• Uncategorized
  • 0

|| জরুরি অবস্থা মনে রেখে || লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

জরুরি অবস্থা মনে রেখে

১৯৭৫ সালে আজকের দিনে ইন্দিরা গান্ধি ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। জরুরি অবস্থা চলেছিল ২৫ জুন, ১৯৭৫ থেকে ২১ মার্চ, ১৯৭৭ অবধি। ভয়ংকর ভাবে ভারতীয় নাগরিকদের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে দমন করে ইন্দিরা জরুরি অবস্থার মাধ‍্যমে নিজের ক্ষমতা জাহির করেছিলেন। ভারতের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ ইন্দিরার অনৈতিক চাপের কাছে বশ‍্যতা স্বীকার করে জরুরি অবস্থা জারিতে শীলমোহর লাগান।
জরুরি অবস্থা জারি করিয়ে নির্লজ্জভাবে ইন্দিরা গান্ধি ভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করান। এঁদের মধ‍্যে ছিলেন, জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাজ নারায়ণ, মোরারজি দেশাই, চরণ সিং, বিজয় রাজে সিন্ধিয়া, অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানি, অরুণ জেটলি প্রমুখ। ইন্দিরার এই ন‍্যক্কারজনক কাজের প্রতিবাদ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা থেকে মোহন ধারিয়া ও চন্দ্রশেখর পদত্যাগ করলে তাঁদেরকেও আটক করা হয়েছিল।
১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইন্দিরার বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ নারায়ণ। তিনি ইন্দিরার হাতে পরাজিত হলে গণতান্ত্রিক নীতি নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে ইন্দিরা ক্ষমতা দখল করেছেন বলে তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। মামলায় রাজনারায়ণের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন বিখ্যাত সংবিধান বিশেষজ্ঞ শান্তিভূষণ। ইন্দিরার পক্ষে ছিলেন আরেক ধুরন্ধর সংবিধান বিশেষজ্ঞ ননী পালকিওয়ালা । বিচারপতি জগমোহন লাল সিনহার এজলাসে ইন্দিরা দুর্নীতিপূর্ণ কৌশলে ভোটে জিতেছেন, প্রমাণিত হয়। মামলার রায়ে দেখা যায় জনৈক পদস্থ সরকারি কর্মচারী যশপাল কাপুর সরকারি নিয়মবিধি লঙ্ঘন করে ইন্দিরার হয়ে ভোট প্রভাবিত করেছিলেন। প্রমাণ হয়ে যায় যে জেতার জন‍্য সরকারি নিরপেক্ষতার নীতিটি পদদলিত করতে ইন্দিরার লজ্জাবোধ হয় নি। বিচারপতি ১২ জুন, ১৯৭৫ তারিখে ইন্দিরার বিরুদ্ধে রায় দান করেন। মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে গেলে বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণ আয়ার হাইকোর্টের রায়কে বহাল রাখেন। তারিখটি ছিল ২৪ জুন, ১৯৭৫।
এর পরেই ক্রুদ্ধ ইন্দিরা পরদিন ২৫ জুন রাতে জরুরি অবস্থা জারি করলেন। এই ন‍্যক্কারজনক কাজে তাঁর শাগরেদ ছিলেন বাংলার জঘন্য মুখ‍্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। রেলমন্ত্রী ললিত নারায়ণ মিশ্রের খুনকে ছুতো করে ভারতীয় রাষ্ট্রপতির অফিসকে ব‍্যবহার করে, ইন্দিরা গান্ধি জরুরি অবস্থার নামে তাণ্ডব শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি তারিখে দানাপুর সমস্তিপুর ব্রডগেজ রেলপথের উদ্বোধন করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ললিত নারায়ণ মিশ্র বোমার আঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় পরদিন হাসপাতালে প্রয়াত হন। ইন্দিরা জানুয়ারিতে ঘটা ওই ঘটনার সূত্রে জুনের শেষদিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি মিশ্রের খুনকে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ব‍্যবহার করেছিলেন।
ইন্দিরার লক্ষ্য ছিল আজ্ঞাবহ ভারতীয় বিচার ব‍্যবস্থা। কাউকে কাউকে পকেটে পুরতে পারলেও অধিকাংশ বিচারপতিই কুচক্রী ইন্দিরার খপ্পরে পড়তে চান নি। মাথা উঁচু করে থেকেছেন।
এই জরুরি অবস্থা জারি ভারতীয় গণতান্ত্রিক মানুষের কাছে চিরধিক্কার যোগ‍্য রয়ে গিয়েছে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।