Mon 27 October 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব - ৬২)

রেকারিং ডেসিমাল


নাতির ঘরে সখের পুতি দেখেই দিদা বললেন, অনেক হইসে, আর টানতে পারি না। 
ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত হয়। 
কেন?  কেন?  কি হল?  ডাক্তার ডাকি? 

হাত নেড়ে সবাইকে থামিয়ে দ্যান মানুষটি। 

আরে এত ব্যস্ত হবার কিসু নাই। যাও ত যে যার কাজে। 

দুপুরে নাতবউয়ের ঘরে এসে খাটে কাত হন দিদা। 
মোটা চশমার কাঁচের ফাঁকে সুগারের অত্যাচারে ঝাপসা হওয়া দৃষ্টি কত দূরে ভেসে যায়। 
কত কত গল্প, পুরোনো কথা ভেসে ভেসে বেরিয়ে আসে পুরোনো মানুষটির ভেতর থেকে। পাশে নাতবউ, তার কয়েক দিন বয়েসী ছানা, আরেক পাশে দু বছরের মেয়ে, এরা উপলক্ষ মাত্র যেন। কথারা অজান্তেই নিজেরা বেরিয়ে আসছে অনেক অনেক বছরের সময়ের ঢাকা সরিয়ে। 
বৃদ্ধ মানবী বলে চলেন। 
আঁতুড়ঘর হত বাচ্ছারা হলে। বড় জায়ের ভারি ছুচিবাই ছিল। সে ঘরে কেউ ঢুকলে চান করিয়ে তবে অন্য ঘরদোরে ঢুকতে দিতেন। তাও মেজ মেয়েটা এসে শুত সঙ্গে। মাকে না ধরে ঘুমাতে পারত না। 

চোখের কোনা বেয়ে জল পড়ে। নরম আঁচলের খুঁটে চোখ মোছেন মানুষটি। 
বাংলা করে পরা সাদা শাড়ি। চওড়া পাড়। 
ম্লান হাসেন। 
বুঝলা। সবই এই রকম। এই যে পোলা মাইয়া লইয়া অস্থির হইয়া আসো, এখন মা ছাড়া কিস্যু জানে না। 
হের পর দেখবা নিজে গো জীবন লইয়া এমন ব্যস্ত, বছর যাইবো দেখতেও পাইবা না। 
মেজ মাইয়াটা, তোমার মায়ের নামে নাম তার, এমন মা নেওটা আসিলো। জেঠিমা ওই ঠাণ্ডায় সকালে চান করাইয়া তবে ঘরে ঢুকাবে, তাও আমার সাথে শুইতো। 
এখন দেখো, কত বছর আসে নাই। 
অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া মানুষটির বুক ভেঙে দীর্ঘ শ্বাস পড়ে। 
নাতবউ ভাবে, আহা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে বোধহয় মেজ মেয়েকে। সত্যিই ত, মেজদি পিসিকে ত খুব একটা দেখিনি আমিও। বিয়ের পর একবারই দেখেছি। 
শুনেছি মস্ত বাড়ি ওনাদের, আর সে বাড়িতে ভুত আছে। কিন্তু যাওয়া ও হয়নি কখনো। 

আরও কত গল্প বলে চলেন দিদা। মৃদু গলায়, নিজের মনে গুনগুন করে। 

দেড় তলার ঘরে ভাড়াটে ছিল। এক বিধবা মা আর তার মেধাবী ছেলে। ভালো চাকরি পেল ছেলেটা। ভদ্রমহিলা কর্তাকে বলল আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিতে চায়। জানো ত তোমার দাদুর মেজাজ। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল তাদের। 
বলে, এত বড় সাহস, ভাড়াটে আমার মেয়েকে নাকি বিয়ে করবে? 

চলে গেল তারা। কত বড় অফিসার হইছে সে ছেলে পরে। ভাড়াটে ত কি দোষ ? মেয়েটা আমার ভালো থাকতো ত। 

দীর্ঘ শ্বাস পড়ে আবার। 
তারপর পাশের বাড়িতে আগুন লেগে গায়ে কে মরে গেছিলো সেই গল্প বলেন দিদা। 
চার নম্বর ছেলে, খেলোয়াড় তখন, পাঁচিল টপকে উদ্ধার করে এনেছিল পুড়ে যাওয়া মানুষটিকে। কিন্তু সে বাঁচেনি। 
বড় বেশি পুড়ে গেছিল। 
আর সেই পুড়ে যাওয়া মানুষটি ফিরে ফিরে আসছিলো ছেলের রাতের দুঃস্বপ্নে। 
অনেক পুজো আচ্চা করে ঠিক করা গেছিল তাকে। 
এমনই কত পুরোনো কথা সারা দুপুর ধরে বলে চলেন বুড়ো মানুষটি। 

বিকেলে বউয়ের মা এলেন দেখা করতে। তাঁর সঙ্গে এবাড়ির সবারই ভারি ভাব। আটটা নাগাদ মা বাড়ি ফিরবেন বলে উঠে পরলেন। দিদা হাওয়াই চটি পায়ে আস্তে-ধীরে এসে দাঁড়ালেন ঘরের সামনে। 

চললা নাকি?  
হ্যাঁ মাসিমা। আপনি আইলেন ক্যান। আমি ত যাব ও ঘরে। 

মা প্রণাম করতে নীচু হয়ে বলেন, ও মা পাটা ত খুব ফুলেছে, বলেছেন সবাইকে? 
এত সখের পুতি। তার অন্নপ্রাশনের আনন্দ ভালো করে করতে হবে তো? 
শুকনো হাসেন দিদা। 
নাহ, আর আমায় থাকতে কইও না। আমার সব সখ মিটাইছি। 
সবাই হাউমাউ করে এ সব শুনে। তারপর দাদুর সাথে দেখা  করে চলে যান অতিথি। 

রাতের খাওয়া সেরে উঠতে উঠতে নতুন মা শোনে শ্বাশুড়ি ডাক দিচ্ছেন। 
সবাই শিগগির এসো, মা কেমন করছেন। 

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register