ক্যাফে কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ১৬

বিভূতি পুস্করিণী

আমার দাদু, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। লেখকের নামে নাম তাঁর, তবে তিনি লেখক নন। ছিলেন নিমতলা স্ট্রিটে কাঠের গোলার বড়বাবু। বৃষস্কন্ধ মানুষ বললে আমার আজও শুধুমাত্র দাদুর কথাই মনে পড়ে।
অনেক নাতি নাতনির সাথে তাঁকে ভাগ করে নিতে হত বলেই মানুষটির সাথে কাটানো স্মৃতি খুব সীমিত। মনে আছে শীতের দুপুরে দাদু ঘুমোচ্ছেন আর আমি তাঁর পেটের বসে আখ খাচ্ছি। জিজ্ঞেস করলাম, “দাদু, আখের ছিবড়ে কোথায় ফেলব?”
দাদু বললেন, “আমার বুকের উপরই ফেল।”
অবাক লাগে। তখন তাও বছর পাঁচেক বয়স হবে আমার। দিব্যি আমাকে শরীরের উপর নিয়ে মানুষটা ঘুমিয়ে পড়লেন। আর আমি তাঁর বুকের উপর জমা করে চললাম চিবোনো আখের ছিবড়ে।

দশ ছেলে-মেয়েকে বড় করে শেষজীবনে কী অস্তিত্ব সংকটে ভুগতেন তিনি! নাকি বুঝতে পেরেছিলেন, এই দালান কোটা, শস্যক্ষেত্র, বিস্তৃত বাগান, পুকুর ভরা মাছ – সব আসলে অনিত্য। অনুভব করেছিলেন এসবের কোথাও তিনি আর থাকবেন না! সামান্য বাতাসের টুসকিতে ঝরে যায় আমোঘ দাপট। নাহলে মারা যাবার বছরখানেক আগে কেন হঠাৎ পুকুরের ঘাট বাঁধালেন আর তার গায়ে মার্বেল ফলকে খোদাই করা হল- ‘বিভূতি পুষ্করিণী’?
দাদুর মৃত্যুর বছর খানেক পরে গিয়েছিলাম ফের। সাধের বাগান তখন বানরের পিঠে ভাগের মতোই অসংখ্য প্লটে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে। মাটি ফেলে বোজানো হয়েছে দীর্ঘ পুকুর। খটখটে উদ্ভিদবিহীন দীর্ঘ প্রান্তরের একদিকে জেগে থাকা ঘাটের বুক হতে অট্টহাসি হাসছে সেই মার্বেল ফলক – ‘বিভূতি পুষ্করিণী’।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।