনে কথা হলে বলতে তুমি
ফোনটা যেন একবার
ঠেকাই পেটে, অগ্রীম বাবা ডাক
শোনা চাই তোমার; কী পাগলটাই না ছিলে তুমি।
করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এমন করে
তুমি আসবে ভাবিনি কখনো।
গাড়ি এসে
থেমেছিল রাস্তার শেষ সীমানায়, একটা কফিন
নেমে এল ক’জনের কাধে
ভর করে। বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো তোমার লাশ।
গুলিটা তোমার কোথায় লেগেছিল-
ফুসফুসে, কলিজায়, নাকি হৃদপিন্ডে?
নিশ্বাস যখন
বন্ধ হয়ে এল, অন্ধ হয়ে এল পৃৃথিবীর আলো
আমার কথা তোমার কি মনে পড়ছিল,
কিংবা আমার উদরপুষ্ট শিশুটির কথা? জলে ডোবা মানুষের
মুহূর্তে বিস্মৃতি স্মরণের মতো।
তোমার অনাগত সন্তান বাবা ডাকবে কাকে? কে শুনবে
তার বাবা বাবা ডাক? পিতৃছায়াহীন
বেঁচে থাকা কী যে বেদনার।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।