প্রবন্ধে রতন বসাক

রূপকথার গল্প মনকে আনন্দ দেয় ও খুশিতে রাখে

আমরা প্রত্যেকেই ছোটবেলায় মা ঠাকুমার কাছে কত রূপকথার গল্প শুনেছি । শুনতে শুনতে কখন যে নিজেই সেই রূপকথার দেশে পৌঁছে গিয়েছি ; তা কখনো বুঝতেই পারিনি সেই ছোটবেলায় । আবার কখনো শুনতে শুনতে কখন যে দু চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছি, তা বুঝতেই পারিনি তখন ।
সত্যি ছোটবেলার সেই সব রূপকথার গল্প কত জীবন্ত লাগতো ! তাদের কাছ থেকে রূপকথার গল্প শুনতে বেশ ভালো লাগতো ও আনন্দ পেতাম । আবার জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে সেই রূপকথার দেশে পৌঁছে গিয়ে নিজেকে পেতাম । সে এক ভারি মজার ব্যাপার ছিল । কি ভালোই না লাগত ! পড়াশোনা শেষ করে বিশেষ করে রাতের বেলায় মা ঠাকুমার পাশে বসে সেই রূপকথার গল্প শুনতে ।
রূপকথার গল্প শুনে মনটা বেশ হালকা ও খুশি থাকতো তখন । রোজ বায়না করতাম তাদের কাছে, একটা করে নতুন রূপকথার গল্প শোনাও । তখন একান্নবর্তী পরিবার ছিল । তাই আরো ভাই বোনদের সঙ্গে মিলেমিশে বসে একসাথে সেই গল্প শুনতাম । সত্যি এখন এই শেষ বয়সে এসে সেই সব দিনের কথাগুলো মনে পড়লে বেশ ভালো লাগে ।
তবে আজকালকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রূপকথার গল্প আর শুনতে পারে না । কেননা সেই একান্নবর্তী পরিবার আর দেখা যায় না সমাজে । ছোট পরিবার সুখী পরিবার । মা বাবা আর একটা কিংবা দুটো সন্তান, এই নিয়ে আজকের পরিবার । বাবা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকেন, মা অফিস করেন নয় তো ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকেন আর বাড়ির বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা আজকাল বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন । তাই রূপকথার গল্প শোনার মত সুযোগ, আজকের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হয় না ।
তবে কিছুদিন আগে পর্যন্তও রূপকথার গল্পের পত্রিকা পাওয়া যেত, যা পড়ে বাচ্চারা আনন্দ পেত । এরপর এল টেলিভিশন, তাতেও বাচ্চারা রূপকথার গল্প দেখতে পছন্দ করত । আর এখন মোবাইলের যুগ । এমনকি প্রত্যেকটা বাচ্চার হাতেই মোবাইল দেখা যায় আজকাল । তারা যে এই মোবাইলে কি দেখে তা, অনেক সময় বাবা-মায়েরাও জানতে পারেন না ।
একসাথে বসে রূপকথার গল্প শোনার মজাই আলাদা ছিল । এখন মানুষ একা হয়ে গেছে ; সবাই একা থাকতে চায় । ফলে স্বার্থবাদী, হিংসা ও জেদ প্রত্যেকটি বাচ্চার মধ্যে আজকাল দেখা যাচ্ছে । আর তারা একাকীত্বে ভুগছে । এর ফলে অনেক অবুঝ ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েরা আত্মহত্যাও করে ফেলছে । তাই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মনকে ভালো রাখার জন্যই, রূপকথার গল্প শোনানোর প্রয়োজন আছে আজও ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।