সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ১)

আরশি কথা

শেষ বিকেলে সেদিন ফাল্গুন মাসের বৃষ্টি নেমেছিল, ঘড়িতে তখন সাড়ে চারটে হবে. তুমুল বৃষ্টি কিন্তু আকাশে কনে দেখা আলো. বৃষ্টি আর আলোর সে এক অদ্ভুত যুগলবন্দী. গলাটা কেমন শুকনো লাগে ঝোরার. হাত বাড়িয়ে জলের বোতলটা নিতে গিয়ে মনে হয় কেউ এগিয়ে দিল বোতলটা. জোর করে চোখ খুলতে গিয়েও খুলতে পারে না সে. আবছা মত সাদা পাঞ্জাবি পড়া হাত জলের বোতলটা এগিয়ে দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে. চোখ টেনে খুলতে চেষ্টা করে ঝোরা, চোখের সামনে বিশাল এক কালো পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে. তাঁর মাথায় চক্রাকারে ঘিরে রয়েছে এক রামধনু বলয়. ‘বাবা’, ‘বাবা’ ঝোরা ডাকতে থাকে. সামনের কালো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে সেই ডাক. চোখ টেনে ঘুমের আঠা টেনে খুলে উঠে বসে ঝোরা. ঘরে তখন বৃষ্টি মাখা আলো তেরছা হয়ে এসে পড়েছে ঝোরার বিছানায়. একটা কোকিল প্রাণপণ গেয়ে চলেছে বসন্ত রাগিনী. সাদা পাঞ্জাবী মিলিয়ে গেছে কালো পাহাড়ে.
স্বপ্নটা ভেঙে গেলেও, স্বপ্নটা ছুঁতে পারছে ঝোরা. খুব কাছে আবার খুব গহীন থেকে উঠে আসা স্বপ্ন. বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জলের ছিটে দেয় সে. আয়নায় দেখে চোখেমুখে রামধনু রঙ লেগে আছে. রঙ থাকুক. এমন মায়াবী বিকেল, এমন রঙ মাধুরী, এমন একা থাকার সুযোগ সহজে আসে না. আয়নাতেও লেগে আছে রং. আয়না সংগ্রহ ঝোরার নেশা. কাঁচের পলাকাটা নকশা করা অদ্ভুত ধরনের আয়নার সংগ্রহ আছে ঝোরার. ঘরে এসে জানলা খুলে চুপ করে বসে ঝোরা. বাড়ীতে কেউ নেই আজ. তাই বুঝি এমন মহার্ঘ বিকেল ছোট্ট বেতের ঝুড়িতে করে সাটিন মুড়ে কোন জাদুকর জানলার পাশে রেখে গেছে. ছোট্ট ছোট্ট আয়নার সংগ্রহ বার করে ঝোরা. কোনটা গোল, কোনটা চৌকো, তিনকোনা, আটকোনা, সাতকোনা নানা রকম. আয়না সংগ্রহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে পুটলি বন্ধ করে ঝোরা. বাইরের আলো নিভে এল. ঘ্রাণ নেয় ঝোরা. বাতাবি লেবু ফুল, আমের মঞ্জরীর তীব্র গন্ধের মিশেল. এত রূপ, এত গন্ধের মিশেল সব ধরা পড়ে তাঁর পুটলি বন্দী আরশির গায়ে. একটা কালো পাহাড় দেখতে পায় ঝোরা, আজও দেখেছে স্বপ্নে. পাহাড়ের মাথায় ছিল রামধনু চক্র, ঠিক যেমন পুটুলির আরশির ভিতর দেখা যায়.

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।